অদ্ভুত অনুভূতি

ছোটবেলা থেকেই আমার পশুপাখির প্রতি বেশ আগ্রহ। সবচেয়ে পছন্দের ছিল কুকুর। অনেকবারই চেষ্টা করেছি তুলতুলে দেখে একটা কুকুর পুষতে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটা সফল হয়নি।

ক্লাস সেভেনের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আবার মাথায় কুকুর পোষার ভূত চাপল। অনেক কষ্টে রাজি করালাম আম্মু-আব্বুকে। মহা কাহিনি করে কুকুরছানাও জোগাড় করলাম একটা। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘মেকুকাহিনি’ গল্প থেকে তার নাম দিয়েছিলাম মেকু। সারা দুপুর-বিকেল থাকলাম মেকুকে নিয়ে। অনেক সেলফিও তুললাম। সন্ধ্যা গড়িয়ে এল। এবার মেকুকে ঘরে ঢোকানোর পালা। ওকে ঘরে ঢুকিয়ে আমরাও বাসায় গেলাম। বাচ্চা কুকুর যে রাতের বেলা গলা ফাটিয়ে কাঁদে, এটা আমাদের আগে থেকেই জানা ছিল। তা সত্ত্বেও ভাবলাম, প্রথম কয়েক দিন এ রকম করবে, পরে ঠিক হয়ে যাবে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত আসতে না-আসতেই বিকট চিত্কার করতে থাকল মেকু। চিত্কার আর থামেই না! যা হয় হোক। আমরা কেয়ার করলাম না। কিছুক্ষণ পর শুনি চিত্কার দ্বিগুণ হচ্ছে। কারণ জানার জন্য নিচে গেলাম আমি আর আব্বু। গিয়ে দেখি...মেকুর মা হাজির! ওহ গড! এখন কী হবে? যদি কামড় দেয়! তার পরে সাহস করে এগিয়ে গিয়ে আব্বু কুকুরটার গলার বাঁধন খুলে ওকে ওর মায়ের কাছে দিয়ে দিল। মা-কুকুর কী আদর করল মেকুকে! তবে ওকে ছেড়ে দেওয়ায় আমার খুবই রাগ হচ্ছিল।

আবার রাগের সঙ্গে ছিল অন্য একধরনের অনুভূতি। বুঝতে পারলাম না কী সেই অনুভূতি—তারপর ঘুমাতে গেলাম আম্মুর পাশে। তখন বুঝলাম অনুভূতিটার নাম হলো শান্তি। মায়ের কাছে থাকার শান্তি। আম্মুর কাছে সত্যিই অনেক শান্তি শান্তি লাগছিল। কে জানে, হয়তো আমার মতো মেকুও এ রকমই শান্তি অনুভব করছিল ওর মায়ের কাছে গিয়ে। সব রাগ উঠে গেল। বুঝলাম, ভুলটা আমারই। ওকে ওর মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে আনা উচিত হয়নি। আসলেই মায়ের কোলই পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তির জায়গা। পানির অপর নাম যেমন জীবন, তেমনই মায়ের অপর নাম শান্তি।