আরমানের বক্স-কাণ্ড

অলংকরণ: শিখা

আরমান ওর টিফিন বক্স খুলল।

খুলেই অবাক।

ভেতরে কিছু নেই।

নাহ্! আম্মু এমন করবেন কেন?

আরমান বক্সের ঢাকনা লাগাল। আবার খুলল।

বারবার খুললেও যে বক্সে কিছু আসবে না, সেটা আরমান ভালো করেই জানে।

তবু ও বারবার বন্ধ করে আবার খুলতে লাগল।

আশপাশের ছেলেমেয়েরা খাওয়া বন্ধ করে ওর বক্স খোলা-বন্ধ করা দেখতে লাগল।

কেউ একজন ফিক করে হেসে দিল। আড়চোখে দেখল আরমান, তবু ওর কাজ থামল না।

হাসিটা সাদিকের। আরমান খুব ভালো করেই চেনে ওকে।

আরমান বুঝল এতে আম্মুর কোনো দোষ নেই।

বক্স খোলা-বন্ধ করা ওর কাছে এখন প্রায় ধ্যানের পর্যায়ে চলে গেছে। মাঝেমধ্যে মুখ দিয়ে শব্দ করছে কেমন যেন।

সবাই হতবাক।

কেউ খাচ্ছে না।

দেখছে আরমানকে।

একসময় আরমান বক্সের ঢাকনা বন্ধ করে থামল।

আর খুলল না।

সবাই কেমন অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকাল আরমানের দিকে।

আরমান ওর বক্সের দিকে তাকিয়েই রইল একদৃষ্টিতে।

একসময় ঘাড় ঘুরিয়ে তীব্র দৃষ্টিতে তাকাল সাদিকের দিকে।

ভড়কে গেল সাদিক।

এতটাই ভয় পেল যে ওর হাতের বিশাল বার্গারটা পড়ে গেল হাত থেকে।

চোখ নিচে নামিয়ে নিল সাদিক। আরমানের দিকে তাকাতে সাহস হচ্ছে না ওর।

আরমানের চোখ থেকে যেন আগুন ঝরছে।

সাদিক আর থাকতে পারল না। দিল এক দৌড়। এক দৌড়েই ঘরের বাইরে।

আরমান হাসল এবার। হাত রাখল ওর বক্সটাতে। খুব সাবধানে খুলল। তারপর ভেতরে থাকা কাটলেটটি হাতে নিয়ে খেতে শুরু করল।

সবাই অবাক।

সবাই যেন আঁতকে উঠল।

ক্লাসে কেমন একটা শোরগোল শোনা গেল।

ওর চেয়ে একটু দূরে বসে থাকা সেঁজুতি তো ওর কাছে উঠেই এল।

‘এটা কীভাবে হলো?’

‘কী?’

‘খালি বক্সে কাটলেট এল কীভাবে?’

‘ও...!’

‘বল না!’

‘তুই তো জানিস, আমার ছোট মামা ম্যাজিশিয়ান।’

‘হ্যাঁ।’

‘মামা যাওয়ার সময় আমাকে এই বক্সটা দিয়ে গিয়েছিলেন...আর কিছুই না...।’

আরমান কিছু বলল না। মনে মনে ওর মামাকে ধন্যবাদ দিল শুধু...