স্টিফেন হকিংয়ের ছেলেবেলা

হুইলচেয়ারে নিশ্চল বন্দী থেকেও তিনি পরিণত হয়েছিলেন আমাদের কালের অন্যতম সেরা পদার্থবিজ্ঞানীতে। আবার তিনিই লিখেছিলেন আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম-এর মতো বিজ্ঞানের সর্বকালের সেরা বেস্টসেলার বই। কিন্তু কীভাবে? এই প্রশ্নগুলো কয়েক দশক ধরেই সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। সাধারণের এই তীব্র কৌতূহল মেটাতে তাই স্টিফেন হকিং ২০১৩ সালে লিখেছিলেন মাই ব্রিফ হিস্ট্রি শিরোনামের এক আত্মজীবনী। বইটিতে তাঁর ছেলেবেলা থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী হয়ে ওঠা সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন তিনি। এখানে তাঁর বিজ্ঞানী জীবন আর ব্যক্তিজীবন একাকার হয়ে রয়েছে। সেই বইটির একটি অধ্যায় এখানে ছাপা হলো কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য।

ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের এক বর্গাচাষি পরিবার থেকে এসেছিলেন আমার বাবা ফ্রাঙ্ক। তাঁর দাদা, অর্থাৎ আমার প্রপিতামহ জন হকিংকে বেশ সম্পদশালী কৃষকই বলা যায়। কিন্তু তিনি এত বেশি খামার কিনেছিলেন যে এই শতাব্দীর শুরুতে কৃষিমন্দার সময় তিনি দেউলিয়া হয়ে যান। ছেলে রবার্ট, অর্থাৎ আমার দাদা তাঁর বাবাকে সহায়তা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেও দেউলিয়া হয়ে যান। চরম সৌভাগ্যই বলতে হবে যে বরোব্রিজে একটি বাড়ির মালিক ছিলেন রবার্টের স্ত্রী। সেই বাড়িতে একটি স্কুল চালাতেন তিনি। সেখান থেকে আয় হতো খুব সামান্যই। তবু কোনোমতে ছেলেকে অক্সফোর্ডে পাঠাতে পেরেছিলেন তাঁরা। সেখানে চিকিৎসাবিদ্যা বিষয়ে পড়ালেখা করেছিলেন তিনি।

আমার বাবা আর মায়ের সঙ্গে আমি

ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি স্কলারশিপ ও পুরস্কার জিতেছিলেন আমার বাবা। তাই পিতা-মাতাকে টাকা পাঠাতে পারতেন। পরে তিনি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার চিকিৎসাবিদ্যা (ট্রপিক্যাল মেডিসিন) বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণার অংশ হিসেবে ১৯৩৭ সালে পূর্ব আফ্রিকায় ভ্রমণ করেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইংল্যান্ডে ফিরতে জাহাজ পেতে স্থলপথে ও কঙ্গো নদী ধরে পুরো আফ্রিকা ঘুরে বেড়িয়েছিলেন বাবা। দেশে ফিরে সামরিক বাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন তিনি। অবশ্য তাঁকে বলা হয়েছিল, চিকিৎসাবিদ্যায় গবেষণাই তাঁর জন্য বেশি কাজে আসবে।

আমার মায়ের জন্ম স্কটল্যান্ডের ডানফার্মলাইনে। এক চিকিৎসক পরিবারের আট সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। পরিবারের সবচেয়ে বড় মেয়েটি ডাউন সিনড্রোমে ভুগছিলেন। তাই এক তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে তাঁকে আলাদা রাখা হতো। ১৩ বছর বয়সে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবেই ছিলেন তিনি। আমার মায়ের যখন ১২ বছর বয়স, তখন ওই পরিবার ডেভনে চলে যায়। বাবার পরিবারের মতোই মায়ের পরিবারও তেমন সচ্ছল ছিল না। তারপরও কীভাবে যেন আমার মাকে অক্সফোর্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন তাঁরা। অক্সফোর্ডে পড়ালেখা শেষে বেশ কয়েকটি চাকরি করেছিলেন মা। এর মধ্যে রয়েছে ট্যাক্স ইন্সপেক্টর, যা তিনি কোনোভাইে পছন্দ করতে পারেননি। সেক্রেটারি হওয়ার জন্য একসময় তিনি এই চাকরিটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। ঠিক এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে আমার বাবার সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর।

