আমি বিশ্বাস করি...

আমি ভূত বিশ্বাস করি।
আমি ঈশ্বর বিশ্বাস করি।
আমি বাতাস বিশ্বাস করি।
আর ঠিক সে কারণেই, আমি ভালোবাসা বিশ্বাস করি।

তাদের চোখে দেখা যায় না। অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। সবাই পায় না। কেউ কেউ পায়। যারা পায়, তাদেরই কেউ পরম ভাগ্যবান, কেউ চরম দুর্ভাগা।

আমি ভূত বিশ্বাস করি।
যখন মধ্যরাতে ছাদে পা টেনে টেনে হাঁটার শব্দ হয়, দুম করে খুলে যায় জানালা, আধো তন্দ্রায় টের পাই মুখের ওপর গরম নিশ্বাস...ঠিক তখনই ভূত বলে—আমি আছি।

আমি ঈশ্বর বিশ্বাস করি।
যখন সেই ভূতের ভয়ে তন্দ্রা কেটে যায়, মেরুদণ্ডে ঠান্ডা স্রোত, মনে হয় পায়ের নিচে মাটি নেই, অপার্থিব আতঙ্কে শূন্য হয়ে যায় বুক, শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁটের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসে—ঈশ্বর। রক্ষা করো...ঠিক তখনই ঈশ্বর বলেন, আমি আছি।

আমি বাতাস বিশ্বাস করি।
যখন ঘুম ভেঙে ভয় কেটে যায় এক নিমেষে, নিজের বোকামি দেখে নিজেই হেসে উঠি হো হো করে, খুলে যাওয়া জানালা দিয়ে ঘরে ঢোকে তাজা হাওয়া, বুক ভরে লম্বা একটা দম টেনে নিই...ঠিক তখনই বাতাস বলে—আমি আছি।

এর থেকে খুব ভিন্ন নয় ভালোবাসা। যাঁরা বলেন, ‘অন্তর বলে কিছু নেই, পুরোটাই মগজ।’ তাঁরা তাই ভেবে সুখে থাক। আমি তো জানি—

রোদ পড়া বিকেলে কফির মগে চুমুক দিতে গিয়ে হঠাৎ থমকে যাওয়া...

‘মাসুদ রানার’ টানটান উত্তেজনাকর অবস্থায় হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলা...

জরুরি ক্লাস লেকচারের ফলো করতে করতেই হঠাৎ আনমনা হয়ে যাওয়া...

বাসে মানুষের উপচে পড়া ঘামের গন্ধ নাক ফসকে বেরিয়ে গিয়ে কোঁচকানো মুখ সোজা করে নিজের অজান্তেই কিছু ভেবে ঠোঁটের কোণে একটা বাঁকা হাসি ফুটে ওঠা...

এখানে কোথাও নেই স্রেফ কারসাজি বা সেই আদি ও অকৃত্রিম মানুষের জৈবিক ব্যাপার। আছে একটা ‘ভুতুড়ে’ কিংবা সোজাসাপ্টা ‘হাওয়া’ অনুভূতি। যেখানে প্রয়োজন শুধুই অপর একজন মানুষের অস্তিত্ব। হতে পারে সে পাশে বসে থাকা কেউ কিংবা সহস্র মাইল দূরে কিংবা পুরোটাই কাল্পনিক কেউ, ব্যস। এর চেয়ে কম হলে খুব ক্ষতি নেই। বেশি হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।