আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশি দুই শিশুর আঁকা ও তোলা ছবি

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন ‘কপ-২৬’-এ বাংলাদেশের দুই শিশুর আঁকা ও তোলা ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ ও কিশোর আলোর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘আর্টিভিজম: আমার চোখে জলবায়ু পরিবর্তন’ প্রতিযোগিতার দুইজন বিজয়ী তারা।

‘আর্টিভিজম: আমার চোখে জলবায়ু পরিবর্তন’ প্রতিযোগিতায় সারাদেশ থেকে পাঁচ শতাধিক শিশু অংশ নেয়। এত আঁকা ও ছবি থেকে চিত্রাঙ্কন ‘ক’ বিভাগে সেরার পুরস্কার জিতে নেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোস্তফা নুরুল আবসার ও আলোকচিত্র ‘খ’ বিভাগে বিজয়ী হয় ঢাকার উষসী মোমেন। প্রতিযোগিতায় তাদের দু’জনের আঁকা ও তোলা ছবি দু’টি প্রদর্শিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্মেলনেটিতে।

ঢাকায় থেকে অনেক কিছুই আমরা দেখতে পাই না। ছুটিতে গ্রামে গিয়ে টের পাই জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জন্য কত বড় হুমকি। গ্রামের খরায় সেখানকার মানুষের কষ্ট আমায় ভাবিয়েছে। সারা পৃথিবীজুড়ে এই সংকট নিশ্চয়ই আরও ব্যাপক। আমার তোলা ছবির মাধ্যমে আমি বলতে চেয়েছি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের কীভাবে জীবনযাপন করতে হবে এবং এই পরিবর্তন আমাদের জন্য কতটা হুমকিস্বরূপ।
উষসী মোমেন, আঞ্চলিক বিজয়ী (আলোকচিত্র)

পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ভয়ানক ভবিষ্যতের দিকে। এমন ভাবনা মাথায় রেখে শিশুরা আঁকা ও আলোকচিত্র পাঠিয়েছিল ‘আর্টিভিজম: আমার চোখে জলবায়ু পরিবর্তন’ প্রতিযোগিতায়। ‘আমি ও আমার পরিবার যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছি’ এবং ‘প্রকৃতির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’—এ দুই শিরোনামে ছবি ও আলোকচিত্র পাঠায় অংশগ্রহণকারীরা। প্রাথমিকভাবে ৪০ জন এবং পরে আরও বাছাইয়ের পর জাতীয় পর্যায়ে এই প্রতিযোগিতায় চার শিশুর শিল্পকর্ম বিজয়ী হয়। এই চূড়ান্ত চারটি শিল্পকর্ম এশিয়ার অন্যান্য দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য আঞ্চলিক পর্যায়ে পাঠানো হয় এবং অবশেষে দুটি শিল্পকর্ম ‘কপ-২৬’ এ প্রদর্শনের জন্য নির্বাচিত হয়।

বাংলাদেশ, চীন, জাপান, কোরিয়া, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং ভিয়েতনাম থেকে শিশুরা তাদের চিন্তা প্রকাশ করে চিত্রাঙ্কন আলোকচিত্র, কবিতা, গান ইত্যাদির মাধ্যমে। প্রতিটি দেশেই জাতীয় পর্যায়ে দুইটি বয়স ভিত্তিক ক্যাটাগরিতে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয় চারজনের আঁকা ও তোলা ছবি। সেগুলো ১ নভেম্বর থেকে প্রদর্শিত হচ্ছে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে আয়োজিত ২৬তম ইউএন ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স অফ পার্টিস (COP26)-এ।

গ্লাসগোতে প্রদর্শিত মোস্তফা নুরুল আবসারের এই চিত্রকর্মটির নাম ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের জীবন’

গ্লাসগোতে প্রদর্শিত মোস্তফা নুরুল আবসারের চিত্রকর্মটির নাম ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের জীবন’। ১১ বছর বয়সী মোস্তফা নুরুল আবসার কিশোর আলোকে জানায়, ‘প্রদর্শনীর ব্যাপারটা শুনে আমি বেশ আনন্দিত। মানুষের মতো প্রাণীরাও জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার। আমার আঁকা ছবির মতো সুন্দরবনের বাঘ ও অন্যসব প্রাণীরাও নিশ্চয়ই এই পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ তাদের জন্যও বেশ জরুরি।’

‘কপ-২৬’ সম্মেলনে প্রদর্শিত ছবিটি নিয়ে কিশোর আলোকে নিজের ভাবনার কথা জানায় উষসী মোমেন, ‘ঢাকায় থেকে অনেক কিছুই আমরা দেখতে পাই না। ছুটিতে গ্রামে গিয়ে টের পাই জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জন্য কত বড় হুমকি। গ্রামের খরায় সেখানকার মানুষের কষ্ট আমায় ভাবিয়েছে। সারা পৃথিবীজুড়ে এই সংকট নিশ্চয়ই আরও ব্যাপক। আমার তোলা ছবির মাধ্যমে আমি বলতে চেয়েছি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের কীভাবে জীবনযাপন করতে হবে এবং এই পরিবর্তন আমাদের জন্য কতটা হুমকিস্বরূপ।’

‘কপ-২৬’ সম্মেলনে প্রদর্শিত হচ্ছে উষসী মোমেনের তোলা এই ছবিটি।

সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোয়ালিটি ডিরেক্টর রিফাত বিন সাত্তার বলেন, ‘আমি আমাদের শিশুদের নিয়ে খুব আনন্দিত এবং আশাবাদী যে তারা জলবায়ুর জরুরি অবস্থা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। তারা তাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে সংকটটিকে খুব ভালোভাবে তুলে ধরেছে যাতে বিশ্বনেতারা অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আবশ্যকতা বুঝতে পারেন। আমাদের অবশ্যই তাদের বার্তাগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে যা তারা শিল্পকর্মের মাধ্যমে দিয়েছে।‘

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে শিশুদের ভাবনাগুলো আঁকা ও তোলা ছবির মাধ্যমে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্মেলনটিতে। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ও শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের এবার ভাববার পালা।