রুপালি পর্দায় ফুটবল

ফুটবল নিয়ে যে উন্মাদনা সারা বিশ্বে, আর কোনো খেলা নিয়ে তা হয় না। এই খেলা নিয়ে তাই উত্তেজনায় ভাসানো সিনেমা আছে অনেক। কী যে দারুণ সব সিনেমা বানানো হয়েছে ফুটবল নিয়ে, তা যারা দেখেনি তারা ধারণাও করতে পারবে না। এই যেমন ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া শাওলিন সকার সিনেমাটার কথাই ধরো। ফুটবল আর মার্শাল আর্টকে এক করে বানানো এই সিনেমা এতই মজার যে, হাসতে হাসতে তুমি মেঝেতে গড়াগড়ি খেতে বাধ্য। এ সিনেমার সিং নামের লোকটা রাস্তায় পড়ে থাকা জিনিসপত্র কুড়ায়। সেগুলো বিক্রি করেই কোনোমতে খেয়ে-না খেয়ে দিনাতিপাত করে। নিজেকে শাওলিন কুংফুর প্রশিক্ষক দাবি করে সে। সবাইকে শেখাতে চায় এই বিদ্যা। কিন্তু তাকে পাত্তাই দেয় না কেউ। সিংয়ের দাবি, শাওলিন কুংফুর আধ্যাত্মিক বিদ্যা কাজে লাগালে মানুষের জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু তার এই সহজ জীবনের অফারে কারও মনই মজে না! একদিন রাস্তায় তার সঙ্গে পরিচয় হয় ‘গোল্ডেন ফুট’ খ্যাত বিখ্যাত ফুটবলার ফাংয়ের সঙ্গে। তার দলের আরেক খেলোয়াড়ের ষড়যন্ত্রে এখন সে নিস্তেজ। সিংয়ের কুংফু দক্ষতা দেখে এই দক্ষতা ফুটবলে কাজে লাগানোর বুদ্ধি দেয় ফাং। ব্যাপারটা মনে ধরে সিংয়ের। সে রাজি হয় ফাংয়ের কাছে ফুটবল শিখতে। কিন্তু একা একা তো আর দল গঠন হয় না, দরকার আরও সদস্যের। খুঁজে পেতে সিং তার শাওলিন কুংফু শেখার টেম্পলের বাকি পাঁচ ‘শাওলিন ভাই’কে জোগাড় করে। ফাংয়ের তত্ত্বাবধানে চলে তাদের কুংফু মিক্সড ফুটবলের প্রশিক্ষণ। তারপর?

কুংফু আর ফুটবলের মিশেলে ‘টিম শাওলিন’ হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য এক ফুটবল দল। এই ফুটবল দলের নানা মজার মজার অসম্ভব সব কাণ্ড-কীর্তিতে মাততে হলে অবশ্যই দেখতে হবে স্টিফেন চাও পরিচালিত শাওলিন সকার সিনেমাটি।

ফুটবল নিয়ে আরেকটি মজাদার সিনেমা দ্য বিগ গ্রিন। ওয়াল্ট ডিজনি পিকচারের এই সিনেমা দেখতে বসলে কখন যে সময় কেটে যাবে, টেরই পাবে না। আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের এক কাল্পনিক শহর এলমা। এই শহরের একটা স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ইংল্যান্ড থেকে আসেন অ্যানা মন্টগোমেরি। স্কুলের কিছু বাচ্চার সঙ্গে মিশতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। কারণ, বাচ্চাদের বিশ্বাস, টেস্টে গোটা রাজ্যের মধ্যে সব থেকে কম মার্কস পেয়েই মারা যাবে তারা। অ্যানা আরও জানতে পারলেন, বাচ্চারা ভাবে দুনিয়ার সবকিছুই অতি তুচ্ছ। এ অবস্থায় বাচ্চাদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন এবং তাদের আগ্রহী করতে উদ্যোগ নিলেন তিনি। ভূগোল ক্লাসে কৌশলে পরিচয় করিয়ে দিলেন ফুটবল নামের এক খেলার সঙ্গে, যেটা বাচ্চাদের কাছে ছিল সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা। বাচ্চারাও আগ্রহ নিয়ে শিখতে শুরু করল ফুটবল। আর তাতেই শুরু হলো এক মজাদার গল্পের। সেই মজার গল্পে বুঁদ হতে চাইলে দেখতে হবে ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া দ্য বিগ গ্রিন সিনেমাটি।

