ই টি

পরিচালক | স্টিভেন স্পিলবার্গ
প্রথম প্রকাশ | ১৯৮২/ যুক্তরাষ্ট্র
ব্যাপ্তি | ১১৫ মিনিট
ধরন | বিজ্ঞান কল্পকাহিনি/ ফ্যান্টাসি/ অ্যাডভেঞ্চার

মার্কিন সমাজের স্বাভাবিক রীতিতেই বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। কিন্তু ছোট্ট ছেলেটির কী ভীষণ ক্ষতি হলো তার কিছুই টেরও পেলেন না তাঁরা। বাবা-মায়ের আদরবঞ্চিত নিঃসঙ্গ ছেলেটির শুরু হলো মন খারাপের সারা দিন। একা একা একঘেয়ে সময় তার কাটতেই চায় না। কারও সঙ্গে মিশতেও পারে না। হঠাৎ একদিন বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ফ্যান্টাসির জগতে ভেসে যায় ছেলেটি। নিজের মতো করে কাল্পনিক এক বন্ধু খুঁজে নেয় সে। তার সঙ্গেই চলে হাসি-কান্না আর সুখ-দুঃখের সব কথা। এভাবেই কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সেই ছেলেটি। কিন্তু একা বিড়বিড় করতে দেখে সবাই ভাবে, ছেলেটি শেষ পর্যন্ত পাগল হয়ে গেল নাকি!

ছোট্ট যে ছেলেটির কথা এতক্ষণ বললাম, তিনি আর কেউ নন, তিনি হলিউডের কালজয়ী চলচ্চিত্রনির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গ। জুরাসিক পার্কসহ স্পিলবার্গ অনেকগুলো বক্স অফিস হিট করা ছবি বানিয়েছেন, সে খবর তো সবাই জানো। কিন্তু এর বাইরে নিজের ছোট্টবেলার এ ঘটনা নিয়েও ছবি বানানোর ইচ্ছে ছিল তাঁর। শুটিংয়ের ফাঁকে একদিন স্ক্রিপ্টরাইটার মেলিসা ম্যাথিসনের সঙ্গে ভাবনাটা শেয়ার করেছিলেন স্পিলবার্গ। কয়েক সপ্তাহের মাথায় একটি স্ক্রিপ্ট লিখে আনলেন মেলিসা। সেটি কিছুটা কাটছাঁট করে স্পিলবার্গ বানালেন সর্বকালের সেরা কল্পকাহিনিনির্ভর মুভি ই টি—দ্য এক্সট্রা টেরিস্ট্রিয়াল। নিজের সেই কাল্পনিক বন্ধু হিসেবে ছবিতে রাখলেন পিচ্চি এক এলিয়েনকে।

স্পিলবার্গের ছোট্টবেলার ছায়া দেখা যাবে ই টি ছবিতে ইলিয়ট চরিত্রে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এক শহরতলিতে পরিবারের সঙ্গে বসবাসরত ১০ বছরের ইলিয়ট। সেও কারও সঙ্গে মিশতে পারে না। বড় এক ভাই আর ছোট এক বোন থাকলেও একা একাই থাকে সারা দিন। মন খারাপের এমন দিনেই ঘটল অবিশ্বাস্য এক ঘটনা। সেবার গাছের নমুনা জোগাড় করতে ক্যালিফোর্নিয়ায় জঙ্গলে নেমেছিল একদল এলিয়েন। কিন্তু ঘটনাক্রমে দলছুট হয়ে পড়ে পিচ্চি এক এলিয়েন। দিগিবদিক ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে সে আশ্রয় নেয় ইলিয়টদের বাড়ির পেছনের টুলশেডে।

পিচ্চি এলিয়েনটাকে প্রথমে আবিষ্কার করে ইলিয়ট। অদ্ভুত চেহারার প্রাণীটিকে দেখে শুরুতে ভীষণ ভয় পেয়ে যায় সে। তবে দুজনের গভীর বন্ধুত্ব হতেও সময় লাগে না। ইলিয়টই তার নাম দেয় ইটি। অনেকভাবে গোপন করার চেষ্টা করলেও ইলিয়টের ভাই মাইকেল আর বোন গ্রেটিও শিগগিরই জেনে যায় ইটির কথা। বাড়ির সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে শুরু করে তারা। এদিকে সরকারি গুপ্তচরেরাও পিচ্চি এলিয়েনকে খুঁজতে লেগে আছে জোঁকের মতো। অনেক চেষ্টার পরও এলিয়েনের কথা জানাজানি হয়ে যায়। ইলিয়টদের বাড়িতে হানা দিতে থাকে গোয়েন্দারা।

এরই মধ্যে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে ইলিয়ট। তাকে সুস্থ করতে নিজের ভেতরের অলৌকিক এক শক্তি ব্যবহার করে ইটি। কিন্তু তাতে নিজেই প্রায় মরমর হয়ে যায়। এখন ইটিকে বাঁচানোর একটাই উপায়, তাকে তার নভোযানে পৌঁছে দেওয়া। বন্ধুকে বাঁচাতে আর নভোযানে পৌঁছে দিতে মরিয়া চেষ্টা চালায় ইলিয়ট, মাইকেল আর গ্রেটি। কিন্তু একগাদা পুলিশ আর গোয়েন্দার চোখ ফাঁকি দিয়ে সেটি কি করা সম্ভব? উত্তর জানতে অ্যাডভেঞ্চার আর রোমাঞ্চে ভরপুর এই মুভিটি একবার দেখে নিতে পারো। দর্শক জরিপে এটিই সর্বকালের সেরা সায়েন্স ফিকশন মুভি। ১৯৮২ সালে এটি জিতে নেয় চারটি অস্কার। এ ছাড়া এর ঝুলিতে আছে গোল্ডেন গ্লোবসহ আরও অসংখ্য পুরস্কার।

(কিশোর আলোর জুলাই ২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত)