অভিনেতা ফারুক আহমেদের লেখা— নুহাশপল্লীর ভূত
অনেকেই মনে করে নুহাশপল্লীতে ভূতেরা বিচরণ করে। সেখানে ভূতের আখড়া। এমন মনে করার কারণ হুমায়ূন ভাই। তিনি যখনই আড্ডায় বসতেন তখনই ভূত
নিয়ে কথা বলতেন। তিনি ভৌতিক, অলৌকিক, অতিলৌকিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, নুহাশপল্লীতে প্রচুর ভূত আছে। যেমন শিশু ভূত, মধ্য বয়সী ভূত, বৃদ্ধ ভূত নানান বয়সী ভূতের বসবাস এই নুহাশপল্লীতে। তোমরা রাতের বেলা একা বাইরে যাবে না। কেউ কেউ তার কথা বিশ্বাস করতো আবার অনেকেই বিশ্বাস করতো না। নুহাশপল্লীতে নতুন অভিনেতা আসলে তার সাথে তিনি ভূত বিষয়ে গল্প করতেন। প্রথমেই তিনি তাকে জিজ্ঞেস করতেন, তুমি কি ভূত বিশ্বাস করো? সে যদি বলতো, না স্যার, আমি ভূত বিশ্বাস করি না। তখন তিনি তাকে বলতেন, বাস্তবে ভূত দেখলে কি তুমি বিশ্বাস করবে? সে যদি বলতো, হ্যাঁ নিজের চোখে দেখলে ভূত বিশ্বাস করব। তখন হুমায়ূন ভাই বলতেন, ঠিক আছে আজ রাতে তোমাকে ভূত দেখাব। তিনি রাতের বেলা তাকে ভূত দেখাতেন। ভূত দেখানোর আগে তিনি তার সাথে ড্রয়িংরুমে বসে ভূতের আলাপ করতেন। তারপর অন্ধকারে তাদেরকে ভূত দেখাতে নিয়ে যেতেন।
একবার একটি মেয়ে এলো নুহাশপল্লীতে অভিনয় করতে। সে বলল, আমি ভূতে বিশ্বাস করি না। যথারীতি হুমায়ূন ভাই মেয়েটির সাথে ভূত বিষয়ে বিভিন্ন আলাপ করলেন। যাতে মেয়েটির মনের ভিতর ভূতের ভয় ঢুকে। তারপর মেয়েটিকে পুকুর পাড়ে নিয়ে গেলেন ভূত দেখাতে।
প্রোডাকশন বয় রাকিবকে আগেই বলা হলো, তুমি পুকুর পাড়ের বড়ো কদম গাছে উঠে বসে থাকো। আমরা যখন মেয়েটিকে নিয়ে পুকুর পাড়ে যাব তখন তুমি জোরে জোরে গাছ ঝাঁকাবে আর অট্টহাসি দিবে। তাতে মেয়েটি ভয় পাবে। ভূত বিশ্বাস করবে। নির্দিষ্ট গাছের নিচে যাওয়া মাত্রই রাকিব জোরে জোরে গাছ ঝাঁকাতে লাগল আর হাসতে লাগল। ভয়ে মেয়েটি চুপসে গেল। ভূতে বিশ্বাস করতে তার খুব বেশি সময় লাগল না। পুরো বিষয়টি ছিল হুমায়ূন ভাইয়ের পূর্ব পরিকল্পিত, সাজানো। আমার জানামতে, তিনি নিজেও ভূতে বিশ্বাস করতেন না। শুধু মজা করার জন্য এরকম ঘটনা মাঝে মাঝেই তিনি ঘটাতেন। এই কারণে প্রচলিত ছিল নুহাশপল্লীতে ভূত আছে।
অভিনেতা ফারুক আহমেদের 'আমার না বলা কথা' বই থেকে।