রহস্য আর ডিটেকটিভ অ্যানিমে

ডিটেকটিভ কাহিনির আকর্ষণক্ষমতা প্রচণ্ড। মোটামুটি সব শ্রেণির পাঠক-দর্শককে আকৃষ্ট করে এসব কাহিনি। রহস্যের ছোঁয়া থেকে বাদ যায়নি অ্যানিমেও। জনপ্রিয় কিছু রহস্য আর ডিটেকটিভ অ্যানিমে নিয়ে এই লেখা।

মরিয়ার্টি দ্য প্যাট্রিয়ট

শার্লক হোমসের ভক্তরা হয়তো নাম পড়েই কিছুটা চমকে গেছ। ভ্রু কুঁচকে ভাবছ, ‘মরিয়ার্টি নামটি এখানে কেন?’ আসলে স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের লেখা সবচেয়ে আলোচিত উপন্যাস শার্লক হোমস: দ্য ফাইনাল প্রবলেম–এর সেই পাগলাটে অপরাধী ও গণিতবিদ প্রফেসর উইলিয়াম জেমস মরিয়ার্টিকে কেন্দ্র করেই ডালপালা ছড়ায় এই অ্যানিমের কাহিনি। সাধারণ এক কনসালট্যান্ট থেকে বদলে গিয়ে মরিয়ার্টি হয়ে যান পুরো লন্ডন কাঁপানো অজ্ঞাত অপরাধী। যে কিনা ধোঁকা দিয়েছে স্বয়ং শার্লককেও!

নোয়াটিক নামের বিশাল বিলাসী জাহাজে শার্লক হোমস ও প্রফেসর মরিয়ার্টির প্রথম সাক্ষাৎ। চলন্ত জাহাজেই একটা মার্ডার কেস থেকে শুরু। শার্লক হোমস, মরিয়ার্টি ও ব্ল্যাকমেইলিং কিং চার্লস অগাস্টাস মিলভার্টনের ত্রিমুখী যুদ্ধ। ফরাসি বিপ্লব সম্পর্কে ব্রিটিশ রাজপরিবার ও সরকারের রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য—সবকিছু নিয়ে দর্শকদের মধ্যে এক অসাধারণ রোমাঞ্চের জন্ম দেবে ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া দুই সিজনের এই অ্যানিমে সিরিজ। দেখতে দেখতে কেউ কেউ হয়তো ভবিষ্যদ্বাণী করবে যে মরিয়ার্টিকে কখনোই ধরতে পারবে না শার্লক। আরেক দল হয়তো চাইবে, শার্লক হোমস হাতেনাতে ধরুক উইলিয়াম মরিয়ার্টিকে। আর মজাটা এখানেই! লেখক আর্থার কোনান ডয়েলের উপন্যাসে মরিয়ার্টিকে শুধু এক অপরাধী হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু মরিয়ার্টি দ্য প্যাট্রিয়ট অ্যানিমেতে সে এক ভিন্ন আদর্শবাদী বিপ্লবী মানুষ। অভিজাত ব্যক্তিদের কাছে অপ্রকৃতিস্থ খুনি, কিন্তু সাধারণ দরিদ্র জনগণের কাছে তিনি ইংল্যান্ডের পথপ্রদর্শক রবিনহুড। ফাইনাল প্রবলেম উপন্যাসের কাহিনির সঙ্গে মিল না রাখায় আলোচনা-সমালোচনার শিকার হচ্ছে মরিয়ার্টি দ্য প্যাট্রিয়ট। পাশাপাশি সমাজের অসামাজিকতা, অসমতা ও শোষণের বিরুদ্ধাচারণ করায় প্রচুর প্রশংসায়ও ভাসছে অ্যানিমেটি।

হাইওকা

বন্ধুদের সঙ্গে রহস্যগল্প নিয়ে আলোচনা, মাঝেমধ্যে একটু-আধটু রহস্য সমাধান করতে কার না ইচ্ছা হয়! কিন্তু হওতারো ওরেকি ‘বন্ধুহীন’। হাইস্কুলে প্রথম পা দিয়েই সব ক্লাবের সদস্য হওয়ার আবেদন আগ্রাহ্য করে সে। বড় বোনের নির্দেশে যোগ দেয় ক্ল্যাসি‌কস ক্লাবে। বর্তমানে জাপানের স্কুলগুলোর অন্যান্য ক্লাবের মতো বিখ্যাত নয় ক্ল্যাসিকস ক্লাব। তবে আদর্শ ভাইয়ের মতো সে বোনের নির্দেশ পালন করে। উদ্দেশ্য একটাই, বন্ধু ফুবুকি সাতোশির সঙ্গে ক্ল্যাসিকস ক্লাবের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা।