আমি, ফিলিপ্পা ও মেরি

আমার জন্ম ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি। গ্যালিলিওর মৃত্যুর ঠিক ৩০০ বছর পর। আমি হিসাব করে দেখেছি, ওই দিন আরও প্রায় দুই লাখ শিশুর জন্ম হয়েছিল। তবে তাদের কেউ পরে জ্যোতির্বিদ্যায় আগ্রহী হয়েছিল কি না, আমার জানা নেই।

আমার বাবা-মা লন্ডনে থাকলেও আমি জন্মেছিলাম অক্সফোর্ডে। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান ও ব্রিটিশদের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তিটি ছিল, অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজে জার্মানরা বোমা ফেলবে না। এর বিনিময়ে ব্রিটিশরা হাইডেলবার্গ ও গটিনজেনে বোমা না ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দুঃখের বিষয়, অন্য আরও শহরের জন্য এ ধরনের সুসভ্য প্রতিশ্রুতি আদায় করা যায়নি।

সাগরসৈকতে আমি আর আমার বোনেরা

আমরা থাকতাম উত্তর লন্ডনের হাইগেটে। আমার জন্মের ১৮ মাস পর আমার বোন মেরির জন্ম। পরে শুনেছি, আমি নাকি তার জন্মটাকে ভালোভাবে নিতে পারিনি। দুজনের বয়সের ফারাক খুব কম হওয়ায় শৈশবজুড়েই আমাদের মধ্যে একধরনের বৈরিতা ছিল। তবে বয়সকালে যথারীতি এই বৈরিতা গায়েব হয়ে গিয়েছিল। কারণ, পরবর্তী সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পথে চলে গিয়েছিলাম আমরা। সে চিকিৎসক হয়েছিল। তাতে আমার বাবা ভীষণ খুশি হয়েছিলেন।

প্রায় পাঁচ বছর বয়সে চারপাশে কী ঘটছে, সেসব যখন বেশ বুঝতে শিখেছি, ঠিক তখন আমার বোন ফিলিপ্পার জন্ম। এখনো মনে আছে, তার জন্মের জন্য একসময় কেমন প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকতাম। ভাবতাম, তিন ভাইবোন হলে খেলাধুলায় অনেক মজা করতে পারব আমরা। শিশু হিসেবে ফিলিপ্পা ছিল খুবই আবেগপ্রবণ আর সমঝদার। সব সময় তার বিবেচনাবোধ আর মতামতের গুরুত্ব দিতাম আমি। আরও অনেক পরে দত্তক নেওয়া হয়েছিল আমার ভাই এডওয়ার্ডকে। আমার বয়স তখন ১৪। তাই আমার শৈশবে তার তেমন স্মৃতি নেই। পরিবারের অন্য তিন শিশুর চেয়ে একেবারেই আলাদা ছিল সে। পড়ালেখায় কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে তার কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু সেটাই হয়তো আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। সে একটু বেয়াড়া ধরনের শিশু হলেও তাকে পছন্দ না করে কোনো উপায় ছিল না। ২০০৪ সালে সে মারা যায়। কিন্তু কারণটা কখনোই সঠিকভাবে জানা যায়নি। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাটি হচ্ছে এডওয়ার্ডের ফ্ল্যাটের সংস্কারের সময় লাগানো আঠা থেকে উদ্বায়ী গ্যাসের বিষক্রিয়াই তার মৃত্যুর কারণ।

লন্ডনের হাইগেটে আমাদের রাস্তা

সবচেয়ে ছোটবেলার যে স্মৃতিটি এখনো আমার মনে আছে, সেটি হলো হাইগেটে বায়রন হাউস স্কুলের নার্সারি ক্লাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছি আমি। আর আমার চারপাশে শিশুরা খেলছে। তাদের খেলনাগুলো দেখে অসাধারণ বলে মনে হচ্ছিল। অবশ্য আমিও তাদের সঙ্গে খেলায় যোগ দিতে চাইছিলাম। কিন্তু আমার বয়স তখন মোটে আড়াই বছর। আসলে সেবারই প্রথম একদল অচেনা মানুষের সঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল আমাকে। তাতে খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি। আমার ধারণা, বাবা-মা আমার এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখে একটু অবাক হয়েছিলেন। কারণ, আমিই তাঁদের প্রথম সন্তান। সন্তান লালনপালনে তাঁরা শিশু বিকাশবিষয়ক কিছু পাঠ্যপুস্তক অনুসরণ করতেন। এসব বইতে বলা হয়েছিল, শিশুদের দুই বছর বয়সেই সামাজিক সম্পর্ক তৈরির জন্য তৈরি করা উচিত। কিন্তু ওই ভয়ংকর সকালের পর তাঁরা আমাকে সেখান থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর পরবর্তী দেড় বছর বায়রন হাউসের দিকে আর পা বাড়াননি।

