গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইস

‘মাঝেমধ্যে একজন সুপারহিরো হওয়ার চেয়ে একজন বড় ভাই হওয়া বেশি ভালো।’ ভাইবোনের সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে গিয়ে এমনটাই বলেছিলেন বিখ্যাত লেখক মার্ক ব্রাউন। কখনো কখনো ঝগড়া, খুনসুটি আর মনোমালিন্য থাকলেও ভাইবোনের মধ্যে যে ভালোবাসা সবচেয়ে দৃঢ়, তারই একটি উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায় গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইস (জাপানিজে হোতারু নো হোকা) অ্যানিমেশন মুভিতে।

১৯৪৫ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। জীবনের নিরাপত্তা নেই কোথাও। জাপানের কোবে শহরে তখন শুরু হয় বোমা হামলা। সেইতা আর সেতসুকো নামের দুই ভাইবোন সে সময় মাকে নিয়ে কোবেতেই থাকত। বিমান হামলায় মারা যায় তাদের মা। অন্যদিকে সেনাবাহিনীতে থাকা তাদের বাবার সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছে না তারা। একের পর এক চিঠি লিখে যায় বাবার কাছে সেইতা। কিন্তু কোনোটারই জবাব পায় না সে। তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই আশ্রয় নিতে হয় তাদের আত্মীয়দের বাসায়। বিভিন্নভাবে সেখানে তারা অপমানিত হয়। তাই আত্মসম্মান রক্ষার্থে তারা শহর ছেড়ে আশ্রয় নেয় একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। শুরু হয়ে যায় সেইতা আর সেতসুকোর দুর্বিষহ জীবনযাপন। পদে পদে তারা সম্মুখীন হয় নানা বিপদের। কিন্তু কোনো বিপদই দমিয়ে রাখতে পারে না সেইতাকে। ছোট বোন সেতসুকোর জন্য নিজের জীবন ত্যাগ করে দিতেও সে যেন রাজি। ছোট বোনের জন্য সে কোনো সুপারহিরো থেকে কম কিছু নয়। বরং আরও বেশি কিছুই বলা যায়! বড় ভাইয়ের নাগাল ছাড়াও এক মুহূর্ত থাকতে পারে না সেতসুকো। এমন কঠিন সময়েও যখন তারা রাত জেগে জোনাকি পোকার ঝিকিমিকি উপভোগ করে, তখন যেন তাদের সব দুঃখ-কষ্ট ম্লান হয়ে যায়। জীবনের কঠিনতম বাধাগুলো একে অপরের হাত ধরে পার করতে চেয়েছিল তারা। যুদ্ধ অবস্থায় খাদ্য সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়লে তাদের জন্য খাদ্য সংগ্রহ অসম্ভব হয়ে পড়ে। ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছোট বোনটি। বোনকে বাঁচানোর জন্য চুরির মতো মহাপাপ করতেও পিছপা হয় না সেইতা।

শেষ পর্যন্ত দুই ভাইবোনের পরিণতি কী হয় তা জানতে দেখে ফেলো আকিয়ুকি নোহাকার আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইস মুভিটি। যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত মুভিগুলোর নাম বলতে গেলে অনেক ওপরেই থাকবে এটি। মুভিটি শুধু যুদ্ধের ভয়াবহতার শিকার হওয়া দুই শিশুর গল্পই নয় বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা, তৎকালীন অস্থিতিশীলতা আর ভাইবোনের সহানুভূতি ও আবেগের পরিচয়ও। মুভিটি বেশ পুরোনো হওয়ায় এর গ্রাফিকস খুব একটা উন্নত নয়। তবে তা সত্ত্বেও এর পরিপক্ব কাহিনি দেখে শিউরে উঠতে বাধ্য হবে তুমি। পাশাপাশি মুভিটি দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই তোমার চোখ ভিজিয়ে ফেলবে। এ ছাড়া মুভির চরিত্রগুলোর রেশও তোমার মধ্যে থেকে যাবে বেশ কিছুদিন। তাই দেরি না করে দেখে ফেলো গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইস। দেখার সময় সঙ্গে করে একটি টিস্যু বক্স নিয়ে বসতে ভুলো না যেন!