চিম্বুকে ভালুকের আক্রমণ: মানুষের সঙ্গে বনের সংঘাত
বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে আবারও ঘটেছে ভালুকের আক্রমণ। শুক্রবার সকালে পোড়াবাংলা পটোসিংপাড়ায় কাইনপ্রে ম্রো নামের এক ব্যক্তি জুমের কাজ করতে গিয়ে কালো রঙের এক ভালুকের হামলায় গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন জানান, তাঁর পেট ও মুখে গভীর ক্ষত হয়েছে। তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে বান্দরবান সদর হাসপাতাল, পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বন বিভাগের হিসাবে, ২০২১ সাল থেকে বান্দরবানের বিভিন্ন জায়গায় ভালুকের আক্রমণে ১০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই পাহাড়ের ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষ, যাঁরা বন ও পাহাড়ের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বন বিভাগ বলছে, প্রাকৃতিক বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় ভালুকেরা এখন মানুষের বসত ও জুমের কাছে চলে আসছে।
বাংলাদেশে কত ভালুক আছে
বাংলাদেশে দুটি প্রজাতির ভালুকের অস্তিত্ব আছে—
১. এশিয়ান ব্ল্যাক বেয়ার (Asian black bear)
২. মালয়ান সান বেয়ার (Malayan sun bear)
তবে এদের সংখ্যা খুবই কম। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ সংস্থার একটি গবেষণা (Cambridge University Press, Oryx Journal) অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ক্যামেরা ট্র্যাপে মাত্র ৪৩টি ব্ল্যাক বেয়ার শনাক্ত করা গেছে। সান বেয়ারের উপস্থিতিও ‘খুবই সংকটাপন্ন’ পর্যায়ে, এবং এখন আর সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলো, বিশেষ করে বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় কিছু ভালুক টিকে আছে বলে ধারণা করা হয়।
ভালুক কেন মানুষকে আক্রমণ করে
ভালুক সাধারণত শান্ত প্রাণী। তারা নিজের এলাকা বা ছানার নিরাপত্তা নিয়ে হুমকি অনুভব করলেই আক্রমণ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বন ধ্বংস, পাহাড় কেটে চাষাবাদ ও উদ্যান বাগানের কারণে ভালুকেরা তাদের স্বাভাবিক আবাস হারাচ্ছে।
বন বিভাগ বলছে, খাবারের খোঁজে তারা এখন মানুষের জুমখেত, কলাবাগান বা গ্রামসংলগ্ন এলাকায় ঢুকে পড়ছে। ভয় পেলে বা কোণঠাসা হলে তখনই ঘটে আক্রমণ।
ভালুক কি মাংস খায়?
ভালুক আসলে সর্বভুক (omnivore) প্রাণী।
তাদের প্রধান খাবার ফল, বাদাম, গাছের পাতা, মধু, পোকামাকড়, আর মাঝেমধ্যে ছোট প্রাণী বা মৃত পশুর মাংসও খায়। এশিয়ান ব্ল্যাক বেয়াররা বিশেষভাবে গাছের ফল, পোকামাকড়, মৌচাক আর বাঁশের কচি অংশ খেতে ভালোবাসে। মানুষকে তারা শিকার হিসেবে দেখে না—বরং ভয় বা হঠাৎ ধাক্কায় আত্মরক্ষার জন্যই আক্রমণ করে।
শেষ কথা
চিম্বুকের সাম্প্রতিক ঘটনাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—বনের প্রাণীরা এখন বিপদে; কারণ, তাদের বাসা, খাবার ও নিরাপত্তা হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ ও প্রাণী যদি নিজেদের সীমা না মানে, সংঘর্ষ আরও বাড়বে। বন রক্ষা করা মানে শুধু প্রাণীদের রক্ষা নয়, প্রকৃতির ভারসাম্যও রক্ষা করা।
সূত্র:
• প্রথম আলো, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
• Cambridge University Press, Oryx Journal, ‘Assessing the conservation status of Asiatic black bears and Malayan sun bears in Bangladesh’
• বাংলা উইকিপিডিয়া: ‘ভাল্লুক’
• The Business Standard: ‘What is the future of the bears in Bangladesh’