তখন আমি কেজিতে পড়ি। মাথার চুল বেশ বড় হয়ে গেছে। আম্মুর সঙ্গে যাচ্ছি চুল কাটাতে। আগে কখনো আম্মুর সঙ্গে চুল কাটাতে যাইনি। মনে হয়, নতুন কোনো স্টাইলে চুল কাটাবে।
সেলুনে ঢুকে আরাম করে বসলাম। চুল কাটার জন্য মেশিন নিয়ে এল নাপিত। মাঝে মাঝে মেশিন দিয়ে যখন চুল কাটে, তখন আরামই লাগে। খ্যাড় খ্যাড় করে কাটার সময় একটা মসৃণ শিহরণ হয় মাথায়।
নাপিত এগিয়ে এল। মেশিন দিয়ে আমার মাথার পেছনের চুল কাটা শুরু করল। আমি নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকলাম। হঠাৎ দেখি মেশিনটা আস্তে আস্তে পেছন থেকে অনেক ওপরে উঠে এল। মুহূর্তের মধ্যে দেখি মাথার অর্ধেকটার সব চুল কেটে ফেলল। একি! আম্মু কোনো বাধা দিচ্ছে না কেন? আমি লাফ দিয়ে সিট থেকে নামলাম, কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম, ‘এ কী করেছেন? আমাকে টাক্কু করে দিচ্ছেন কেন? মা, তুমি কিছু বলছ না কেন?’
কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। আমার মাথার অর্ধেক চুল নেই। দেখতে খুব বাজে লাগছে। এ অবস্থায় বাসায় গেলে রাস্তার লোকজন হাসাহাসি করবে, মা আর নাপিত অনেক কষ্টে বুঝিয়ে–সুঝিয়ে আমাকে সিটে বসাল।
বাকিটা সময় কাঁদতে কাঁদতে চুল কাটালাম। আস্তে আস্তে পুরো টাক্কু করে দিল। এই কান্না বাসায় গিয়েও থামল না। এর আগে কবে টাক্কু হয়েছি মনেই নেই। তাই খুব দুঃখ লাগছে। সারা দিন দুঃখ করে কাটালাম। পরদিন সকালে স্কুলে গেলাম ক্যাপ পরে, ক্লাসের কেউ কেউ আমার ক্যাপ খুলে হাসাহাসি করতে লাগল। খুব কষ্ট পেয়েছি সেবার।
এখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। এ ঘটনার পর আর কখনো ন্যাড়া হইনি। মাঝেমধ্যে লজ্জা লাগে সেবার ন্যাড়া করার পর এতটা খারাপ লেগেছিল বলে। আবার মাঝেমধ্যে হাসিও আসে এ ঘটনা মনে পড়ে।