পেতনি

অলংকরণ: মুগ্ধ

এক মাঝরাতে আচমকা ঘুম ভেঙে গেল আমার। বুঝলাম, লোডশেডিং। তৃষ্ণায় গলাও শুকিয়ে কাঠ। হাতের কাছে পানি ছিল না, বিছানা থেকে নেমে ডাইনিং টেবিলের কাছে যেতেই লক্ষ করলাম, বারান্দায় একটা অদ্ভুত ছায়ামূর্তি নড়াচড়া করছে। ঘুমের ঘোরে ভুলভাল দেখছি নাকি? কিছুক্ষণ পর আবার দেখলাম...নাহ্‌! ছায়ামূর্তি নড়েই চলেছে। অঙ্গভঙ্গিও ভয়ংকর। ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম আমি!

বাইরে ঝড় উঠেছে। শাঁ শাঁ ভুতুড়ে শব্দ শুনতে পাচ্ছি। বাসার জানালাগুলো থরথর করে কাঁপছে। আমার বুকের ভেতরটাও সমানুপাতিক হারে কাঁপুনি দিচ্ছে। ঠান্ডা হয়ে উঠছে হাত-পা!

বুকে সাহস সঞ্চার করে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম ছায়ামুর্তিটার দিকে। খুব সম্ভবত পেতনি টাইপের কিছু হবে। কেননা, ঝোড়ো হাওয়াতে তার চুলগুলো দোপাট্টার মতো করে উড়ছে। আর সে কী লম্বা চুল! কী ভয়ানক! শাঁ শাঁ শব্দটা মনে হয় পেতনির নিশ্বাসের শব্দ। আমার কি এভাবে পেতনির কাছে যাওয়া ঠিক হচ্ছে? ভয়ও লাগছে খুব, এদিকে একটা অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভেঞ্চার অনুভূতিও হচ্ছিল। নিজের সঙ্গে অনেকটা রকিব হাসানের ‘তিন গোয়েন্দা’র চরিত্রের মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম। বড়দের মতো সিদ্ধান্ত নিলাম, যা হবার হবে। দরকার পড়লে পেতনিকেই ধরে পেটানো শুরু করব!

শেষে দোয়া-দরুদ পড়ে, মুষ্টি শক্ত করে ঢুকেই পড়লাম বারান্দায়।

আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম, পেতনিও চিৎকার দিল...! তাৎক্ষণিকভাবে কেউই কিছু বুঝে উঠতে পারল না। কিন্তু একি! পেতনি কোথায়? এ তো আমার মা।

রাতের বেলা হঠাৎ ঝড় আসায় মা বারান্দায় নেড়ে দেওয়া কাপড় তুলতে এসেছিল। বাতাসে বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল তারই চুলগুলো। আমাদের বাসা ছয়তলায়। ঝোড়ো বাতাস শাঁ শাঁ করে ভেতরে আসছিল! আর হাতের ওপর জামাকাপড়ের স্তূপ করে রেখেছিল মা। আবছা আলোতে ছায়াটা বেশ অদ্ভুত আকার ধারণ করে, যা দেখেই আমি মাকে পেতনি ভেবেছিলাম!

ও হ্যাঁ! আমার মায়ের চুল কিন্তু বেশ লম্বা… বলা চলে একদম পেতনির মতোই! কিআতে এই লেখা মা দেখলে নিশ্চিত বকুনি দেবে।