নীলের বিকেল

অলংকরণ: আপন জোয়ার্দার

ওই হারাম গেট ওই হারাম গেট!

যাত্রী নেওয়ার জন্য টেম্পোর ছোকরাটা জোরসে চেঁচাচ্ছে। নীল যাবে ফার্মগেটে। ভাবল, জায়গাটার নাম ফার্মগেট কেন? কিসের ফার্ম আছে সেখানে? মুরগি, গরু, নাকি ছাগলের?

অন্য কোনো নাম কি হওয়া যেত না? কোনো সুন্দর নাম? নীল মনে মনে জায়গটার নাম দিল মধ্যমণি। এখন থেকে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে, মধ্যমণি যাব। লোকগুলোর ভ্যাবাচেকা চেহারাগুলো নীল মনে মনে এঁকে নিল।

‘বাবা দুইডা ট্যাকা দিবা?’

একজন বৃদ্ধ মহিলার ডাকে নীলের ঘোর কাটল। কিছু না ভেবে পকেট থেকে চকচকে ৫০০ টাকার নোটটা বুড়িকে দিয়ে দিল। তৎক্ষণাৎ বুড়ির মুখটা ওই ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মানুষগুলোর মতো হয়ে গেল। হাসি পেল নীলের। মিষ্টি হেসে ঝুলে পড়ল একটা টেম্পোর পেছনে।

ফার্মগেট নেমে হাঁটতে লাগল নীল। যেতে যেতে কত মানুষ দেখা যায়। যাক, বের হওয়া সার্থক। নীল আজ বের হয়েছে মানুষ দেখতে। একেকটা মানুষ একেক ভাবে হাঁটে, হাসে, কথা বলে, কাঁদে। চোখের পলক কেউ পিটপিট করে ফেলে, কেউ ফেলে মিনিটে ২-৩ বার। হাতও সবাই এক রকমভাবে নাড়ায় না। কারোটায় থাকে ব্যস্ততা, কারোটায় অলসতা। কেউ হাসে বিরস হয়ে, কেউ আগ্রহ নিয়ে।

হঠাৎ নীল খেয়াল করল, সে একটি জলাশয়ের ধারে এসে পড়েছে। সেখানে গোলাপি শাপলা ফুটেছে। নীল গিয়ে বসল জলাশয়ের পাড়ে। একটা মাছরাঙা জলের দিকে শিকারি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। ঝোড়ো বাতাস বইছে। প্রকৃতি আজ মৃদঙ্গের তালে মেতেছে। পাগলা গাজন গলা ছেড়েছে। ঝড় আসবে। নীলের খুব ভালো লাগছিল। হঠাৎ মনে হলো, যদি পাশে কেউ থাকত? না, সে তো একাই ভালো আছে। কাউকে লাগবে না। একাই উপভোগ করবে।

সত্যিই বৃষ্টি নেমে গেল। নীলের নীল পাঞ্জাবিটা ভিজে যাচ্ছে। নীলের চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে বৃষ্টির পানিতে।

নীল মাছরাঙাটি তার লাল তলোয়ারের মতো ঠোঁটটি জলের দিকে তাক করে ছিল। নীল দেখল, মাছরাঙাটি একটি মাছের বুক এফোঁড়–ওফোঁড় করে আকাশে উড়ে হারিয়ে গেল।