ঈদের ছুটিতে দেখতে পারো যে অ্যানিমে

স্কুল, কলেজ বন্ধ। সামনেই ঈদ। সব মিলিয়ে দারুণ মজার একটা সময়। তোমরা যারা ঈদে গ্রামের বাড়ি যাবে, তাদের তো বেশ মজা। সবার সঙ্গে দেখা হবে। খেলাধুলা করতে করতে কীভাবে দিনশেষ হয়ে যাবে তার ঠিক নেই। কিন্তু যারা ঢাকাতেই থাকবে, তোমরাও তোমাদের সময়টা পরিবারের সঙ্গে বেশ আনন্দেই কাটাবে আশা করি।

এই অবসর সময়ে অনেকেরই পছন্দের তালিকায় থাকে অ্যানিমে দেখা। বাইরে ঘোরাঘুরি বা দাওয়াত পর্ব শেষে যখন একটু নিরিবিলি সময়ে পাও, তখন অ্যানিমে দেখতে পারো। তাই এবারের ঈদে তোমাদের ছুটিকে আরও মজার করে তুলতে পারে যেসব অ্যানিমে, সেগুলোর কথাই জানাব।

১. মাই হিরো অ্যাকাডেমিয়া

এমন এক পৃথিবীর কথা ভাবো, যেখানে অধিকাংশ মানুষের জন্ম হয় এক বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে—যাকে বলা হয় কোয়ার্ক (Quirk)। এই কোয়ার্কের কারণে কেউ উড়তে পারে, কেউ ছুটতে পারে অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে, আবার কেউ হাতের ইশারায় তৈরি করতে পারে আগুন। কমিক বুকের পাতায় আমরা যে জগৎ দেখি, ঠিক তেমনি এক দুনিয়া এটি। কিন্তু সেই পৃথিবীতে এমন এক শিশু জন্মায়, যার কোনো কোয়ার্কই নেই। লাখো অসাধারণ মানুষের ভিড়ে সে হয় সম্পূর্ণ সাধারণ। তবুও তার একটিই স্বপ্ন—পৃথিবীর সেরা হিরো হওয়ার।

‘মাই হিরো অ্যাকাডেমিয়া’ অ্যানিমের গল্প এমনই এক কিশোর ইজুকু মিডোরিয়াকে নিয়ে। কোনো কোয়ার্ক না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে সে সর্বকালের সেরা হিরো হয়ে ওঠে এবং সেই কোয়ার্কের জগতে নিজের স্থান করে নেয়, তা জানতে হলে তোমাকে দেখতে হবে ‘মাই হিরো অ্যাকাডেমিয়া’। তবে, এই কোয়ার্কের জগত যে শুধু শক্তিশালী হিরোদেরই এমন কিন্তু নয়, সেখানে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর সব ভিলেনও।

মাই হিরো অ্যাকাডেমিয়া অ্যানিমে সিরিজটি ২০১৬ সাল থাকে চলছে। এই সিরিজটির এখন পর্যন্ত ৭টি সিজন মুক্তি পেয়েছে। ৮ম সিজনটি ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। যা সম্ভবত সিরিজের শেষ সিজন হবে। ৭টি সিজন মিলে বর্তমানে ১৫৯টি এপিসোড রয়েছে। এর পাশাপাশি, কিছু মুভিও রয়েছে মূল সিরিজের অংশ হিসেবে। সিরিজটির আইএমডিবি রেটিং: ৮.২।

আরও পড়ুন

২. হান্টার X হান্টার

বিশ্বের ১০টি অ্যানিমের তালিকা করলে সামনের দিকে থাকবে হান্টার X হান্টার। সিরিজের গল্প এমন এক পৃথিবীকে নিয়ে যেখানে অ্যাডভেঞ্চারারদের বলা হয় হান্টার (Hunter)। এরা সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি, যাদের কাজ পৃথিবীর রহস্যময় কোণগুলো আবিষ্কার করা, দুর্লভ প্রাণী ও গুপ্তধন খুঁজে বের করা এবং অপরাধীদের বিচার করা। কিন্তু এই ‘হান্টার’ হওয়াটা মোটেই সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন অসাধারণ দক্ষতা, বুদ্ধি আর অদম্য মানসিক শক্তি।

