কালো ছেলে

অলংকরণ: তুলি

আমি যে ভূতের অভিজ্ঞতার কথা বলতে যাচ্ছি, সেটা আমি দেশের প্রায় সব শিশু-কিশোর পত্রিকায় একবার না একবার লিখেছি বলেই আমার ধারণা। তবে কিশোর আলোতে লেখা হয়নি। অবশ্য এটা এমনই ভূতের গল্প আর জোকস, যা বারবার শোনা যায়। কাজেই সেই বিচারে এই গল্পটা আবার শোনানো যেতে পারে। হয়তো কিশোর আলোর পাঠকেরা শোনেনি।

ভূত আমি বড়বেলায়ও একবার দেখেছি কিন্তু কিশোর আলো যেহেতু ছোটদের পত্রিকা, তাই বরং ছোটবেলার অভিজ্ঞতাটাই শেয়ার করি (অবশ্য এমন কোনো জটিল ভূত না)।

তখন আমরা চট্টগ্রামে থাকতাম। জায়গাটার নাম দামপাড়া। পাহাড়ের পাশে একটা নতুন তিনতলা বাড়ি। তার তিনতলায় আমরা থাকতাম। আমার বয়স তখন কত হবে, একেবারেই ছোট, স্কুলেও ভর্তি হইনি। আমরা যে তিনতলা বাসাটায় থাকতাম, সেই বাসাটা নাকি একটা পুরোনো কবরস্থানের ওপর তৈরি হয়েছিল। এই কারণেই কিনা কে জানে, ওই বাসায় অনেকে অনেক রকম ভূত দেখেছে। আমার মাও একবার দেখেছিলেন, সেটা অন্য ঘটনা। বরং আমারটাই শোনা যাক। ওই বাসায় তখনো কারেন্ট আসেনি। একদিন রাতের বেলায় আমরা রান্নাঘরে হারিকেন জ্বালিয়ে মাটিতে বসে সবাই খাচ্ছি। আমার খাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় আমি রান্নাঘরের বাইরে এসে দরজার কাছে লাফ-ঝাঁপ দিচ্ছিলাম। সারা ঘর অন্ধকার। শুধু রান্নাঘরে হারিকেন জ্বালিয়ে ভাত খাওয়া হচ্ছে। সেদিন বাবা ছিলেন না। মা আর চার ভাইবোন। ছোট বোনটার তখনো জন্ম হয়নি। আমি হঠাত্ দেখলাম, আমার সামনের ঘরের জানালায় একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে। গায়ের রং কুচকুচে কালো, মাথাভর্তি কোঁকড়া চুল। বেশ রোগা ছেলেটা দুহাতে জানালার দুটো শিক ধরে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি অবশ্য মোটেও ভয় পেলাম না। লাফ-ঝাঁপ থামিয়ে আমিও তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে। তারপর কী মনে হলো চেঁচিয়ে উঠলাম, ‘কালো ছেলে! কালো ছেলে!!’ আমার চিত্কার শুনে সবাই খাবার ফেলে বেরিয়ে এল।

—কী হয়েছে?

—ওইখানে একটা কালো ছেলে...

—কই?

—ওই যে...আমি তখনো দেখছিলাম। সবাই ভাবল, বাসায় চোর ঢুকেছে। নতুন জায়গায় এসেছি আমরা, বাসাটাও নতুন...সবাই হারিকেন নিয়ে সারা বাড়ি খুঁজল, কোথাও কেউ নেই। সবাই ভাবল, আমি ছোট মানুষ কী দেখতে কী দেখেছি। ব্যাপারটা এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু এরপর থেকে আমি রেগুলার কালো ছেলেটাকে দেখতে লাগলাম। আমি নাকি ঘুমের ঘোরেও ‘কালো ছেলে কালো ছেলে’ বলে চেঁচাতাম। আম্মা ভয় পেয়ে গেলেন আমাকে নিয়ে। আমার জন্য একটা বেশ বড়সড় তাবিজ আনা হলো। সেই তাবিজ কখনো হাতে, কখনো কোমরে, কখনো-বা গলায় বাঁধা হতো। শরীরের যত্রতত্র তাবিজ ঘুরতে লাগল। আর কালো ছেলেটাকেও বাড়ির যত্রতত্র দেখা যেতে লাগল। তাবিজে কাজ হলো না। আমি কালো ছেলেটাকে দেখতেই থাকলাম...দেখতেই থাকলাম।...এবং সমস্যার ব্যাপারটা হচ্ছে এবার আমি তাকে দেখলেই ভয় পেতাম।

ঘটনা এইটুকুই। এই কালো ছেলে রহস্য আর শেষ পর্যন্ত উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। আমরা বদলি হয়ে ওই বাড়ি ছেড়ে যখন গেলাম, তখন বিষয়টা বন্ধ হলো। আসলে ওই বাড়িটাই ভুতুড়ে ছিল বলাই বাহুল্য।