অন্য চোখে লকডাউন

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

আমি যদি বলি লকডাউন আমাকে বিষণ্নতার হাত থেকে বাঁচিয়েছে, অনেকেই হয়তো অবাক হবে। তবে পৃথিবীকে আমি অন্য রকমভাবে দেখি। সেটাও অস্বাভাবিক লাগে অনেকের কাছে। আজকে আমি আমার অন্য রকমভাবে উপলব্ধিগুলো সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।

২০১৯-২০ সালের দিকে স্কুলের দিনগুলো আমার কাছে বোঝা হয়ে উঠেছিল। ক্রমবর্ধমান অন্তর্মুখিতার কারণে স্কুলে যাওয়া মানে আমার কাছে ছিল একাকিত্ব এবং বিষণ্নতার অন্য নাম। বিশেষ করে যখন অন্যদের দেখতাম বান্ধবীদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে, গল্প করছে, তখন আমার একাকিত্ব আরও বেড়ে যেত কয়েক গুণ। আমার অবচেতন মনে একটা প্রবল প্রার্থনা ছিল, স্কুল থেকে মুক্তি পাওয়া। সেটা যে এভাবে পূরণ হবে, তা অবশ্য স্বপ্নেও ভাবিনি।

লকডাউনের কারণে আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছি। নিজের জন্য অনেক বেশি সময় বের করেছি, নিজেকে সময় দিয়েছি অনেক। শিখেছি নিজেকে ভালোবাসতে। ‘নিজেকে ভালোবাসা’ ধারণাটার সঙ্গে আমি আগেও পরিচিত ছিলাম, তবে সেটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝেছি এই লকডাউনে। এটা একাকিত্ব এবং বিষণ্নতা থেকে মুক্তি পেতেও অনেকটা সাহায্য করেছে আমাকে। এখন জীবন সম্পর্কে আমার ধারণা আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। আমি এখন নিজের জীবনকে আগের চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসি। আমার দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বেশি ইতিবাচক। লকডাউনের দ্বিতীয় উপকারিতা হলো পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। আমার স্কুল, বাবা–মায়ের ব্যস্ত রুটিন—সব মিলিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটানো সময় কমে গিয়েছিল অস্বাভাবিক হারে। লকডাউনে যেটা অন্তত একটা পরিমিত হারে উঠে এসেছে। যেটা আমাদের সম্পর্ককেও উন্নত করেছে।

এই সময়ে আমি অনেক বেশি চিন্তা করা, সৃজনশীল কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এ বছর বেশ কিছু ছোটগল্প ও রচনা লিখেছি আমি। এঁকেছি ছবি। এসবই আমার নিজের জন্য।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, অন্তর্মুখী ব্যক্তিমাত্রই লকডাউনে একটা অন্য রকম শান্তি লাভ করেছে। নিজের প্রিয় ঘর, প্রিয় জিনিসগুলোর সংস্পর্শে থাকার মধ্যেও অন্য রকম একটা আনন্দ আছে। যেটা আমি এখন অনুভব করছি।

চাইলে তোমরাও এমনটা করতে পারো। খুব বেশি কিছু করতে না পারলেও নিজের জন্য ছোট ছোট কাজ করো। নিজেকে সময় দাও, নিজের জন্য একটু হাসো। প্রকৃতির কাছে যাও। যেহেতু লকডাউনের ব্যাপারটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তাই আমাদের উচিত সময়টাকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে কাজে লাগানো। কারণ, এটা একটা ঐতিহাসিক সময়। এমন সময় আর জীবনে আসবে না। আমরা যা পেয়েছি, তা হয়তো আর কোনো প্রজন্মই পাবে না কোনো দিন।

লেখক: দশম শ্রেণি, সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজশাহী