একঝাঁক আততায়ীর গল্প

হঠাৎ দুম করে বিস্ফোরণের শব্দ। সঙ্গে সঙ্গেই পৃথিবীবাসী দেখতে পেল পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের প্রায় অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে। সবাই যখন ভয়ে কাঁপছে, ঠিক তখনই সামনে এল সেই ঘাতক। গোলগাল মাথার হাস্যকর চেহারার নামহীন অদ্ভুত এক প্রাণী। তার দাবি—সে চাঁদকে ধ্বংস করেছে এবং ঠিক এক বছরের মাথায় পৃথিবীও নাকি শেষ করে ফেলবে। দেশের সামরিক সংস্থা ব্যর্থ হলো চোখের সামনে থাকা অদ্ভুত প্রাণীটিকে মেরে ফেলতে। হলদে রঙের গোলগাল অক্টোপাসের মতন দেখতে এই হন্তারক নিজেই দিল সমাধান। কোনোগিগাওকা জুনিয়র হাইস্কুল নামে শহরের নামকরা স্কুলের থ্রি-ই ক্লাসের একজন হোমরুম শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে চায় সে। কোনোগিগাওকা জুনিয়র হাইস্কুলের থ্রি-ই শাখাটি স্কুলের সবচেয়ে কম মেধাবীদের নিয়ে গঠিত। স্কুলের মূল ভবনে পড়ালেখা করতে দেওয়া হয় না তাদের, পাঠানো হয় পাহাড়ের ওপর ভাঙাচোরা পুরোনো স্কুল ভবনে। গোলগাল নাম-পরিচয়হীন অক্টোপাস জানাল, এক বছরের মধ্যেই তাকে হত্যা করার মতো উপযুক্ত করে গড়ে তুলবে ওই কিশোরদের! এমন অদ্ভুত গল্প নিয়ে শুরু হয় ‘অ্যাসাসিনেশন ক্লাসরুম’ নামের অ্যানিমের কাহিনি। বর্ণনা শুনে এই অদ্ভুত নামহীন গোলগাল দৈত্যটাকে যতটা ভয় লাগতে পারে, আদতে কোরো-সেনসেই একদমই নিরীহ একজন মানুষ। হ্যাঁ, মানুষই বটে। এক বিকৃত বৈজ্ঞানিক এক্সপেরিমেন্টের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত এই কোরো-সেনসেই আর ক্লাস থ্রি-ই এর শিক্ষার্থীদের নিয়েই এগিয়ে যায় অ্যানিমেটি। স্বভাবতই ক্লাসের কার্যক্রম এবং অন্য সব বিষয়ে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ভিন্ন চোখে দেখে সবাই। বেশ দুর্বল হিসেবে বিবেচনা করায় একাডেমিক সুবিধাও দেওয়া হয় না তাদের। কোরো-সেনসেই তাই ক্লাস থ্রি-ইকেই সবার সেরা করে গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ নেয়।পড়ালেখার পাশাপাশি চলতে থাকে তাদের নিজেদের শিক্ষককে ধ্বংস করার প্রশিক্ষণ।

এদিকে সরকার ঘোষণা করে, যেকোনো মূল্যেই হোক, কোরো-সেনসেইকে ধ্বংস করতে পারলে ১০ বিলিয়ন ডলার পাবে ধ্বংসকারী। তাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অনেকে খুন করতে চায় তাকে। এদিকে ক্লাস থ্রি-ইর হাতেই মারা যেতে চায় কোরো-সেনসেই। কাজেই তাকে অন্য আততায়ীদের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে যায় ক্লাস থ্রি-ইর শিক্ষার্থীদের জন্য। এক বছরে কোরো-সেনসেই প্রতিটা ছাত্রছাত্রীকে অনন্য করে তোলে। কম মেধাবী বলে অগ্রাহ্য করা কিশোরদের ভেতর থেকে প্রতিভা বের করে আনে। এদিকে এক বছর শেষ হয়ে আসছে। কোরো-সেনসেই প্রতিমুহূর্তে মনে করিয়ে দিচ্ছে সময় শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। পৃথিবী ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা। প্রচণ্ড গতি আর শক্তি ছাড়াও বেশ কিছু অদ্ভুত ক্ষমতার অধিকারী এই কোরো-সেনসেইকে ধ্বংস করার অভিনব উপায় খুঁজে বের করা, বারবার ব্যর্থ হয়েও সবাই মিলে চেষ্টা করা। এসব নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে কাহিনি। আদতে সায়েন্স ফিকশনের ধাঁচে তৈরি এই ‘অ্যাসাসিনেশন ক্লাসরুম’ অ্যানিমেটি। পুরোটা সময় তোমাকে আচ্ছন্ন করে রাখবে মজাদার সব ঘটনা আর সাসপেন্স। একই সঙ্গে দেবে প্রেরণাও। কীভাবে কোরো-সেনসেই পুরো স্কুলে সবার ভালোবাসার কেন্দ্রে পরিণত হয়, কিংবা হাবাগোবা দুর্বল নাগিসা প্রচণ্ড মানসিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে, খুনে স্বভাবের কারমা স্কুলের অন্যতম সেরা ছাত্র হিসেবে পরিচয় পায়। কখনো স্কুলের সেরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানো...সব মিলিয়ে দারুণ উত্তেজনা। আটচল্লিশ পর্বের অ্যানিমেটি দেখতে বসলে শেষ করে ওঠা দায়। প্রতিটি পর্বেই রয়েছে নতুন নতুন চমক। কে এই কোরো-সেনসেই, কেনই বা স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতে চায়, নিজেদের ভালোবাসার শিক্ষককে সত্যিকার অর্থেই খুন করতে পারবে কি না, আর খুন পৃথিবীকে বাঁচাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কী হলো—এসবের রহস্যের উদ্‌ঘাটন করতে সময় করে একবার দেখা যেতেই পারে ‘অ্যাসাসিনেশন ক্লাসরুম’।