আমার উকুলেলে এবং আমি

তিন মাস আগের কথা। ছোট্ট একটা বাদ্যযন্ত্র উপহার পেল আপি (আমার বড় বোন)। এ বছর এয়ারফোর্সে কমিশন পাওয়ার জন্য অনেক কিছুই উপহার পেয়েছে সে। তার মধ্যে আমার নজর কাড়ল ওই ছোট্ট বাদ্যযন্ত্র। পরে জানলাম, ওটার নাম ‘উকুলেলে’। বেশ ছোট ও কিউট জিনিসটা। কয়েক বছর আগে দু-তিন দিনের জন্য গিটার শিখেছিলাম। আগের টিচারের শিখিয়ে দেওয়া কিছু ফিঙ্গার এক্সারসাইজ অনুশীলন করতে লাগলাম। ইউটিউব হয়ে গেল আমার উকুলেলে টিচার। বিভিন্নজনের টিউটোরিয়াল দেখে গান তোলার চেষ্টা করলাম। শুরুর কয়েক দিনেই যে আমি গান তুলতে পারব না, তা আমার জানা ছিল। তাই কিছু সুর তোলার চেষ্টা করলাম। যেমন ‘হ্যাপি বার্থডে’ গানের সুর, ফেলুদার থিম ইত্যাদি। মনের তৃপ্তির জন্য দু–একটা গানও তোলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই পারলাম না। প্রথম প্রথম আঙুলে ও নখে খুব ব্যথা করত। হ্যান্ড স্ট্রামিং শেখার সময় আঙুলে ফোসকাও উঠেছে। সবারই এ রকম হয়। তা–ও আমি বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমার বন্ধু তাহসিনও গিটার বাজায়। এ সময় ওর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি। এরই মধ্যে শুরু হলো অদ্ভুত সমস্যা। হাতের সব চামড়া উঠে যেতে লাগল। তারপরও অনুশীলন করতে লাগলাম (যদিও আমি পরামর্শ দিই এ রকম পরিস্থিতিতে অনুশীলন না করার)। এ পরিস্থিতিতেও তাহসিনের সাহায্য নিয়েছি। শিখে ফেললাম দাদরা তাল ও ঝুমুর তালের স্ট্রামিং প্যাটার্নগুলো। ইউটিউব ও ‘Guitar Tunar’ অ্যাপ দেখে শিখে ফেললাম কর্ডস। সবশেষে ভাবলাম, এবার বুঝি গান তোলাই যায়। কিন্তু আমার কর্ড প্রোগ্রেশন ও কর্ড বদলানোতে অনেক অসুবিধা হচ্ছিল। কর্ড প্রোগ্রেশন ছাড়া গান তোলা প্রায় অসম্ভব। দীর্ঘ এক মাস লেগে গেল কর্ড প্রোগ্রেশন শিখতে। এ সময় আঙুলে ব্যথা না করলেও সঠিক তারে আঙুল বসাতে প্রচণ্ড ঝামেলা হচ্ছিল। এভাবেই সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে দীর্ঘ আড়াই মাস পর আমি উকুলেলেতে তুললাম আমার প্রথম গান ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’। অনেক ভালো লাগছিল। আমি পেরেছি শেষ পর্যন্ত উকুলেলেতে গান তুলতে। সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও করে ফেললাম। গান শুনে মনে হলো, ‘আসলেই তো গলার সঙ্গে সুর মিলছে।’ ভিডিও করার পরই মা-বাবাকে দেখালাম। অনেক খুশি হলেন তারা। নিজের ভিডিও নিজেই চার-পাঁচবার দেখলাম। নিজের ভেতরেই এক অদ্ভুত আনন্দ অনুভূত হচ্ছিল।

এখন আমার উকুলেলে শেখার পাঁচ মাস হয়ে গেল। এখনো পুরোপুরি উকুলেলে না বাজাতে পারলেও বেশ কয়েকটা গান তুলতে পারি। প্রথম সেই গানের ভিডিও দেখে এখন আমার অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি চলে আসে ভালো লাগে আমার এই পুরো জার্নির কথা মনে করলে। আমার মতো অলস একজন যে উকুলেলে শিখতে গিয়ে হাল ছেড়ে দেয়নি, এটা ভেবেই আমার ভালো লাগে। আমার বর্তমান গানের ভিডিওগুলো কয়েক বছর পর দেখলে হয়তো মনের মধ্যে তৃপ্তি অনুভূত হবে। হয়তো চোখের সামনে আমার পুরো যাত্রা ফুটে উঠবে। আবার হয়তো উকুলেলে নিয়ে বসে পড়ব, ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গাইতে।

লেখক: অষ্টম শ্রেণি, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা