মাই হবি ইজ গার্ডেনিং। দেয়ার ইজ আ ফ্লাওয়ার গার্ডেন ইন ফ্রন্ট অব মাই রিডিং রুম...এই এক ‘হবি—গার্ডেনিং’ নিয়ে ইংরেজি প্যারাগ্রাফ লিখতে গিয়ে কত যে কলম ছুটিয়েছ, তার কি কোনো হিসাব আছে? আসলেই কি তেমন কোনো গার্ডেন, মানে শখের বাগান আদৌ তোমার ছিল? নাকি পরীক্ষায় আসবে বলেই ঠাঠা মুখস্থ করেছ শুধু? আসো তাহলে, শুধু শাক দিয়ে মাছ না ঢেকে, মুখের কথায় আর লেখার ভাষায় শখ না মিটিয়ে আমরা বরং সত্যি সত্যি ছোটখাটো একটা বাগান করে ফেলি! হোক সে মাটি কুপিয়ে কিংবা স্রেফ ফুলের টবে।
গ্রামে আছ যারা
তোমরা যারা গ্রামে আছ, তোমাদের পড়ার ঘরের সামনে নিশ্চয়ই ফাঁকা জায়গা আছে? সেখানেই লাগাতে পারো তোমার প্রিয় সব রং–বাহারি ও সুবাস ছড়ানো ফুলের গাছ। এই যেমন: গোলাপ, বেলি, হাসনাহেনা, গন্ধরাজ, টগর, কসমস, ডালিয়া, সূর্যমুখী, গাদা, সন্ধ্যামালতী, পাথরকুচিসহ নানা রকম পাতাবাহার ইত্যাদি। পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে পেঁপে, পেয়ারা, ডালিম, কুল বা বরই, বিলম্ব, লেবু কিংবা কামরাঙার মতো ফলের গাছও। ভাত খেতে বসেই গাছ থেকে টুক করে পেড়ে আনলে লেবু কিংবা স্কুল থেকে ফিরেই কামড় বসালে কুল, বরই বা একখান পেয়ারায়! বেশ হয়, তাই না? হুমমম! এ ছাড়া বাড়ির বাইরে, পুকুরপাড়ে কিংবা বাড়ির শেষ সীমানায় লাগাতে পারো বর্ষায় ফোটা কামিনী, কদম; শরতের শিউলি, বসন্তের সুনালু কিংবা কৃষ্ণচূড়া, রাঁধাচূড়া—গাছগুলো আকারে বড় হয় কি না তাই।
নার্সারি থেকে চারা কিনে আনতে পারো, আনতে পারো বীজও। বীজ বপনের ক্ষেত্রে প্রথমে বীজ বপনের স্থানের মাটি ভালোভাবে কুপিয়ে ঝরঝরে করে নাও। মাটির সঙ্গে পচা গোবর বা মিশ্র সার মেশাতে পারো। চারপাশ থেকে বীজ বপনের স্থানটি একটু উঁচু হতে হবে, যাতে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে নিচে নেমে যেতে পারে। এবার নির্দিষ্ট দূরত্বে বীজ বপন করে হালকা পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দাও। বীজ ও চারা, উভয় ক্ষেত্রে অবশ্যই চারপাশে বেড়া দিয়ে নেবে, যাতে হাঁস-মুরগি কিংবা গরু-ছাগল কোনো ক্ষতি করতে না পারে। এ ক্ষেত্রে বড়দের সাহায্য নিতে পারো।
তোমরা যারা শহরের বাসিন্দা
ইট-কংক্রিটের শহরে তো আর তেমন সুযোগ নেই যে ইচ্ছে হলেই দু-একটা গাছের চারা পুঁতে দেবে! তা ছাড়া শহরে তোমরা অনেকেই আবার দুইতলা, তিনতলা কিংবা তারও ওপর তলার বাসিন্দা! পড়ার ঘরের সামনে বাতাস ছাড়া মাটি মেলে কোথায় যে বাগান করবে? সে ক্ষেত্রে ভরসা ফুলের টব, টবে লাগানো ‘রেডিমেট’ ফুটন্ত ফুলের চারা! ফলের বেলায়ও তা–ই, টবে লাগানো ‘রেডিমেট’ ফলের গাছ! তোমার শহরেই, তোমার আশপাশে একটু খুঁজলেই পাবে নার্সারির দেখা। সেখান থেকে আনতে পারো তোমার পছন্দের ফুল বা ফলের গাছটি।
তবে, তুমি বীজ বুনবে আর তা থেকে চারা গজাবে, বড় হবে এবং তোমার যত্নে গড়া গাছটা একসময় ফুল দেবে, সে যে কত আনন্দের! কী বলব, একটাবার চেষ্টা করেই দেখো না?
