শত শিশু–কিশোরে মুখর জন্মদিনের আয়োজন

গতকাল বিকেলে প্রথম আলো কার্যালয়ের একাংশ ছিল কিশোর আলোর খুদে সদস্যদের দখলে।

কিশোর আলোর নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কেক কেটে উদ্‌যাপন করছে শিশু–কিশোরেরা। গতকাল কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

রাজধানীর ডেমরা থেকে আসা মর্তুজা কামালের একটু মন খারাপ ভাব ছিল। গতকাল শনিবার বিকেলে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে কিশোর আলোর নবম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে এসেছিল সে। উপস্থিত প্রায় এক শ শিশু–কিশোরের মধ্যে সে একটু চুপচাপ। কারণ, ওর পছন্দ কিশোর আলোর ‘ভূত’ সংখ্যা। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হতেই দেখা গেল, কবিতা আর গল্প পছন্দ করা খুদে পাঠকের দল ভারী। তবে মানসুরা মুবাশ্বিরার ‘গ্র্যানি’ (পুতুল) কথা বলতেই দেখা গেল সবাই নড়েচড়ে বসেছে। ঢাকা কিশোর আলো বুক ক্লাবের সদস্য মানসুরা মুবাশ্বিরা তাঁর পুতুলকে দিয়ে কথা বলিয়ে এরই মধ্যে দেশজুড়ে পরিচিত হয়েছেন। এই পুতুলের কাজ তীর্যক কথা বলে সামাজিক সচেতনতা তৈরি।

মর্তুজা কামাল বা মুবাশ্বিরার মতো শত শিশু–কিশোরের উপস্থিতিতে মুখর হয়েছিল কিশোর আলোর জন্মদিনের আয়োজন। বিশাল এক কেক কাটার দায়িত্ব ছিল এই শিশু-কিশোরদের। এর আগে ওরা যোগ দেয় প্রথম আলোর ‘ মিউজিক@ডেস্ক’ আয়োজনে। জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ঋতুরাজ ওদের উপস্থিতি দেখে গান গাওয়া শুরু করেন ‘আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে’। গানের অনুষ্ঠান শেষে ঋতুরাজও উপস্থিত হন শিশু-কিশোরদের সঙ্গে কিশোর আলোর জন্মদিনের উৎসবে।

কিশোর আলোর নবম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে খুদে সদস্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কিশোর আলোর লেখকেরাও। ছড়াকার রোমেন রায়হান, শেখ সালাহ্‌উদ্দীন আর লেখক ইসমাইল আরমান একে একে বললেন শিশুদের জন্য তাঁদের লেখার আনন্দের কথা। ইসমাইল আরমান বললেন, তাঁর বন্ধ হয়ে থাকা ‘অয়ন-জিমি’ সিরিজ আবার শুরু হয়েছে কিশোর আলোকে কেন্দ্র করে এই শিশু-কিশোরদের জন্যই। আজকের কিশোর আলোর সদস্যরাই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ। তাই তারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে জানালেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক সাজ্জাদ শরিফ, ছড়াকার আখতার হুসেন, প্রথম আলোর নিউ ইনিশিয়েটিভ প্রধান পল্লব মোহাইমেন।

আবৃত্তিশিল্পী মাহমুদা আখতার বললেন, তাঁর ভাতিজি সুমায়তা আজিজ মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাড়ির সবার প্রথম আলো পড়া দেখে পড়তে শিখেছিল। এখন সে কিশোর আলোর সদস্য।

অতিথিদের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর শুরু হয় কিশোর আলো বা কিআর খুদে সদস্যদের উপস্থাপনা। কিআর স্বেচ্ছাসেবক আরেফিন ফয়সালের ‘দূরন্ত পরবাসী’ গান দিয়ে শুরু হয় এ পর্বের আয়োজন। আবৃত্তি করেছে আরিফা। ভেন্ট্রিলোকুইজম (পুতুলের কথা বলা) পরিবেশন করে মানসুরা মুবাশ্বিরা।

এর আগে ভিডিও চিত্রের মধ্য দিয়ে প্রদর্শন করা হয় ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে সাফজয়ী নারী খেলোয়াড়দের নিয়ে কিআর জন্মদিন উদ্‌যাপনের দৃশ্য। কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক কলসিন্দুরে উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও চিত্রের পর আনিসুল হক মুঠোফোন কলের মাধ্যমে যুক্ত হন রাজধানীর উৎসবে। এসব আয়োজনের মাঝে শোনানো হয় কিশোর আলোর থিম সং। কিশোর আলোর একটি ভিডিও বিজ্ঞাপন দেখানো হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গীতিকার কবির বকুল, সংগীতশিল্পী নন্দিতা ও কিশোর আলোর সহকারী সম্পাদক আদনান মুকিতও। আয়োজনের শেষ দিকে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলেন কার্টুনিস্ট রাকিব রাজ্জাক ও নাইমুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কিশোর আলোর সহকারী সম্পাদক পাভেল মহিতুল আলম।

অনুষ্ঠানের বিরতিতে ছিল খাবারের আয়োজন। বি এ এফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রিনিক ফারিবাকে দেখা গেল ছোট হাতে খাবারের প্লেট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ সময় এগিয়ে এল ওর বড় বোন লামিস ফারিহা। একই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ফারিহা কিশোর আলোর একজন গল্প লেখক। ছোট্ট রিনিক এসেছে বোনের সঙ্গে।

কিশোর আলো ১ অক্টোবর ১০ বছরে পা রাখল। কিশোর আলোর সঙ্গে সঙ্গে বড় হচ্ছে এর খুদে সদস্যরাও। যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মুখ। এই সব আশ্চর্য উজ্জ্বল শিশু-কিশোরেরাই ‘কিশোর আলো’।