প্রায়শ্চিত্ত

অলংকরণ: আপন জোয়ার্দার

গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছি। খুব তাড়া আছে। তাড়াহুড়া করে বাসা থেকে বের হলাম। একটা জরুরি মিটিং আছে। বাসা থেকে প্রথমে সিএনজি নিয়ে যেতে হবে কদমপুরে। তারপর টেম্পোতে করে যাব সিকদারহাটে। সিকদারহাটে জরুরি প্রেস মিটিং। সকাল ১০টায় ফোন করে জানালেন হাসান ভাই। না জানি কিসের মিটিং! ভাবতে ভাবতে পকেটে হাত দিয়ে দেখি, আসার সময় পকেটে শুধু একটা ২০ টাকার নোট নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন তো আর বাসায় যাওয়া যাবে না। এদিকে একটা সিএনজিও এসে গেছে।

যা–ই হোক, সিএনজিতে উঠে পড়লাম। পথের দুই পাশের ধানখেতের সবুজ দৃশ্য দেখতে দেখতে কদমপুরে পৌঁছালাম। ১০ টাকা সিএনজিভাড়া। পকেট থেকে ২০ টাকার নোটটা ড্রাইভারকে দিলাম। দুটো ৫ টাকার নোট ফেরত দিলেন ড্রাইভার।

পকেটে পুরে তাড়াতাড়ি টেম্পোর জন্য রওনা দিলাম। সিকদারহাটে যেতে হবে। এদিকে হাসান ভাই ক্রমাগত ফোন করেই যাচ্ছেন। কথা বলে আশ্বস্ত করলাম, আমি টেম্পোতে।

সিকদারহাটে নেমে ড্রাইভারকে ভাড়া দেওয়ার জন্য পাঁচ টাকা বের করলাম পকেট থেকে। কিন্তু এ কী! পাঁচ টাকাটা পুরো ছেঁড়া। মাঝখানে স্কচটেপ দিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছে। বুঝলাম, এটা কদমপুর আসার পথে সিএনজি ড্রাইভারের কাজ। বাকি পাঁচ টাকার নোটটা বের করলাম। এটা অবশ্য ঠিকঠাক আছে। সেটা ড্রাইভারকে দিয়ে চলে এলাম।

কিন্তু এই ছেঁড়া পাঁচ টাকা কীভাবে ব্যবহার করব? টাকাটা ভালো থাকলে যাওয়ার সময় অন্তত কদমপুরে যাওয়া যেত। তারপর হেঁটে হেঁটে বাড়িতে পৌঁছানো যেত। কিন্তু কী আর করার!

সিএনজিটা গ্যারেজে রেখে গামছায় মুখ মুছল শফিক। তারপর পকেট থেকে আজকের কামানো টাকাগুলো বের করল। মোট ৫৫০ টাকা হয়েছে। টাকা গুনতে গুনতে এদিকে শফিকের মায়ের ফোন এল। মায়ের ওষুধ লাগবে।

ওষুধ কিনতে সব টাকা নিয়ে দোকানে গেল শফিক। দরকারি সব ওষুধ নেওয়ার পর বিল এল ঠিক ৫৫০ টাকা। দোকানদারকে টাকা দিয়ে ওষুধের প্যাকেটটা হাতে নেবে, এমন সময় দোকানদার তার হাতে ছেঁড়া নোট ধরিয়ে দিল। ১০ টাকার নোট। পুরোটা ছেঁড়া। মাঝখানে স্কচটেপ দিয়ে আটকানো। সিএনজি থেকে নামার পর কেউ হয়তো টাকার ভাঁজে গছিয়ে দিয়েছে।

১০ টাকার জন্য মায়ের ওষুধ কিনতে পারল না শফিক। একটা ছেঁড়া নোট তার পুরো দিনটাকে বিষাদে পরিণত করে দিল। মনে পড়ল, সে–ও এত দিন টাকার ভাঁজে এমন ছেঁড়া নোট দিত যাত্রীদের।