তারকাদের মজার ঘটনা

কবরী

সুতরাং সিনেমায় যখন কাজ শুরু করি, তখন আমি ছোটই ছিলাম। প্রথম দিন শুটিংয়ে পরিচালক সুভাষ দত্ত বললেন পেয়ারাগাছ থেকে পেয়ারা চুরি করতে। আমি তো গাছে ঠিকভাবে উঠতে পারি না। খুবই ভয়ে ভয়ে গাছে উঠছি। কিন্তু পেয়ারা প্রায় মগডালে। আমি উঠছি তো উঠছিই। এমন সময় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে গেলাম। পড়ে যাওয়ার পর দেখলাম, কেউ কাছে আসছে না। পরিচালক শট নিয়েই যাচ্ছে। পরে জানতে পারলাম, ইচ্ছে করে এমন গাছে চড়তে বলা হয়েছিল। গাছ থেকে লাফ দিতে বললে তো দিতাম না। সে কারণেই সুভাষ দত্ত এমন পরিকল্পনা করেছিলেন। পরে সবাই এটি নিয়ে খুব হাসাহাসি করেছে।

তাহসান

ঢাকার সেন্ট যোসেফ স্কুলে আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। পাশাপাশি ছায়ানটেও গান শিখি। সেই ছোট থেকে অবচেতন মনে কাজ করত যে আমি একদিন বড় গায়ক হব। দেশের মানুষ আমাকে গানের জন্য চিনবে। গানে পরিচিতি পাওয়ার জন্য সব ধরনের চেষ্টাও আমার মধ্যে ছিল। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্কুলে পড়া অবস্থায় আমি আমার এক বন্ধু শাকিবের কাছ থেকে খাতা টেনে নিয়ে একটা অটোগ্রাফ দিই। অটোগ্রাফ দেওয়ার পর শাকিবকে বলি, যত্ন করে খাতাটা তুলে রাখিস। একদিন না একদিন আমি অনেক বড় শিল্পী হব। তখন অটোগ্রাফের এই খাতা কাজে দেবে। বিষয়টি পরে যখন মনে হতো, আমার খুব হাসি পেত। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কিছুদিন আগে আমার সেই বন্ধুর সঙ্গে দেখা। সে আমাকে আমার স্কুলের জোর করে দেওয়া সেই অটোগ্রাফের কথা মনে করিয়ে দেয়। সে আমাকে বলে, তোর দেওয়া অটোগ্রাফের সেই খাতাটা আমি কিন্তু এখনো যত্ন করে রেখে দিয়েছি। আর একদিন আমি তা নিলামে তুলব...। হা হা হা

মৌসুমী

আমার ছোটবেলা কেটেছে খুলনায়। বয়স তখন পাঁচ কি ছয় বছর হবে। স্কুলজীবন। খুব দুষ্টুমি করতাম কিন্তু। প্রায় সময় বাড়ির পাশে কোথাও খেলতে গেলে সেখানে ঘুমিয়ে পড়তাম। আবার কখনো কখনো দুষ্টুমি করে বাড়ির পাশে কোথাও লুকিয়ে থাকতাম। আমার খোঁজে তখন বাড়ির সবাই অস্থির হয়ে যেত। চারদিকে মা খোঁজখবর শুরু করতেন। কিন্তু আমাকে তাঁরা কেউই খুঁজে পেতেন না। তারপর সন্ধ্যা গড়িয়ে যখন রাত হয়ে যেত, তখন বাড়ি ফিরে আসতাম। বাবা কিছু না বললেও মা খুব বকা দিতেন। এমনকি চড়থাপড়ও দিতেন। এর পরও আমি প্রায় একই ঘটনা ঘটিয়ে যেতাম। বিষয়গুলো এখন মনে হলে খুব হাসি পায়।

মেহজাবিন

আমি বড় হয়েছি দুবাইয়ে। বাবা ওখানে চাকরি করেন। এখন যদিও আমার জন্য মা ও ছোট ভাই বাংলাদেশে থাকেন। আমার গল্পটা ঈদের দিনের। তখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি। সেবারই প্রথম সালোয়ার-কামিজ পরব। সব মিলিয়ে খুব উত্তেজনা আমার। দুবাইয়ে এক দরজির দোকানে সালোয়ার-কামিজ বানাতে দিয়েছিলেন মা। কিন্তু সেখানে এতই ভিড় ছিল যে ঈদের দিন ভোরে দরজি সেই পোশাক দিলেন আমাকে। সারা রাত আমি জেগে ছিলাম। যা-ই হোক, সকালে গোসল করে নতুন পোশাক পরলাম। নাশতা খেয়ে প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়াতে গেলাম। ক্লান্ত লাগছিল। বাড়িতে ফিরে দুপুরের দিকে মা-বাবাসহ ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাত্ আমার ঘুম ভেঙে গেল। নিজের দিকে তাকাতেই কান্না পেয়ে গেল। আমার এত শখের ঈদের জামা ভাঁজ হয়ে গেছে। এখন কী করব। বিকেলে কীভাবে এই জামা পরে বাইরে যাব। নিজে কাপড় ইস্তিরি করতে পারি না। ভাবলাম, চেষ্টা করে দেখলে ক্ষতি কী? যেই ভাবা সেই কাজ। ইস্তিরি গরম করে যেই না কামিজের ওপর রাখলাম, সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে গেল। সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল। তবে ছোটবেলার মজার গল্পের কথা মনে করলে এটাই মনে পড়ে।