‘হান্টার X হান্টার (Hunter x Hunter) অ্যানিমের গল্পটি মূলত গন ফ্রিকস নামের এক ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে। গনের বয়স যখন ১৩ বছর, তখন সে জানতে পারে তার বাবা জিন ফ্রিকস একজন কিংবদন্তী হান্টার। যিনি তাকে ছোটবেলায় ছেড়ে চলে গেছেন। গন সিদ্ধান্ত নেয় সেও হান্টার হবে এবং একসময় তার বাবাকে খুঁজে বের করবে। এখান থেকে শুরু হয় হান্টার X হান্টারের গল্প।

গন কি পারবে তার বাবাকে খুঁজে বের করতে? হান্টার হিসেবে সে কি তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে? এই অ্যানিমে তোমাকে নিয়ে যাবে এমন এক রোমাঞ্চকর জগতে যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে লুকিয়ে আছে নতুন চ্যালেঞ্জ, অসাধারণ কিছু মুহূর্ত আর অপ্রত্যাশিত জিনিসে। এই অ্যাডভেঞ্চার সিরিজ আরও রয়েছে বন্ধুত্ব, আত্মত্যাগ ও নিজের স্বপ্নের পেছনে ছোটার এক অসাধারণ গল্প।

হান্টার X হান্টার অ্যানিমে সিরিজটির দুটি ভার্সন মুক্তি পেয়েছে। প্রথম ভার্সনটি ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায় এবং এতে ৬২টি এপিসোড ছিল। এরপর ২০১১ সালে নতুন পুনর্নির্মিত এবং আরও বিস্তারিত ভার্সনটি মুক্তি পায়। এতে ১৪৮টি এপিসোড আছে, যা ২০১৪ সাল পর্যন্ত চলে। সিরিজটির আইএমডিবি রেটিং: ৯.০।

আরও পড়ুন

৩. ব্লু লক

জাপান জাতীয় ফুটবল দল যখন বিশ্বকাপ থেকে বাজেভাবে ছিটকে পড়ে, তখন দেশটির ফুটবল ফেডারেশন এক বিপ্লবী সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের লক্ষ্য এমন একজন স্ট্রাইকার তৈরি করা, যে একাই দলকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করতে পারবে। আর এই লক্ষ্য পূরণের জন্য তৈরি করা হয় এক অস্বাভাবিক ও কঠোর ট্রেনিং প্রোগ্রাম, যার নাম ‘ব্লু লক’ (Blue Lock)।

এই অ্যানিমের গল্পটি মূলত ইয়োইচি ইজাগি নামের এক কিশোরকে কেন্দ্র করে। ইজাগি একজন সাধারণ স্ট্রাইকার, যে নিজের যোগ্যতা নিয়ে দ্বিধায় ভোগে। কিন্তু ব্লু লকে প্রবেশ করার পর সে জানতে পারে যে, এখানে টিকে থাকতে হলে তাকে নিজের ইগোকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যেতে হবে। অন্যদের চেয়ে সেরা হওয়ার উন্মত্ত আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে।

ব্লু লকের এই বন্দিশিবিরে ৩০০ জন তরুণ স্ট্রাইকারকে একসঙ্গে রাখা হয়। এখানে টিকে থাকার একটাই নিয়ম—সবচেয়ে শক্তিশালী আর আত্মকেন্দ্রিক স্ট্রাইকাররাই কেবল পরের ধাপে যেতে পারবে, বাকিরা বাদ পড়বে। আর যারা বাদ যাবে তারা কখনও জাপানের হয়ে ফুটবল খেলতে পারবে না। খেলাধুলা নিয়ে যাদের আগ্রহ তাদের বেশ পছন্দ হবে। ইজাগি কি পারবে এই বিশ্বসেরা স্ট্রাইকারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে।

