পলাতক কাজীদা

বাংলা রহস্য–সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ কাজী আনোয়ার হোসেন বারবার বলেছেন, ‘আমিই মাসুদ রানা’। নিজের অপূর্ণ অ্যাডভেঞ্চারের নেশা পূর্ণ করতে সৃষ্টি করেছিলেন বিখ্যাত স্পাই থ্রিলার ‘মাসুদ রানা’র। এই সিরিজের প্রথম বই ধ্বংস পাহাড় বাজারে আসার পর রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়ে যায় পাঠক সমাজে। তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি, প্রায় ৬০ বছর পেরিয়ে এসেও এখনো এর তুমুল জনপ্রিয়তা।

কী করেননি কাজী আনোয়ার হোসেন। বই লিখেছেন, সম্পাদনা করেছেন, সেবা প্রকাশনী গড়ে বিশ্বসাহিত্যের সেরা বইগুলো যেমন নিজে অনুবাদ করেছেন, শত শত লেখককে দিয়ে অনুবাদ করিয়েছেন। রহস্য পত্রিকা নামে তুমুল জনপ্রিয় এক পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন মৃত্যুর আগপর্যন্ত। সেই পত্রিকা আজও চলছে। কিশোর পাঠকদের জন্য একসময় কিশোর পত্রিকা নামে একটা ম্যাগাজিন বের করতেন। তবে কিশোরদের জন্য সেরা উপহার ছিল ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজ, যার জনপ্রিয়তা এখনো সমান। এই সিরিজের লেখক রকিব হাসান হলেও প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন।

ছোটবেলা থেকেই ভীষণ দুরন্ত ছিলেন তিনি। মনে অ্যাডভেঞ্চারের নেশা, কিন্তু বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে পড়া অত সহজ নয়। একবার প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় প্রথম পালালেন বাড়ি থেকে। রাস্তার এক টোকাইকে সঙ্গে নিয়ে উঠে পড়লেন ট্রেনে। বাড়িতে খোঁজ চলছে, কোথাও মিলছে না। বাবা কাজী মোতাহার হোসেন দিশাহারা। সারা দেশে পরিচিতজনদের জানিয়েছেন, ছেলেকে পেলে যেন তাঁকে খবর দেওয়া হয়।

পরদিন সকালে শিশু কাজীদাকে উদ্ধার করা হলো কুষ্টিয়া থেকে। এরপর নিয়মিত বাড়ি থেকে পালাতেন, কখনো ছোট ভাইকে নিয়ে, কখনো পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে। রহস্য সাহিত্যের পুরোধার তকমা যোগ্য লোকের কপালেই জুটেছে।