সে সময়, অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই হাইগেট এলাকায় বেশ কিছু বিজ্ঞানী আর শিক্ষাবিদ থাকতেন। এই বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের পাঠাতেন বায়রন হাউস স্কুলে। কারণ, সেকালে এটিই ছিল সবচেয়ে অগ্রসর স্কুল।

আমার মনে আছে, এই স্কুল আমাকে কিছুই শেখাতে পারেনি বলে বাবা-মাকে আমি একবার অভিযোগ করেছিলাম। কোনো কিছু জোর করে ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার সেকালের সর্বসম্মত কায়দায় বায়রন হাউসের শিক্ষকেরা বিশ্বাস করতেন না। বরং সেখানে কোনো কিছু না বুঝেই পড়তে শেখানো হতো। অবশেষে আমি এভাবেই পড়তে শিখেছিলাম, কিন্তু মোটামুটি ভালোভাবে শিখতে আট বছর বয়স পেরিয়ে গিয়েছিল। আমার বোন ফিলিপ্পাও প্রচলিত পদ্ধতিতে পড়তে শিখেছিল এবং চার বছর বয়সেই সে পড়তে পারত। পরে আমার চেয়ে বেশি মেধার স্বাক্ষর রেখেছিল সে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হামলার সময় লন্ডন

একটা লম্বা ও সরু ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের বাড়িতে থাকতাম আমরা। বিশ্বযুদ্ধের সময় খুবই সস্তায় বাড়িটি কিনেছিলেন বাবা-মা। সে সময় সবার আশঙ্কা ছিল, লন্ডনে বোমা হামলা হবে। আমাদের বাড়ি থেকে কয়েকটা বাড়ি পরে সত্যি সত্যিই একটা ভি-২ রকেট ফেলা হয়েছিল। মা আর বোনের সঙ্গে তখন আমি সেখান থেকে বেশ দূরে ছিলাম। কিন্তু বাবা সে সময় ওই বাড়িতেই ছিলেন। ভাগ্য ভালোই বলতে হবে, তিনি আঘাত পাননি। বাড়িটাও তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু অনেক বছর সেখানে রাস্তার নিচে বোমা পড়ার সেই জায়গাটি নির্দিষ্ট করা ছিল। ওই জায়গায় আমার বন্ধু হাওয়ার্ডের সঙ্গে খেলতাম আমি। ওদের বাড়িটি ছিল উল্টো দিকের রাস্তায়, ঠিক তিনটি বাড়ি পরেই। আমার কাছে হাওয়ার্ড ছিল দারুণ এক বিস্ময়। কারণ, আমার চেনাজানা অন্য ছেলেদের মতো বুদ্ধিজীবী ছিলেন না ওর বাবা-মা। সে কাউন্সিল স্কুলে যেত, বায়রন স্কুলে নয়। আবার সে ফুটবল ও বক্সিংসহ এমন এমন সব খেলা সম্পর্কে জানত, যেগুলোর কথা আমার বাবা-মা কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি।

ছোটবেলায় আমার আরেকটা স্মৃতি আছে প্রথম ট্রেন সেট পাওয়ার ঘটনা নিয়ে। যুদ্ধের সময় খেলনা বানানো হতো না। অন্তত দেশের বাজারের জন্য তো নয়ই। কিন্তু খেলনা ট্রেনের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল আমার। বাবা একবার আমাকে একটা কাঠের ট্রেন বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেটি আমার একটুও ভালো লাগেনি। কারণ, আমি এমন কিছু চেয়েছিলাম, যেটা নিজে নিজেই চলতে পারবে। কাজেই তিনি কোথা থেকে যেন একটা সেকেন্ডহ্যান্ড চাবিটানা ট্রেন পেয়েছিলেন। ট্রেনটা ঝালাইয়ে ঠিকঠাক করে এক বড়দিনে উপহার দিয়েছিলেন আমাকে। আমার বয়স তখন প্রায় তিন বছর। অবশ্য ট্রেনটা ঠিকমতো চলত না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরেই আমেরিকা গিয়েছিলেন বাবা। কুইন মেরিতে চড়ে ফিরে মায়ের জন্য কিছু নাইলন আনেন তিনি। সে সময় ব্রিটেনে নাইলন সহজলভ্য বস্তু ছিল না। মেরির জন্য এনেছিলেন একটা পুতুল। পুতুলটিকে শোয়ানো হলে সেটি চোখ বন্ধ করতে পারত। আমার জন্য বাবা এনেছিলেন একটা কাউক্যাচার ও আট ট্র্যাকের লাইনসহ একটা আমেরিকান ট্রেন। ট্রেনের বাক্স খোলার সেই রোমাঞ্চকর মুহূর্তটির কথা এখনো ভুলিনি আমি।

