চিঠি পাঠানোর অভিজ্ঞতা

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

কিআর বড় ভক্ত আমি। কোনো মাসে কিআ কেনা বাকি রাখিনি। প্রায়ই চিঠি পাঠাই। কখনো ছাপা হয়। কখনো হয় না। তবু প্রতি মাসেই চিঠি পাঠাই আমি। কিন্তু একবার পরিনি। কারণটা, এত বিচিত্র যে, তোমাদের না জানিয়ে পারছি না।

সেদিন কী বার ছিল মনে নেই। কিআকে একটা চিঠি পাঠাতে যাচ্ছিলাম আমি। একটা চাপা গলি দিয়ে যচ্ছি। গলিটা এমন চাপা যে মাঝখান দিয়ে মাত্র একজন সোজা হয়ে যেতে পারে। হঠাৎ মোটাসোটা একটা লোক এল। আমরা এমন এক জায়গায় আটকালাম যে কারও সামনে-পেছনে যাওয়ার উপায় নেই। একেবারে পরস্পরের গায়ে গা মিশিয়ে চলে গেলাম আমরা। এই সূত্রে তার সঙ্গে আমার কোলাকুলিটাও হয়ে গেল। কোলাকুলি পর্ব শেষে পৌঁছে গেলাম বড় রাস্তায়। সামনে থেকে আসা একটা গাড়িকে সরে জায়গা দিতে গেলাম, সঙ্গে সঙ্গে আমার পা পড়ল একটা কুকুরের লেজে। বোঝো ঠেলা। সারা এলাকা আমাকে তাড়া করল কুকুরটা। আমি তো ভাবছিলাম, কুকুরের কামড় না খেয়ে চিঠি পাঠাতেই পারব না। তখন এক দয়াবান ব্যক্তি তাড়িয়ে দিল কুকুরটিকে। ধন্যবাদ জানালাম তাকে। তারপর আবার হাঁটা শুরু করলাম। আমি দমে যাওয়ার পাত্র না। যত বিপদই আসুক, আমার লক্ষ্যে ঠিক পৌঁছাবই। হঠাৎ পেছন থেকে একজন আমাকে ধরে বলল, ‘কিরে কত দিন পর দেখা, চল, আমার বাসায় চল। তোকে খাওয়াব।’ কথাটা শেষ করতে না করতেই লোকটি অর্থাৎ, আমার ছোটবেলার বন্ধু রনি যার সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা, আমাকে টেনে তার বাসায় নিয়ে গেল।

ভালোই খেলাম সেখানে। খেতে গিয়ে কোমলপানীয় পড়ল আমার জামার ওপর। নোংরা হয়ে গেল জামাটা। বাড়ির সবার সামনে আমার শার্টটা খুলে বুয়াকে ধুয়ে দিতে বলল রনি। ভাগ্যিস স্যান্ডোগেঞ্জি ছিল! ধোয়ার পর কাপড় শুকাতে শুকাতে বাজল পাঁচটা। তখন পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম, কিছু কাগজ দুমড়েমুচড়ে গেছে। তখন মনে পড়ল চিঠির কথা। খেতে খেতে ভুলেই গিয়েছিলাম যে জামার পকেটে চিঠি ছিল। আমার মস্তিষ্ক শরীরকে সংকেত পাঠাল, আর চিঠি পাঠিয়ে লাভ নেই; এই মাসে না হয় থাক।

এখন মনে পড়েছে, দিনটা ছিল শনিবার। তাই বোধ হয় মাথার ওপর শনি ঘুরপাক খাচ্ছিল। এই ৭০০ কোটি মানুষের এই পৃথিবীতে শনি বোধ হয় শুধু আমাকেই পেয়েছিল সেদিন।