ফাইন্ডিং নিমো

মাছের মায়ের পুত্রশোক বলে বাংলায় এক প্রবাদ আছে। প্রবাদ অনুযায়ী, ব্যাঙের যেমন সর্দি হয় না, তেমনি মেছো মায়েদের পুত্রশোক নাকি অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে কি মেছো মায়েরা তাদের সন্তানদের আদর-যত্ন বা স্নেহ করে না? আলবত করে। শুনতে অবিশ্বাস্য শোনাবে, শুধু মায়েরাই নয়, সন্তানদের আদর-যত্ন আর দায়িত্ব পালনে কম যায় না মেছো বাবারাও। অবশ্য এ রকম যত্নবান বাবাদের উদাহরণ প্রাণিজগতে একেবারেই হাতে গোনা।

নীল সাগরতলে এমনই এক বাবা ছিল মার্লিন। সে আসলে এক ক্লাউন ফিশ। অস্ট্রেলিয়ার সাগরতীরের গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের কথা তো জানোই তোমরা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই প্রবাল প্রাচীরের কাছেই বাবার সঙ্গেই থাকত দুষ্টু, চঞ্চল নিমো। মাকে অনেক আগেই হারিয়েছে সে। তাই বাবাই তার সবকিছু। একদিন বাবার সঙ্গে স্কুলে গেছে নিমো। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টুমি করতে গিয়ে সে ধরা পড়ে এক জালে। তাকে বন্দী করে নিয়ে যায় সেই অসাধু মানুষ।

একমাত্র সন্তান হারিয়ে শোকে দুঃখে প্রায় পাথর হয়ে যায় বাবা মার্লিন। তবে একটু পরেই বুঝতে পারে, কেঁদে বুক ভাসিয়ে লাভ নেই। ছেলেকে উদ্ধারের চেষ্টা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। নিমোকে উদ্ধার করতে রওনা হয় মার্লিন। পথে যেতে যেতে তার সঙ্গে পরিচয় হয় ডরি নামের এক বাচাল মাছের। সব শুনে মার্লিনকে স্বেচ্ছায় সাহায্য করতে রাজি হয়ে যায় ডরি। কিন্তু ডরি একে তো বাচাল, তারপর আবার ভীষণ মনভোলা। খুব অল্প সময়েই আগের কথা যায় ভুলে। তাতে শুরু হয় আরেক ঝামেলা। তার ওপর আবার ভয়ংকর সব হাঙরের আক্রমণ। পদে পদে বিপদ আর বাধা আসতেই থাকে। তবু হাল ছাড়ে না বাবা মার্লিন। কিন্তু মানুষের কাছ থেকে একটা পুঁচকে মাছের পক্ষে নিজের সন্তানকে কি উদ্ধার করা সম্ভব! সে উত্তর জানা যাবে ছবির শেষে।

ওয়াল্ট ডিজনি আর পিক্সার স্টুডিও যৌথভাবে নির্মাণ করেছে ছবিটি। ছবির গল্প লিখেছেন অ্যান্ড্রু স্টানটন। পরিচালনাও তাঁর। ২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়ার পর বিশ্বের লাখো দর্শকের মন জিতে নিয়েছিল ফাইন্ডিং নিমো। সে বছর সবচেয়ে সুন্দর অ্যানিমেশনের জন্য অ্যাকাডেমিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল ফাইন্ডিং নিমো। আবার আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে বেস্ট পিকচার, ন্যাশনাল বোর্ড রিভিউ ও টরন্টো ফিল্ম ক্রিটিক্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে পেয়ে যায় বেস্ট অ্যানিমেশন অ্যাওয়ার্ড। অন্যদিকে মার্কিন ফিল্ম ইনস্টিটিউটের তালিকায় সর্বকালের সেরা ১০টি অ্যানিমেশন ছবির তালিকায় জায়গা দখল করেছে বক্স অফিস হিট করা ফাইন্ডিং নিমো

প্রায় বিশ বছর আগের বানানো হলেও ছবিটি যে কারও ভালো লাগবে, এটা চোখ বন্ধ করেই বলা যায়।