দ্য গুড ডাইনোসর

পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওতে তার কর্মীরা যা খুশি খেতে খেতে কাজ করতে পারেন। ইচ্ছা করলে নিজের কাজের জায়গাটুকু নিজের মতো করে সাজাতে পারেন তাঁরা। সেটা যদি ভিন গ্রহের স্পেস শিপ কিংবা আইসক্রিমওয়ালার ভ্যানের মতো হয় তাতেও সমস্যা নেই! নিজের ভুবনে বসে এই কর্মীরা তাই যেসব অ্যানিমেশন বানান সেটা যে অসাধারণ হবে তা বলতে সবজান্তা শমসের হওয়ার প্রয়োজন নেই!

এ পিক্সার আমাদের ঘুরিয়ে এনেছে খেলনাদের অদ্ভুত জীবন আর পোকামাকড়ের সংগ্রামের জগৎ থেকে। তাদের কারণে সুপারহিরো ও রোবটদের আবেগী ভালোবাসাও কারও অজানা নয়। সেই পিক্সার এবার দ্য গুড ডাইনোসর সিনেমায় ঘুরিয়ে আনছে কয়েক মিলিয়ন বছরের পুরোনো পৃথিবী থেকে।

প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে উল্কার আঘাতে পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গিয়েছিল ডাইনোসররা। কিন্তু সেই উল্কা যদি পৃথিবীতে আঘাত না করে পাশ কাটিয়ে যেত, তবে কেমন হতো? তেমনই এক পৃথিবীর গল্প নিয়েই দ্য গুড ডাইনোসর-এর কাহিনি।

এপাটোসরাস গোত্রের ডাইনোসর হেনরি ও তার স্ত্রী ইডা। তারা বাস করে নিজেদের খামারের পাশের এক কুঁড়েতে। বেশ সুখেই ছিল তারা। একদিন তাদের ঘরে ডিম ফুটে জন্ম নিল বাক, লিবি আর আরলো নামের তিন সন্তান। সবচেয়ে বড় ডিমটা ফুটে বের হলেও অন্য দুই ভাইয়ের থেকে একেবারেই দুর্বল আরলো। এ জন্য দুই ভাই খামারে গুরুত্বপূর্ণ কাজের সুযোগ পেলেও আরলোর জুটল মুরগিকে খাবার দেওয়ার কাজ! এ কাজেই যত আপত্তি আরলোর! কারণ সে যখনই মুরগিকে খাবার দিতে যায়, তখনই কোনো না কোনো ঝামেলা পাকিয়ে ফেলে সে। তাতে তার কপালে জোটে মুরগির দলের ঠোকর! ভাইদের টিটকারি তো ছিলই। রোজ রোজ কার এসব ভালো লাগে?

খামারের ফসল শীতকালে ব্যবহারের জন্য গুদামে জমাতে শুরু করে আরলোর পরিবার। খামারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় মা-বাবার পাশাপাশি বাক ও লিবি গুদামের দেয়ালে নিজেদের পায়ের ছাপ বসানোর সুযোগ পায়। কিন্তু বঞ্চিত হয় আরলো। বাবা সাফ জানিয়ে দেন, বড় কিছু করতে পারলে তবেই এ সুযোগ পাওয়া যাবে। আরলো তাই বড় কিছু করার সুযোগ খুঁজতে থাকে।

গুদামের ফসল বুনো জন্তুর হাত থেকে রক্ষায় পাহারার কাজ পায় আরলো। গুদামের আশপাশে ফাঁদ পাতা হয়। একদিন ফাঁদে ধরা পড়ে এক বাচ্চা গুহামানব। কিন্তু আরলো তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। তাতে ভীষণ রেগে যান বাবা। তখনই পায়ের ছাপ দেখে পিছু নেন ফসলচোর গুহামানবের। হঠাৎ আকাশ কালো করে নামে বৃষ্টি। সঙ্গে কলজে-কাঁপানো তুফান। এ ঝড়-তুফানে আরলো পায়ে ব্যথা পাওয়ায় বাবা ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। বৃষ্টির তোড়ে নদীতে প্রচণ্ড স্রোত ধেয়ে আসে হঠাৎ। আরলোকে বাঁচাতে গিয়ে স্রোতে ভেসে মারা যায় বাবা। সঙ্গে ভেসে যায় তাদের সব সুখটুকুও!

এরপর একদিন গুদামের ভেতর সেই বাচ্চা গুহামানবকে আবিষ্কার করে আরলো। মাথা গরম হয়ে যায় তার। বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে বাচ্চাটাকে ধাওয়া করে আরলো। ধস্তাধস্তির সময় দুজন নদীতে পড়ে যায়। পাথরের ধাক্কায় জ্ঞান হারায় আরলো। জ্ঞান ফিরে নিজেকে আবিষ্কার করে অচেনা এক জায়গায় সে। বাড়ি থেকে অনেক দূরে! সেই অচেনা ভয়ংকর এলাকা থেকে একা একাই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় সে। কিন্তু দুর্গম বন পেরিয়ে বাড়ি ফেরা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। পদে পদে বিপদ সেখানে! তবুও বাড়ি ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে আরলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে কি পেরেছিল বাড়ি ফিরতে? গুদামের দেয়ালে সব থেকে উঁচুতে পায়ের ছাপ বসাতে পেরেছিল? এসব উত্তর পাবে দ্য গুড ডাইনোসর-এ! সেই উত্তর জানলে পরীক্ষায় ১০ মার্কস বেশি না পেলেও বেশ মজা পাবে নিশ্চিত।

(কিশোর আলোর নভেম্বর ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত)