মিমি চকলেটের ইচ্ছাপূরণ

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

ঠান্ডা করার জন্য ফ্রিজে রাখা হয়েছে মিমিকে। একটু আগেই চকলেট তৈরির মেশিন থেকে বের হয়েছে সে। শরীরটা তার এখনো গরম। চিনি, আটা, ময়দা, বিভিন্ন ফ্লেভার, রং আরও বিভিন্ন ধরনের উপকরণে সে তৈরি হয়েছে। তার দৈর্ঘ্য পাঁচ ইঞ্চি আর প্রস্থ আড়াই ইঞ্চি। মিমি যখন তৈরি হয়ে গেল, তখন সে মনে মনে একটা ইচ্ছা পোষণ করল। তার ইচ্ছাটা হলো, সে এখন যেমন আছে, সারা জীবনই সে এ রকম থাকতে চায়, কিন্তু একটা চকলেটের পক্ষে কি এমনটা থাকা সম্ভব? মিমি আর ভাবে, ইশ্‌! এমন কেউ কি আছে, যে আমাকে কিনবে কিন্তু খাবে না। তার ড্রয়ারের কোনো একটা কোনায় আমাকে ফেলে রাখবে আড়াল করে। যেন অন্য কেউও আমাকে খেতে না পারে। এসব ভাবতে ভাবতেই মিমি দেখল, কেউ একজন তার গায়ে সোনালি রঙের একটা কাপড় পরিয়ে দিচ্ছে। ও আচ্ছা, এটা তো ফয়েল পেপার, মিমি বলে উঠল। তারপর সে বুঝতে পারল সে কোথায় গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যাচ্ছে। এবার তাকে আরও একটা কাপড় পরানো হচ্ছে। কাপড়টা দেখতে বেশ সুন্দর। বিভিন্ন ধরনের রঙে রঙিন। আমার একটা ছবিও আছে সেখানে। আমার মৃত্যু দিবসও লেখা আছে। মানে আমার মেয়াদ। সেই সঙ্গে আমার দাম আর জন্ম তারিখটাও। আমাকে মোড়কজাত করে পাঠানো হলো শহরের মস্ত বড় এক কনফেকশনারিতে। মাঝেমধ্যেই বাচ্চারা আমাকে ধরে আবার রেখে দেয়। আমার দামও জিজ্ঞেস করে কেনার জন্য। আমার অবশ্য এই দোকানে খারাপ লাগে না। ঠান্ডা এসির ভেতর থাকি। আমার সঙ্গে আরও অনেক চকলেট বন্ধু থাকে। অনেকে আবার বিক্রিও হয়ে গেছে। একদিন একটা মেয়ে আমাকে কিনে নিয়ে গেল। প্রথমে রাখল তার পড়ার টেবিলে। আমাকে খাওয়ার জন্য প্যাকেট খুলতে গিয়েও কী মনে করে যেন খুলল না। আমাকে পড়ার টেবিলের ড্রয়ারের এক কোনায় রেখেই সে চলে গেল। এরপর সে আমার কথা আর মনে করেনি। আমিও পড়ে রইলাম এক কোনায়। আমার মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু একটা কথা ভেবে ভালো লাগছে যে আমার জন্মের সময় যে ইচ্ছাটা পূরণ করতে চেয়েছিলাম, সেটা কিছুদিনের মধ্যেই পূরণ হবে।