সুস্থ হয়ে ওঠ ছাগল বিজ্ঞানী

যেদিন শুনলাম ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খুলবে, সেদিন থেকেই মনের মধ্যে একটা উত্তেজনা আর অনিশ্চয়তা কাজ করছিল। যখন দেখলাম, স্কুল থেকে বিভিন্ন ধরনের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে, তখন কিছুটা বিশ্বাস হলো—হয়তো এবার সত্যিই স্কুল খুলছে। ১০ তারিখ জানলাম, আমাদের ক্লাস হবে সপ্তাহে এক দিন। ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত লাগল। ক্লাস ফাইভ, টেন আর টুয়েলভদের রোজ ক্লাস আর আমাদের এইটদের মাত্র এক দিন? রুটিনে দেখলাম, আমাদের বুধবার দুটি ক্লাস হবে। বিজ্ঞান ও বাংলা। স্কুলে এত দিন পর গিয়ে প্রথমেই বিজ্ঞান ক্লাস—ব্যাপারটা আমার কাছে মোটেও ভালো লাগছিল না। তার ওপর আমাদের ক্লাসের সবাইকে নাকি দুই ভাগে ভাগ করেছে, এক ভাগ স্কুলে যাবে সকাল ৭টার দিকে, আরেক ভাগ ১০টার দিকে। শুনেই আমার মন খারাপ হয়ে গেল। একে তো আমাকে সেই সকাল সকাল উঠতে হবে, দ্বিতীয়ত আমার বন্ধুবান্ধব যারা আছে, সবার কলেজ নম্বর পেছনের দিকে, তাই তারা অন্য গ্রুপে। ভাগ্যক্রমে আমার এক বান্ধবী আমার গ্রুপে পড়ল, তার কলেজ নম্বর আর একজনের পেছনে থাকলেই সে চলে যেত ১০টার গ্রুপে। এই ১৮ মাসের লম্বা ছুটিতে আমার দেরিতে ঘুমিয়ে দেরিতে ওঠার একটা বাজে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। সেটা যে এখন বাদ দিতে হবে।

আমি জানতাম, ঢোকার সময় আমাদের বরণ করে নেওয়া হবে; কিন্তু ব্যাপারটা আহামরি কিছু না। স্কুলে ঢোকার সময় একজন আপু হাতে ধরে রাখা ট্রে থেকে গাঁদা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিলেন মাথার ওপর (আমার এক বান্ধবীর ধারণা, গাঁদা ফুলের পাপড়িগুলো কোনো কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থাকা ময়লার বালতি থেকে উঠিয়ে আনা!)। আর এক ভাইয়া (নাকি আপুই ছিলেন, মনে নেই) ট্রেতে চকলেট নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেখান থেকে চকলেট নিয়ে ভেতরে গেলাম। ক্লাসরুমে ঢুকে বসার কিছুক্ষণ পরই আমাদের ক্লাস শুরু হলো। যা ভেবেছিলাম তা–ই, বিজ্ঞান স্যার পড়ানো শুরু করলেন। আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, প্রথম ক্লাসে পড়ানো হবে না, বরং গল্পসল্প করে কাটানো হবে, কিন্তু বিজ্ঞান স্যার ঠিকই পড়ালেন! পরের ক্লাসে অবশ্য আমাদের সঙ্গে গল্পসল্প করলেন বাংলা স্যার। তখন বেশ লাগছিল৷ ছুটির পর ১০টার গ্রুপের অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। বাইরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কথা হলো৷ তারপর বাসায় ফেরার পথ ধরলাম। সত্যি বলতে কি, এত দিন পর স্কুলে গিয়ে সবার নাকি ঈদ ঈদ অনুভূতি ছিল, অনেক খুশি লেগেছে; আমার অনুভূতি তেমন না। হ্যাঁ, একটু অন্য রকম তো লেগেছে, কিন্তু ভালো লাগার চেয়ে খারাপ লাগাটাই বেশি ছিল। কারণ, আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়নি। সে কোভিড পজিটিভ। এ লেখাটা আমি উৎসর্গ করছি আমার সেই প্রিয় বন্ধু ‘ছাগল বিজ্ঞানী’কে। সুস্থ হ তাড়াতাড়ি! কত দিন দেখা হয় না! যেদিন দেখা হবে, সেদিন আমার ঈদ ঈদ ভাব আসবে!

লেখক: অষ্টম শ্রেণি, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা