ডাকটিকিটের ডাক

চলছে কর্মশালা
ছবি: আব্দুল ইলা

‘সে অনেক দিন আগের কথা। প্রাচীন মিসরের কথা বলছি। মানুষ তখন কাদার বিশাল খণ্ডে চিঠি লিখত। কাঁচা কাদায় আরকি। পরে সেটাকে শুকিয়ে শক্ত করে পাঠানো হতো প্রাপকের কাছে...’ ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়া হোসেন সাদির কাছে পদ্ধতিটা পছন্দ হলো। কিন্তু পরক্ষণেই ও ভাবল, এভাবে চিঠি লেখার চল থাকলে ডাকটিকিট জমানো যেত কীভাবে? আস্ত খণ্ডটিকে সংগ্রহে রাখা কি সম্ভব হতো? কিংবা এত ঝামেলা করে চিঠি লিখতই–বা কে? বক্তা ততক্ষণে একেক করে জানাচ্ছেন কীভাবে ডাক ব্যবস্থার বিবর্তন ঘটে আজকের ডাকটিকিট এসেছে। মারিয়া তাই বক্তব্যে মনোযোগ দিল। পদ্ধতিটা নিয়ে পরেও ভাবা যাবে।

কর্মশালায় অংশ নেয়া সবাই বেশ মনোযোগী শ্রোতা
ছবি: সাবিন ইয়াসমিন

মারিয়ার মতো মনোযোগী শ্রোতার ভূমিকা নিয়েছে একদল কিশোর-কিশোরী। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কিআর সভাকক্ষে তখন চলছে ডাকটিকিট নিয়ে কর্মশালা। ইতিহাস থেকে আলোচনা মোড় নিয়েছে ডাকটিকিট কত ধরনের হয়, কয়টি অংশ থাকে, যারা নতুন সংগ্রাহকের ভূমিকায় আছে, তারা কীভাবে সংগ্রহ করতে পারে—নানা প্রসঙ্গে। ১২ ডিসেম্বর ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই কর্মশালার আয়োজন করে কিশোর আলো। কর্মশালাটির তত্ত্বাবধানে ছিল ফিলাটেলিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির সহসভাপতি এ জেড এম আখলাকুর রহমানের আলোচনায় উঠে এসেছে ডাকটিকিটের আদ্যোপান্ত। ডাকটিকিটের যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে সংরক্ষণ করার উপায়, কী করা উচিত, কী করা অনুচিত, তা নিয়েও কথা বলেন তিনি।

এ ছাড়া ফিলাটেলিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হাসান খুরশীদ রুমি, কোষাধ্যক্ষ অরূপ রতন সাহার মতো চমৎকার সব মানুষ জানান নিজেদের সংগ্রাহক হয়ে ওঠার গল্প। যেভাবে তাঁরা ডাকটিকিট সংগ্রহের মধ্যে তৃপ্তি খুঁজে পেয়েছেন, বিভিন্ন প্রদর্শনীতে খ্যাতি অর্জন করেছেন, বলেছেন সেসবও। কর্মশালাটি শুরু হয়েছিল জে ডব্লিউ রবসনের ‘অ্যানি স্ট্যাম্প’ কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া ছিল দারুণ সব চমক। মি. বিনের ডাকটিকিটসংক্রান্ত একটি পর্বের অংশবিশেষ দেখানোর মাধ্যমে কর্মশালাটি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। সেই সঙ্গে ছিল বেশ কিছু ডাকটিকিট দেখার সুযোগ।

চলছে কর্মশালা
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ফিলাটেলিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি মুহম্মদ আকবর হুসাইন বলেন, ডাকটিকিট সংগ্রহের শখ মানুষকে শুধু তৃপ্ত করে না, জ্ঞানীও করে তোলে। ডাকটিকিটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষ ঘটনা, ব্যক্তি, স্থান, বিষয় নিয়ে খোঁজখবর করার মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয় জ্ঞানের পরিধি। তাঁর সঙ্গে একমত হয়ে কিআ সম্পাদক আনিসুল হক যোগ করেন, ‘শখ শুধু আমাদের জ্ঞানী করে না, সুন্দর করে। আসলে প্রয়োজনের বাইরের জিনিসই মানুষকে মানুষ করে তোলে।’

আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন ফিলাটেলিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি মুহম্মদ আকবর হুসাইন (বামে) ও কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক (ডানে)
ছবি: আব্দুল ইলা

বেশ কয়েক বছর ধরে ডাকটিকিট সংগ্রহ করছে, এমন কয়েকজনকে পাওয়া গেল কর্মশালায়। তাদেরই একজন তরিকুল ইসলাম বলল, ২০১৬ সাল থেকে সে একজন ‘ফিলাট্যেলিস্ট’। এখন অবধি ৬০টির বেশি দেশের প্রায় ৬০০ ডাকটিকিট তার সংগ্রহে আছে। বাকিংহ্যাম প্যালেস থেকে পেয়েছিল ‘রয়্যাল রিপ্লাই’। কর্মশালা নিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছে সে-ও, ‘আয়োজনটা সুন্দর। এমন কিছু ব্যাপার জেনেছি, যা আগে খেয়াল করা হয়নি।’

ততক্ষণে কর্মশালা সমাপ্তির ঘোষণা আসে। একেক করে বাড়ির পথ ধরে সবাই। টের পাওয়া যায় সবার চোখেই খেলা করছে আরও জানার আগ্রহ। অধিকাংশ শিক্ষার্থী জানাল, ডাকটিকিট সংগ্রাহক হিসেবে তাদের হাতেখড়ি হলো এই আয়োজনের মাধ্যমে। মারিয়া তাদেরই একজন। ‘আমি আজ থেকে আর আগের মতো বেশি বেশি মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছি না। বন্ধুদের চিঠি লিখব, ডাকটিকিট জমাব,’ নিজের সংকল্পের কথা জানাল সে।

কর্মশালায় অংশ নেয়া সবাই বেশ মনোযোগী শ্রোতা
ছবি: আব্দুল ইলা

মারিয়া-তরিকুলের মতো পরবর্তী কর্মশালায় অংশ নিতে পারো তুমিও। ফিলাটেলিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ জানিয়েছে, তাঁরা এ রকম আয়োজন নিয়ে আরও পরিকল্পনা করছেন। খুদে সংগ্রাহকদের নিয়ে প্রদর্শনীর কথাও ভেবেছেন তাঁরা। তাই চোখ রাখো কিশোর আলোর ফেসবুক পেজওয়েবসাইটে

কর্মশালা শেষে হয় ফটোসেশন
ছবি: আব্দুল ইলা

কর্মশালার আরও ছবিভিডিও দেখো কিশোর আলো ফেসবুক পেজে