জন্মদিনের পায়েস

অলংকরণ: আপন জোয়ার্দার

বিছানার পাশের টেবিলে রাখা ডিজিটাল ঘড়ির অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙল রাকিব সাহেবের। চোখ কচলে উঠে বসে তিনি দেখলেন, বেড হিটারে এইমাত্র তৈরি করা কফি উঁকি দিচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কফি খাওয়া রাকিব সাহেবের অভ্যাস। কিন্তু আজ কেন যেন খেতে ইচ্ছা করছে না। কফি থেকে চোখ সরাতেই দৃষ্টি পড়ল ঘরের দেয়ালে। ডিজিটাল বোর্ডের তৈরি দেয়ালে বিভিন্ন রং দিয়ে লেখা, ‘Happy Birthday Mr. Rakib Imtiaz.’ ওহ! আজ তো তাঁর জন্মদিন! ভুলেই গিয়েছিলেন। মনে রেখেই–বা কী হবে? ঘরের নির্জীব দেয়ালগুলো ছাড়া আর তো কেউ নেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানানোর মতো! দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি।

অভিশপ্ত এই পৃথিবীতে সবাই বিচ্ছিন্ন। কারও সঙ্গে কারও কোনো যোগাযোগ নেই, পরিচয় নেই। হাসপাতালের কেবিনের মতো ঘরগুলোয় আটকে থাকতে হয় সবাইকে। সেখানে পাশের ঘরে থাকা মানুষটির সঙ্গেও কথা বলার উপায় নেই। বাইরে অন্ধকারাচ্ছন্ন দূষিত পৃথিবী। বিভিন্ন ধরনের দূষণের মাত্রা বেড়ে গিয়ে সেই সবুজ সুন্দর পৃথিবীটা আজ আর বসবাসের যোগ্য নেই। যন্ত্রচালিত এসব ঘরই বেঁচে থাকার একমাত্র জায়গা, যেখানে উন্নত জীবনযাপনের সবকিছুই রয়েছে। আরও একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রাকিব সাহেব। ফিরে গেলেন ৪৭ বছর আগের ২০২৩ সালের মে মাসের ২৬ তারিখে। মনে পড়ে গেল জন্মদিনের সকালে মায়ের হাতে তৈরি পায়েসের ঘ্রাণ আর স্নেহার্ত কণ্ঠ, ‘শুভ জন্মদিন বাবা। তোর পছন্দের পায়েস বানিয়েছি। খেয়ে নে।’