স্কুলের প্রথম দিনে ক্লাবরুমে ঢুকতে না ঢুকতেই রহস্য। একে একে প্রকাশ পেতে থাকে স্কুলের রহস্যময় দিকগুলো। লাইব্রেরি, নোটিশ বোর্ড ও অডিটরিয়াম, সবখানেই ছড়িয়ে রয়েছে রহস্য। পার্টটাইম লাইব্রেরিয়ান, তাদেরই সহপাঠী মায়াকা ক্লাবে যোগ দেওয়ার পর চার বন্ধুতে শুরু হয় রহস্যগুলোর জট খোলা। কেন তাদের স্কুলের কালচারাল ফেস্টিভ্যালের নাম ‘কানয়া ফেস্টিভ্যাল’ হলো? চিতানদা-ই বা কেন এই ক্লাবে যোগ দিল? এসব অতি সাধারণ প্রশ্নের পেছনে অকল্পনীয় রহস্যগুলোর উত্তর খুঁজতে হাতড়ে বেড়াতে হয় ওদের। চিতানদা ও মায়াকার পাশাপাশি সাতোশির উৎসাহে ভাটা না পড়লেও গোয়েন্দার ভূমিকা পালন করে হওতারোই। মানুষের ভ্রান্ত ধারণাকে গুরুত্ব না দিয়ে যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে তৈরি হতে সাহায্য করবে ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া ২৩ পর্বের চমৎকার গ্রাফিকসের এই অ্যানিমে সিরিজ।

দ্য মিলিয়নিয়ার ডিটেকটিভ

টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের এক কর্মচারী ২৭ বছর বয়সী কাতো হারু। আরব আমিরাত থেকে জাপান সফরে আসা এক প্রিন্সের কারণে হঠাৎ করেই বদলে যায় হারুর সম্পূর্ণ নির্ঝঞ্ঝাট অ্যাডভেঞ্চারহীন জীবন। সহকর্মীদের সঙ্গে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রিন্সের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে। কিন্তু খুব দ্রুতই জটিল হয়ে পড়ে পরিস্থিতি। একটি চলন্ত ট্রাকে বোমা! ট্রাকের চালক জানেও না, কী ঘটতে চলেছে। এই চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যেই এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চে চাকরি পাওয়া দাইসুকে কাম্বের সঙ্গে দেখা হয় হারুর। কিন্তু ট্রাকটাকে যেভাবেই হোক থামিয়ে বোমা নিষ্ক্রিয় করতে হবে, না হলে নিমেষেই মারা যেতে পারে শত শত সাধারণ নাগরিক। দাইসুকের দুর্ঘটনায় পতিত গাড়ি নিয়ে ধাওয়া করা যাবে না, পরিস্থিতি এমন যে পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করলেও দেরি হয়ে যাবে। সমাধান একটাই, প্রিন্সের ৩০০ মিলিয়ন ইয়েনের স্পোর্টস কার! দাইসুকে কাম্বের আসল পরিচয় অবাক করবে দর্শকদের। ধীরে ধীরে সমাধান আসতে থাকে থাকে নানা প্রশ্নের। কে এই রহস্যময় ডিটেকটিভ কাম্বে? হারু আর কাম্বের অতীতটাই বা কী? সব প্রশ্নের উত্তর জানতে শেষ পর্যন্ত দেখতে হবে এই অ্যানিমে। মূলত কমেডি দিয়ে শুরু হলেও সিরিজটিতে রয়েছে অসাধারণ প্লট টুইস্ট আর মিউজিক। অ্যানিমেশনের মানও অসাধারণ। মাত্র ১১ পর্বের এই অ্যানিমে সিরিজ নতুন অ্যানিমে দর্শকদের জন্য আদর্শ।

বর্তমানে শোনেন ও ইসেকাই জনরার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ডিটেকটিভ অ্যানিমেও। ভিন্ন চিন্তাধারার জন্য সারা বিশ্বেই তুমুল জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ডিটেকটিভ অ্যানিমে। ওবাতা তাকেশি ও ওহবা সুগুমির লেখা ডেথনোটকেই সবচেয়ে টান টান ডিটেকটিভ অ্যানিমে ধরা হয়। তবে এই জনরার সবচেয়ে বিখ্যাত ১৯৯৬ সালে শুরু হওয়া ডিটেকটিভ কোনান। ৯৮৮ পর্বের অ্যানিমেটি এখনো চলছে। এমনকি এই অ্যানিমের নামে জাপানের তত্বরিতে ‘স্যান্ড ডুনস কোনান এয়ারপোর্ট’ নামের একটি বিমানবন্দরও আছে! এ ছাড়া অন্যান্য জনপ্রিয় ডিটেকটিভ ও রহস্য জনরার অ্যানিমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গসিক, আন-গো, সাইকিক ডিটেকটিভ ইয়াকুমো, বুঙ্গো স্ট্রে-ডগস এবং সাইকো পাস

লেখক: নবম শ্রেণি, কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চবিদালয়, কিশোরগঞ্জ