ব্যর্থ আলুচাষি রবীন্দ্রনাথ

আঁকা: সব্যসাচী মিস্ত্রী

বিখ্যাত সাহিত্যিক দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, যাঁকে আমরা ডি এল রায় নামেও চিনি, তখন ছিলেন কুষ্টিয়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি আবার রবীন্দ্রনাথের বন্ধুও। প্রায়ই গড়াই নদ পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথের বাড়িতে তিনি হাজির হতেন দু-এক দিনের মেহমান হয়ে। রবীন্দ্রনাথ সে সময় শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে বিশাল এক বাগান করেছেন। সেই বাগান দেখেই জেগে উঠল ডি এল রায়ের কৃষিবিদ সত্তা।

ডি এল রায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার আগে ব্রিটিশ সরকারের বৃত্তি নিয়ে বিলেতে গিয়েছিলেন কৃষিবিদ হতে। ঠিকঠাকমতো সেই পড়াশোনা শেষ করে ফিরেও এলেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার তখনো ভারতে কৃষি প্রশাসন গড়ে তুলতে পারেনি। তাই ডি এল রায়কে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। রবীন্দ্রনাথের বাগান দেখে তিনি তাঁকে বাগানের এক কোনায় গোল আলু চাষের পরামর্শ দেন। এ দেশে সে সময় গোল আলুর চাষ সেভাবে শুরু হয়নি। তবু শিলাইদহের কয়েকজন চাষি আলুর চাষ করতেন। তাঁদের মধ্য থেকে রবীন্দ্রনাথ এক চাষিকে ডেকে পাঠালেন। তাঁর কাছ থেকে আলুর বীজ নিয়ে সেগুলো বপন করলেন ডি এল রায়ের ফর্মুলা অনুযায়ী। তখন ওই চাষি বললেন, ‘করছেন কী মশাই! এভাবে আলু লাগালে তো মাঠে মারা যাবে চাষ!’ রবীন্দ্রনাথের তখন শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা—একদিকে অভিজ্ঞ চাষি, অন্যদিকে ডিগ্রিধারী কৃষিবিদ, কার কথা শুনবেন।

শেষমেশ ডি এল রায়ের পরামর্শমতোই লাগানো হলো আলু। এরপর দেখা গেল, রবীন্দ্রনাথ যে পরিমাণ আলুর বীজ বপন করেছিলেন, সেটাই ফিরে আসেনি। সুতরাং চিরতরে সমাধি ঘটল আলুচাষি রবীন্দ্রনাথের।