এ তো গেল ফুটবল নিয়ে মজার সিনেমার কথা। এবার না হয় সিরিয়াস ধাঁচের কিছু সিনেমার গল্প বলি। লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দা সান্তিয়াগো মুনেজ। বাবার মালিগিরি ব্যবসায় সময় দেওয়ার পাশাপাশি একটা চায়নিজ রেস্তোরাঁয় খণ্ডকালীন চাকরি করে এই তরুণ। কিন্তু এসবের বাইরে তার একটাই স্বপ্ন—একজন পেশাদার ফুটবলার হওয়া। দারিদ্র্যের কারণে বড় কোথাও খেলার সুযোগ মিলছিল না সান্তিয়াগোর কপালে। একদিন হুট করেই এল সুযোগটা। স্থানীয় এক ক্লাবে খেলার সময় সে নজর কাড়ল গ্লেন ফয়ের। ইংলিশ ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেডের প্রাক্তন ফুটবলার গ্লেন। প্রতিভাবান ছেলেটাকে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের সঙ্গে একটা ট্রায়ালের সুযোগ করে দিতে চাইলেন তিনি। এ জন্য অবশ্যই ইংল্যান্ডে যেতে হবে সান্তিয়াগোকে। সান্তিয়াগো তার পুরোনো জুতোর ভেতর টাকা জমাতে শুরু করল। কিন্তু বাদ সাধল তার বাবা। সান্তিয়াগোর জমানো টাকা চোখে পড়তেই সেটা নিয়ে ট্রাক কেনার কাজে লাগাল তার বাবা। তার ধারণা, সান্তিয়াগোর ফুটবলার হওয়ার এই স্বপ্ন অর্থহীন। কিন্তু শেষমেশ ঠিকই ইংল্যান্ডে গেল সান্তিয়াগো। তারপরের কাহিনি জানতে হলে দেখতে হবে ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া গোল: দ্য ড্রিম বিগিনস সিনেমাটি। এই সিনেমার অবশ্য গোল ২: লিভিং দ্য ড্রিম (২০০৭) এবং গোল! ৩: টকিং অন দ্য ওয়ার্ল্ড (২০০৯) নামের আরও দুটো সিক্যুয়াল রয়েছে, চাইলে ওই দুটো সিনেমাও দেখে নিতে পারো।

এগুলোর বাইরেও ফুটবল নিয়ে সিনেমা দেশ-বিদেশে আরও অনেক রয়েছে। আমাদের দেশে ফুটবল নিয়ে একমাত্র সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০১০ সালে। ফেরদৌস, আরেফিন শুভ অভিনীত এই সিনেমার নাম ছিল জাগো। দর্শকমহলে বেশ সাড়া ফেলেছিল সিনেমাটি।

এ ছাড়া দেখতে পারো গোল্ডেন সুজ (২০১৫), কিকিং স্ক্রিমিং (২০০৫), গ্র্যাসি (২০০৭), অ্যাটলেটিকো স্যান প্যাঞ্চো (২০০১), সকার ডগ: দ্য মুভি (১৯৯৯), আফ্রিকা ইউনাইটেড (২০১০), এসকেপ টু ভিক্টরি (১৯৮১), দ্য মিরাকল অব বের্ন (২০০৩), হেরমানো (২০১০) ও হোয়েন স্যাটারডে কামস (১৯৯৬)।