কার্টুনের রান্নাঘর
ক্যারেক্টার ডিজাইন : সহজ টিপস
কার্টুন আঁকতে পারি, কিন্তু নতুন নতুন ক্যারেক্টার আঁকা বেশ ভেজাল লাগে—এমন মনে হয় অনেকেই আছি আমরা। ব্যাপারটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, কারণ আসলেই বিষয়টা একটু কঠিন। তবে সেটা করার বেশ কিছু টোটকা আছে, তারই একটা আজ বাতলানো যাক।
প্রথমে যেটা করতে হবে তা হলো মোটা কোনো তুলিতে বা সাইনপেন বা মার্কার, সোজা কথা মোটা কালি বের হয় এমন কিছু দিয়ে যে ক্যারেক্টারটা আঁকতে চাচ্ছি, তার একটা ছায়া শরীর দাঁড় করানো, যাকে ইংরেজিতে বলে সিলুয়েট (silhouette)। মুখ–চোখ কিছুই নেই, খালি কালোতে অবয়বটা। এটা একেবারে ছোট করে আঁকতে হবে। অনেকটা বুড়ো আঙুলের যে সাইজ তার মধ্যে। ফলে ভুলটুল যা হওয়ার কমের ওপর দিয়েই হবে এবং যেহেতু খালি কালিতে ছোট ছোট করে আঁকা, তাই যতগুলো মাথায় আসে পাশাপাশি খুব কম সময়েই এঁকে ফেলা যাবে। ধরা যাক, আমরা একটা কাল্পনিক সামুরাই যোদ্ধা বানাতে চাই, যেটা আবার দেখতে একটু তেলাপোকা ধরনের। ‘ককরোচ সামুরাই’ ধরনের একটা কিছু আরকি। নিচে সেটা কেমন হতে পারে, তার কিছু সিলুয়েট এঁকে ফেললাম, একটা মোটা, একটা চিকন, লম্বা, একটা গরিলা টাইপ ইত্যাদি।
এবার কোনটা আমার ভালো লাগছে, সেটা একান্তই আমার নিজের ব্যাপার। আর যেহেতু মাথায় যা এসেছে সবই পাশাপাশি এঁকে নিয়েছি, তাই সবশেষে ‘অন্যটা হয়তো আরও ভালো হতো’ এই আফসোসটা আর থাকবে না। যা হোক, এখানে আমার যেমন গরিলার মতো, মানে ২ নম্বরটা বেশ মজার লেগেছে, এবার আমি যেটা করব সেটা হলো এটাকে বড় করে নেব। ডিজিটালি হলে ফটোশপে ট্রান্সফর্ম টুল দিয়ে এটা টেনে বড় করে ফেলা যায়, আর হাতে আঁকা হলে কোনো একটা ফটোকপির দোকানে গিয়ে দ্বিগুণ সাইজে কপি করে দিতে বলা যায়। আর সেটাকে একটা লাইটের উল্টো দিকে ধরে আরেকটা কাগজে অবয়বটা তুলে নিতেও খুব একটা কষ্ট হবে না, সায়েন্সে যারা পড়েছ বা পড়ছ তারা অনেকেই জীববিজ্ঞানের প্র্যাকটিক্যাল খাতায় এই দুর্দান্ত টেকনিকটা ব্যবহার করেছ। আর ফটোশপে যারা আঁকবে তারা তো জানোই কীভাবে লেয়ারের ওপাসিটি কমিয়ে কাজটা করতে হবে। যা হোক, ধরে নিচ্ছি কার্টুনের চরিত্র আঁকতে যাদের ইচ্ছা, এই জিনিসটা সমাধানে তারা ঠিকই একটা উপায় বের করে ফেলবে।
এবার তাহলে পরের ধাপ।
ছোট করে যেটা এঁকেছিলাম, এবার বড় করে সেটার ওপর আবার আরেকটু হাত চালানো। মনে রাখা জরুরি যে এখানে কখনোই প্রথমে যা করা হয়েছিল, সেটাই শেষ পর্যন্ত থাকবে, এমন নয়। প্রতি ধাপে একটু একটু করে ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে। কারণ পুরোটাই আর্টিস্টের নিজের ইচ্ছা। আর এই ধাপে আরেকটা বুদ্ধি হলো খুব বেশি জটিল করে না এঁকে একেবারে সহজ জ্যামিতিক ফর্মে গোটা ক্যারেক্টারটাকে রাফ করে নেওয়া। যত সরল করে রাখা যায়।
এবার যার যার আঁকার শক্তি দেখানোর পালা। ওই সহজ করে আঁকা ফর্মের মধ্যে যত ইচ্ছা ডিজাইন পুরে দেওয়া। এখানে মাথায় ডিজাইন না এলে এ ধরনের রেফারেন্স জোগাড় করে নেওয়া যেতে পারে। যেমন এখানে আমি কিছু সামুরাই যোদ্ধার আসল ছবি ইন্টারনেটে দেখে নিয়েছিলাম।
এবার ফাইনাল করা, যে যেভাবে খুশি করে নাও। কলমে আউটলাইন করে পরে রং করে নেওয়া বা সাদা-কালোতেই রাখা—সবই আঁকিয়ের মর্জি। মোদ্দা কথা, একেবারে আন্দাজে না এঁকে এই পদ্ধতিতে এগোলে জিনিসটা একটু হাতে থাকে। কিন্তু ক্যারেক্টার কী হবে আর রং কেমন হবে, তা সবই যে আঁকছে তার ওপর। তাহলে শুরু করে দাও তোমার নিজের কার্টুন ক্যারেক্টার ডিজাইন?
আবার কথা হবে শিগগিরই।