ব্লু লক অ্যানিমে সিরিজটি ২০২২ সাল থেকে চলছে। দুই সিজনে মোট ৩৮ টি পর্ব। ফুটবল ও প্রতিযোগিতার তীব্রতার জন্য ব্লু লক এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অ্যানিমে হিসেবে, এটি ২০২৪ সালের অ্যানিমে ট্রেন্ডিং অ্যাওয়ার্ডসে স্পোর্টস অ্যানিমে অব দ্য ইয়ার পুরস্কার জিতেছে। সিরিজটির আইএমডিবি রেটিং: ৮.১।

আরও পড়ুন

৪. স্পিরিটেড অ্যাওয়ে

জাপানি অ্যানিমেশন স্টুডিও ঘিবলির (Studio Ghibli) মাস্টারপিস বলা হয় ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে (Spirited Away)-কে। অ্যানিমে মুভিটি ২০০১ সালের। হায়াও মিয়াজাকি পরিচালিত এই মুভিটি একটি কিশোরী মেয়ের রহস্যময় অ্যাডভেঞ্চারের গল্প বলে, যা সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে ২ ঘণ্টা ৪ মিনিট।

ছবির মূল চরিত্র চিহিরো ওগিনো নামের ১০ বছর বয়সী একটি মেয়ে। সে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে নতুন বাড়িতে যাওয়ার পথে ঘটনাক্রমে একটি পরিত্যক্ত থিম পার্কের মতো দেখতে এক রহস্যময় সুড়ঙ্গে প্রবেশ করে। এই সুড়ঙ্গ তাদের নিয়ে যায় এক অদ্ভুত জগতে। চিহিরোকে এই রহস্যময় জগতে টিকে থাকার জন্য তার ভয়কে জয় করতে হয়, নতুন বন্ধু তৈরি করতে হয়।

এই মুভিটি জাপানের সংস্কৃতি, লোককথা ও পরিবেশ সচেতনতার এক চমৎকার মিশ্রণ। যা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়দেরই বেশ পছন্দের লাগবে। এর অ্যানিমেশন, গল্প ও চরিত্রগুলো এতটাই শক্তিশালী যে এটি ২০০৩ সালে অস্কারে সেরা অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্মের পুরস্কার জিতে নেয়। সিরিজটির আইএমডিবি রেটিং: ৮.৬।

আরও পড়ুন

৫. ওয়ান-পাঞ্চ ম্যান

একটা মাত্র ঘুষি। এই একটি ঘুষিই যথেষ্ট যেকোনো ভিলেনকে পরাস্ত করার জন্য। এমন অবিশ্বাস্য শক্তির অধিকারী এক হিরোর গল্প নিয়েই অ্যানিমে ‘ওয়ান-পাঞ্চ ম্যান’ (One-Punch Man)। এই অ্যানিমের মূল চরিত্র সাইতামা নামের একজন সাধারণ মানুষ। যে একসময় নিছক শখের বশেই হিরো হয়েছে। কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সে এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে তার একটি ঘুষিতেই সব প্রতিপক্ষ কুপোকাত হয়ে যায়। কিন্তু এই অতুলনীয় শক্তিই তার জন্য একঘেয়েমির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা কোনো লড়াইয়েই চ্যালেঞ্জ না পাওয়ায় একরকম হতাশায় ভোগে সাইতামা।

সিরিজটি সাইতামার এই একঘেয়েমি ভাঙার চেষ্টা, নতুন কোনো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের খোঁজ এবং একজন সত্যিকারের হিরো হিসেবে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার গল্প নিয়ে। তার পাশাপাশি রয়েছে তার সাইবর্গ শিষ্য জেনোস, যে সাইতামার শক্তি দেখে মুগ্ধ হয়ে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। ওয়ান-পাঞ্চ ম্যান মূলত একটি কমেডি-অ্যাকশন সিরিজ, যা সুপারহিরো জনরার প্রচলিত ধারণাগুলোকে অন্য ভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছে।

ওয়ান-পাঞ্চ ম্যান অ্যানিমে সিরিজটি প্রথম ২০১৫ সালে মুক্তি পায়। এই সিরিজটির এখন পর্যন্ত ২টি সিজন সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে প্রতিটি সিজনে ১২টি করে মোট ২৪টি এপিসোড রয়েছে। তৃতীয় সিজনটি ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। সিরিজটির আইএমডিবি রেটিং: ৮.৭।

আরও পড়ুন