যা যা লাগবে
ব্যবহৃত পানি বা কোমল পানীয়র খালি বোতল। ফাটা বা ভাঙা মগ, জগ কিংবা রঙের ডিব্বা বা ড্রাম দিয়েও টব বানাতে পারো। মাটি; যদি মাটি না জোগাড় করতে পারো নিতে পারো বালু বা স্রেফ ফেলে দেওয়া চায়ের পাতা। কালি ফুরিয়ে যাওয়া কলম এবং ফুলের বীজ। বীজ হিসেবে বেছে নিতে পারো বছরজুড়ে ফুল দেয় এমন ফুলের বীজ, যেমন সন্ধ্যামালতী, অপরাজিতা ইত্যাদি।
চলো শুরু করি
১. প্রথমে একটা খালি বোতল নাও।
২. ছিপি খুলে ছবির মতো চ্যাপ্টা করে ধরো।
৩. এবং সে অবস্থাতেই দা দিয়ে বোতলের ওপরের অংশটি গোল করে কেটে ফেলে দাও। এ ক্ষেত্রে বড়দের সাহায্য নিতে পারো।
৪. এবার বোতলটি উপুড় করে রাখো ও কলম দিয়ে সাবধানে বোতলের নিচের অংশে কয়েকটি ছিদ্র করে নাও। ছিদ্র করা এ জন্য যেন চারার গোড়ায় পানি জমে না থাকে।
৫. এবার মাটি দিয়ে বোতল ভর্তি করো।
৬. চিকন কাঠি দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটি গর্ত করো।
৭. এবার বীজ ফেলো সেই গর্তে।
৮. আঙুলের সাহায্যে হালকাভাবে চাপ দিয়ে মাটি দিয়ে গর্তগুলো ভরাট করে নাও। হালকা পানি ছিটিয়ে দাও এবং পর্যাপ্ত রোদ পড়ে এমন জায়গায় রাখো। খেয়াল রাখবে, মাটি শুকিয়ে যেতে দেখলে হালকা পানি ছিটিয়ে দেবে। চারা গজিয়ে গেলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পানি দিতে হবে। অপরাজিতা লতানো ফুলগাছ, তাই দড়ি দিয়ে হালকাভাবে বেঁধে জড়িয়ে দিতে পারো জানালা বা বারান্দার লোহার রেলিংয়ে।
৯. দুই মাস না যেতেই দেখবে তোমাকে চমকে দিয়ে তোমার যত্নে বেড়ে ওঠা গাছে ফুল ফুটেছে! তখন আর তোমাকে পায় কে! তোমার আনন্দ তখন আকাশছোঁয়া? আব্বু-আম্মু, বন্ধুদের তোমার গাছের ফুল দিয়ে চমকে দিতে পারো। আরও যে কত কী করবে—ছবি তুলবে, সেলফি তুলবে, ফেসবুকে দিয়ে তাক লাগিয়ে দেবে সবাইকে!
তুমি তৈরি তো?
সবশেষ ছবিতে যে ফুটন্ত ফুলের গাছটি দেখছ, তা অপরাজিতা, আমারই লাগানো। পূর্ব রাজাবাজার, ঢাকা।