আমার ট্রেন সেটের সঙ্গে আমি

চাবিটানা ট্রেনটা বেশ ভালোই ছিল বলতে হবে। তবে সেটি পেলে তুমি হয়তো মুখ ফিরিয়ে নেবে। আমি আসলে ইলেকট্রিক ট্রেন চেয়েছিলাম। হাইগেটের কাছে ক্রাউচ এন্ডে আমি একটি মডেল রেলওয়ে ক্লাব লেআউট দেখে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দিতাম। ইলেকট্রিক ট্রেনের স্বপ্ন দেখতাম আমি। বাবা-মা দুজনেই একবার বাইরে গেলেন। সেই সুযোগে আমি পোস্ট অফিস ব্যাংক থেকে আমার জমানো সামান্য কটা টাকার পুরোই তুলে ফেলি। এই টাকাগুলো বড়দিনসহ বিভিন্ন বিশেষ দিনে আমি বড়দের কাছ থেকে পেয়েছিলাম। টাকাগুলো দিয়ে কিনে ফেললাম একটা ইলেকট্রিক ট্রেন সেট। কিন্তু এটিও তেমন ভালোভাবে চলত না দেখে হতাশ হয়েছিলাম। আমার উচিত ছিল ট্রেনটা ফেরত দিয়ে দোকানদার বা নির্মাতাদের কাছে ওটা পাল্টে দেওয়ার দাবি জানানো। কিন্তু তখনকার মনোভাব অনুযায়ী, কিছু কেনাতেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো। কেনার পর কোনো ত্রুটি পাওয়া গেলে সেটা নিতান্তই আপনার দুর্ভাগ্য। কাজেই ট্রেনের ইঞ্জিনের ইলেকট্রিক মোটর সারাইয়ের জন্য আমাকে আরও খরচ করতে হয়েছিল। কিন্তু তবু সেটি কখনোই ঠিকঠাক কাজ করেনি।

অনেক পরে, অর্থাৎ কৈশোরে মডেল বিমান আর নৌকা বানিয়েছিলাম আমি। অবশ্য এসব বানানোর ব্যাপারে আমার তেমন দক্ষতা ছিল না। আসলে এগুলো বানিয়েছিলাম আমার স্কুলের বন্ধু জন ম্যাকক্লিনাহানের সঙ্গে। এ ব্যাপারে তার যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। ওদের বাড়িতে ওর বাবার একটা ওয়ার্কশপ ছিল। আমার লক্ষ্য ছিল এমন কোনো কিছুর মডেল বানানো, যাকে আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। সেটি দেখতে কেমন হলো তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিল না। আমার ধারণা, এই একই তাড়না থেকেই আমার আরেকজন স্কুলবন্ধু রজার ফারনিহোর সঙ্গে খুবই জটিল বেশ কিছু খেলা আবিষ্কার করেছিলাম আমি। এর মধ্যে একটা নির্মাণবিষয়ক খেলা, যেখানে কিছু কারখানা থাকত, যার প্রতিটি ইউনিট বিভিন্ন রং দিয়ে বানানো হতো, যাতায়াতের জন্য থাকত রাস্তা, রেলপথ এবং একটা স্টক মার্কেট। এ ছাড়া একটা ছিল যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। চার হাজার বর্গবিশিষ্ট একটা বোর্ডে এটা খেলা হতো। এমনকি সামন্ততান্ত্রিক খেলাও ছিল, যেখানে প্রতিটি খেলোয়াড়ের একটা বংশতালিকাসহ পুরো রাজবংশ থাকত। আমার মনে হয়, ট্রেন, নৌকা আর বিমানের মতোই একটি তন্ত্র বা ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে এবং তাদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তা জানার তাড়না থেকেই এই খেলাগুলো মাথায় এসেছিল। আমি পিএইচডি শুরু করার পর এই প্রয়োজনটা মিটেছিল বিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্ববিষয়ক আমার গবেষণার মাধ্যমে। মহাবিশ্ব কীভাবে চলছে, সেটি বুঝতে পারলে কোনো এক উপায়ে তুমি তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।