নোবেল

আমি তখন নবম শ্রেণিতে চট্টগ্রাম গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে পড়ি। এটি ছেলেদের স্কুল ছিল। ভট্টাচার্য নামে আমাদের একজন স্যার ছিলেন। তাঁর কাছে আমরা বিজ্ঞান বিভাগের সব বিষয় বাসায় গিয়ে পড়াতাম। স্যারের কাছে আমরা ছাড়া আরও কয়েকজন মেয়ে পড়ত। ফলে স্যারের কাছে পড়তে যাওয়ার আগে বেশ ফিটফাট হয়ে যেতাম। অনেক সময় বাবার সুগন্ধিও ব্যবহার করতাম। স্কুলে থাকা অবস্থায় আমি কিন্তু খুব চাপা স্বভাবের ছিলাম। খুব সহজে মেয়েদের সঙ্গে মিশতাম না। সাইফুল নামে আমার একজন বন্ধু ছিল। সে আবার মেয়েদের সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যেতে পারত। তার বাসায় মেয়েবন্ধুদের যাওয়া-আসার ব্যাপারটি খুব স্বাভাবিক ছিল। এর মধ্যে একদিন শিল্পী নামের আমাদের একজন বন্ধু সাইফুলকে বলে, আমরা প্রায়ই তোমার (সাইফুলের) বাসায় যাই, এবার কিন্তু আদিলের (আমার ডাক নাম) বাসায় যাব। তাত্ক্ষণিকভাবে বিষয়টিতে হ্যাঁ বললে পরক্ষণে আমার কলিজা শুকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। আমার পরিবার যতটা না বাসায় মেয়েদের যাওয়ার ব্যাপার নিয়ে রক্ষণশীল ছিল, তার চেয়ে আমি আরও বেশি রক্ষণশীল ছিলাম। এর মধ্যে একদিন সাইফুল জানাল, শিল্পীসহ তারা আমার বাসায় আসছে। বাসার কাউকে না বলে, আমি বাসা থেকে উধাও হয়ে যাই। বন্ধুদের মধ্যে সবাই পরে বিষয়টি জানতে পারলেও শিল্পী এই ব্যাপারটি জানত না। শিল্পী এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। বছর দু-এক আগে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর শিল্পীর সঙ্গে দেখা হয়। তখন তাকে এই গল্প বলি।

অনন্ত জলিল

আমার নাম নিয়েই একটা মজার ঘটনা আছে। কাছের মানুষেরা আমাকে সঞ্জু নামে ডাকত। এম এ জলিল অনন্ত নামটা আমার ছিল না। তখন ঢাকার ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলে পড়তাম। খুব দুষ্টু ছিলাম। ঠিকমতো লেখাপড়া করতাম না বলে বাবা আমার জন্য একজন গৃহশিক্ষক রেখে দিলেন। সেই শিক্ষকের নাম ছিল এম এ জলিল। তিনি ভদ্র, অমায়িক একজন ব্যক্তি। স্যারের ব্যক্তিত্ব বাবাকে এতটাই মুগ্ধ করে যে আমার সঞ্জু নাম বদলে বাবা স্যারের এম এ জলিল নামটাই রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন। নামটা পছন্দ না হওয়ায় আমি খুব কান্নাকাটি করেছিলাম। কিন্তু বাবা ওসব পাত্তা না দিয়ে আকিকা করে রাখলেন নতুন নাম। আমার মন খারাপ দেখে বড় ভাই আমার নতুন একটা ডাকনাম দিলেন—অনন্ত। তিনি বলেন যে, এই নামে একদিন আমাকে সবাই চিনবে, ভালোবাসবে। ভাইয়ের কথায় আমি আশ্বস্ত হই। সেই থেকে আমি এম এ জলিল অনন্ত নামে বেড়ে উঠেছি। আর বড় ভাইয়ের কথাও আজ সত্যি হয়েছে।

আরিফিন শুভ

ছোটবেলায় খুব বই পড়ার অভ্যাস ছিল আমার। গল্পের বই তো পড়তামই, এমনকি পাঠ্যবইও গল্পের বইয়ের মতো পড়তাম। তখন পঞ্চম শ্রেণিতে মাত্র উঠেছি। নতুন পাঠ্যবই পড়া শুরু করেছি। কিন্তু এত বই কেন? বই পড়ে শেষ করতে পারছি না। মায়ের কাছে গেলাম। বললাম, এ বছর আমার এত বই। পড়েই শেষ করতে পারছি না। মা অবাক হয়ে আমার ঘরে এসে দেখলেন, আমি নিজের বই তো পড়েছিই। এমনকি আমার বড় ভাইয়ের ক্লাসের বইগুলোও পড়ে ফেলেছি। বাড়ির সবাই এটা নিয়ে খুব মজা করেছিল।

(কিশোর আলোর অক্টোবর ২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত)