রাসেলের দাদু

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

গ্রীষ্মকাল। স্কুল ছুটি। আমি, রাসেল, তপু আর তিনু মিলে বসে আছি আমাদের ছাদে। সবার হাতে একটা কাগজ আর কলম। গ্রীষ্মের ছুটি কীভাবে কাটানো যায়, তা লেখা নিয়ে ব্যস্ত সবাই। লেখা শেষে ভোটের মাধ্যমে নেওয়া হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। সবাই যখন লেখা নিয়ে ব্যস্ত, তখন বাঁদরের মতো মুখ করে বসে আছে রাসেল। জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল ব্যাপারটা। রাসেলের মা এবার কোথাও যেতে দেবে না ওকে। সামনের সপ্তাহে ওর দাদু আসবে। দাদুর শরীর বেশি ভালো নয়। তাই দাদুর দেখাশোনা করতে হবে রাসেলকেই। ঘটনা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল আমাদের। গ্রীষ্মের ছুটিটা এবার ঢাকায় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলাম সবাই।

পরদিন বিকেলে রাসেলের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। নিচে থেকে রাসেল বলে ডাকতেই বারান্দায় এসে ও বলল, খেলতে পারবে না। দাদুর অসুস্থতা বেড়েছে। তাই এক সপ্তাহ আগেই ঢাকায় চলে এসেছেন। দাদুকে দেখার জন্য আমরাও উঠলাম বাসার ওপরে। দাদুকে দেখে বেশ অবাক হলাম। শরীর মুষড়ে গেছে, কিন্তু মনোবল ভাঙতে দেননি এখনো। দিব্বি আড্ডা দিতে শুরু করলেন আমাদের সঙ্গে। আড্ডাটাও জমে উঠেছিল বেশ। বিকেলের আড্ডা ভাঙতে ভাঙতে রাত আটটা বেজে গেল। সেদিন থেকে রোজই বিকেলে রাসেলের দাদুর সঙ্গে আড্ডা দিতে যেতাম আমরা। একদিন এই রকমই আড্ডার মাঝে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলেন দাদু। রাসেলের আম্মু-আব্বু ঘরে ছিলেন না সেদিন। দাদুর অবস্থা দেখে খুব ভয় পেয়ে গেলাম আমি আর রাসেল। কিন্তু তিনু বুদ্ধিমানের মতো হাসপাতালে কল দিল। ডেকে পাঠাল অ্যাম্বুলেন্স। আমরা চারজন মিলে দাদুকে নিয়ে চলে গেলাম সেই হাসপাতালে। সেখানে পৌঁছানোর পর তিনুই সব খুলে বলল ডাক্তারকে। আর আমি জানালাম রাসেলের আম্মু-আব্বুকে। দ্রুত হাসপাতালে এলেন তাঁরা। যার যার বাসায় চলে গেলাম আমরা। সুস্থ হয়ে ফিরতে ফিরতে প্রায় ১০ দিন সময় লাগল দাদুর। তারপর আর কী, আমাদের আড্ডা যথারীতি চলতেই থাকল। আশা করি, এটা চলবে।