উল্কাবৃষ্টি দেখার এখনই সময়, কবে দেখবে, কীভাবে দেখবে

উল্কার ছবিছবি: ফ্রি এসি

রাতের বেলা হঠাৎ দেখা যায় আকাশ চিড়ে আগুনের মতো একটি রেখা ছুটে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেটা মিলিয়ে যায়। কেউ কেউ একে বলে ‘খসে পড়া তারা!’ কিন্তু আসলে সেটা তারা বা নক্ষত্র নয়, এর নাম উল্কা।

উল্কা আসলে কী

পৃথিবীর চারপাশে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে অসংখ্য ধূলিকণা, বরফের টুকরা আর ছোট ছোট পাথর। আরও থাকে ধূমকেতুর গা থেকে খসে পড়া অসংখ্য ছোট ছোট টুকরা।

পৃথিবী তার কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে মাঝেমধ্যেই ওই ধুলার রেখার মধ্যে ঢুকে পড়ে। তখন সেই টুকরাগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ে। তারপর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টানে প্রচণ্ড বেগে নেমে আসতে থাকে মাটির দিকে। এ সময় বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে প্রবল ঘর্ষণে ওই সব পাথরের টুকরা জ্বলে ওঠে আগুনের মতো। এই দৃশ্যই আমরা দেখতে পাই রাতের আকাশে। এ ঘটনাকে বলা হয় উল্কাপাত বা উল্কাবৃষ্টি।

যুক্তরাজ্যের ওয়াল্টশায়ার কাউন্টিতে অবস্থিত দুনিয়ার এক অমীমাংসিত রহস্যের নাম স্টোনহেঞ্জ, সেখানেই ধারণ করা হয়েছে এই উল্কাবৃষ্টির মুহূর্ত
ছবি: জস ডুরি/নাসা

প্রতিবছর কেন একই সময় উল্কাপাত দেখা যায়

পৃথিবী প্রতিবছর সূর্যের চারপাশে একই কক্ষপথে ঘুরছে। আর ধূমকেতুর ধুলার পথও প্রায় একই জায়গায় থাকে। তাই উল্কাবৃষ্টিও প্রতিবছর প্রায় একই সময়ে দেখা যায়। যেমন ওরিয়নিডস উল্কাপাত দেখা যায় অক্টোবর মাসে। আর লিওনিডস দেখা যায় নভেম্বরে। ওদিকে গেনিমিড দেখা যায় ডিসেম্বর মাসে।

এখন দেখা যাবে কোনটা

এখন অক্টোবর মাসের শেষ দিক। তাই ওরিয়নিডস (Orionids) উল্কাবৃষ্টি এখনো সক্রিয়। ওরিয়নিডস আসে বিখ্যাত হ্যালির ধূমকেতু থেকে।

এ উল্কাপাত সাধারণত প্রতিবছর ১৫ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ২০–২১ অক্টোবরের রাতে। কিন্তু আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখনো মাঝেমধ্যে আকাশে ঝলক দেখা যায়। ভাগ্য ভালো থাকলে সে দৃশ্য তোমার চোখেও ধরা পড়তে পারে। রাত দুইটা থেকে ভোর পাঁচটার মধ্যে, যদি শহরের আলো কম হয় আর আকাশ মেঘমুক্ত থাকে, তাহলে তুমি দেখতে পারবে উল্কার রেখা আকাশজুড়ে ছুটে যাচ্ছে।

তিউনিসিয়ায় উল্কাবৃষ্টি, ২০২২
ছবি: মাকরেম লারনাউত/নাসা

এরপর কবে দেখা যাবে

এর পরের বড় উল্কাবৃষ্টি হলো লিওনিডস (Leonids)। এসব উল্কা Tempel–Tuttle নামের এক ধূমকেতুর অংশ। সাধারণত প্রতিবছর ৬ থেকে ৩০ নভেম্বর এই উল্কাপাত দেখা যায়। সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে ১৭ নভেম্বরের ভোরে। এই উল্কাপাত দেখতে চাইলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারো।

উল্কাবৃষ্টি দেখার কিছু টিপস

উল্কা দেখার সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো যেখানে আলোক দূষণ সবচেয়ে কম। মানে যে জায়গায় রাতের বেলা কোনো কৃত্রিম আলো থাকে না বা একেবারে কম। ঢাকা শহরে রাতের বেলা কৃত্রিম আলোর বন্যা বয়ে যায়। তাই ঢাকা থেকে উল্কাপাত তত ভালো দেখা যায় না। ভালোভাবে দেখতে চাইলে যেতে হবে কোনো গ্রাম বা শহরের আশপাশের খোলা জায়গায়।

চিলির আতাকামা মরুভূমিতে লিরিড উল্কাবৃষ্টি, ২৭ এপ্রিল ২০১৭
ছবি: ইউরি বেলেতেস্কি/নাসা

উল্কাপাত দেখতে চাইলে আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখা দরকার:

শহরের আলো থেকে দূরে কোনো খোলা জায়গা বেছে নাও।

রাত দুইটা থেকে ভোর পর্যন্ত আকাশের দিকে তাকাও।

চোখকে অন্ধকারে মানিয়ে নিতে কিছু সময় দাও—২০ মিনিটের মতো আলো না দেখলে চোখ মানিয়ে নেয়।

টর্চ বা ফোনের আলো জ্বালাবে না।

একেবারে শুয়ে বা হেলান দিয়ে দেখলে সবচেয়ে আরামদায়কভাবে দেখা যায়।

তাহলে উল্কাপাত দেখতে চাইলে ক্যালেন্ডারে এখনই দাগ দিয়ে রাখো। নভেম্বরের মাঝামাঝি রাতে একবার ছাদে উঠে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখো প্রকৃতির অপূর্ব দৃশ্য।