বছর শুরুর জনপ্রিয় অ্যানিমে

২০২০ সালে করোনাভাইরাস অতিমারি দেখা দেওয়ার পরও এ বছর মুক্তি পাওয়া নতুন অ্যানিমে সিরিজ ও মুভিগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সমানে। রেকর্ড ভাঙাগড়ার বিশাল যে যজ্ঞ শুরু হয়েছে, তা কোথায় গিয়ে থামবে, এখনই বলা যাচ্ছে না। অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুটা সময়। ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে বেশ কয়েকটি অ্যানিমে সিরিজ ও মুভি। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা কয়েকটি সিরিজ নিয়ে এই লেখা।

অ্যাটাক অন টাইটান

এমন একটা পৃথিবীর কথা কল্পনা করো, যেখানে কেবল তিন দেয়ালের এক সীমানার মধ্যে মানুষের বাস। এর বাইরে যাওয়া তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ, বাইরে গেলেই ঘটতে পারে নির্মম মৃত্যু। জায়গা হতে পারে টাইটানের পেটে। টাইটান দেখতে মানুষের মতোই। বিশাল বিশাল আকৃতির এসব দানব প্রাণীর খাবার হলো মানুষ।

এরেন ইয়েগার, যাকে কেন্দ্র করে অ্যানিমে সিরিজটি শুরু হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, এরেন যখন ছোট ছিল, তখন দেয়াল ভেঙে টাইটান প্রবেশ করে এরেনদের শহরে। চোখের সামনে নির্মম মৃত্যু হয় এরেনের মায়ের, যা থেকে এরেনের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে টাইটানদের মোকাবিলা করা ও মানবজাতিকে রক্ষা করা। আর এ জন্যই একসময় সে যোগ দেয় স্কাউটসে, যারা দেয়ালের বাইরে টাইটানদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে সক্ষম।

অ্যাটাক অন টাইটান–এর একদম শুরুর দিকের গল্প। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই সিরিজের প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি ছোট ছোট ঘটনার মধ্যে রহস্য লুকিয়ে আছে। কারা এই টাইটান, উৎপত্তি কোথায়, কেনই–বা মানুষের জন্য এই বড় বড় দেয়াল বানানো কিংবা এই দেয়ালের মধ্যেই শুধু মানুষেরই বাস কি না, নানা প্রশ্নের উত্তর পেতে দেখে ফেলতে হবে সিরিজটি।

এখন পর্যন্ত অ্যাটাক অন টাইটান–এর তিন সিজন মুক্তি পেয়েছে। পেয়েছে বিশাল জনপ্রিয়তাও। বর্তমানে সিরিজটির শেষ ও ফাইনাল সিজনের প্রথম পর্ব মুক্তি পাচ্ছে। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া শুরু হয় এ পর্বের এপিসোডগুলোর। যখন লিখছি, তখন পর্যন্ত অ্যানিমেটির ১১তম এপিসোডটি মুক্তি পেয়েছে। আর বলতেই হয়, এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলা করছে অ্যানিমের এই সিজন। যারা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অ্যানিমেটি দেখে ফেলেছে, তাদের কাছে অন্যতম সেরা সিরিজের তালিকায় জায়গা পেয়েছে এবারের সিজন। কারণ, এর অ্যানিমেশন কোয়ালিটি ও ডিটেইলিং কাজ নিয়ে আছে আলাদা রকম প্রশংসা। সিরিজটির শেষ সিজনের দ্বিতীয় পর্ব মুক্তি পাবে ২০২২ সালে।

জুজুৎসু কাইসেন

জুজুৎসু কাইসেন–এর দুনিয়ায় সব জীবিত প্রাণীর মধ্যে ‘কার্সড এনার্জি’ নামে একধরনের এনার্জি প্রবাহিত হয়। শরীরে তা নেগেটিভ ইমোশন থেকে জেগে ওঠে। সাধারণ মানুষ এই প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। জুজুৎসু সরসেরারস (কার্সড টেকনিক মাস্টার্স বা শামানস) এই শক্তিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং নিজেদের মতো তা ব্যবহার করতে পারে।

জুজুৎসু কাইসেন–এর প্রথম কয়েকটি এপিসোড দেখে মনে হবে, এই অ্যানিমে তুমি হাজারবার দেখেছ। ইউজি ইতাদোরিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্লটে ইউজির ভূমিকা বেশ শক্তিশালী হলেও সে কিছুটা ক্লুলেস। ঘটনাক্রমে সে এমন এক দুনিয়ায় প্রবেশ করে, যেখানে বিপজ্জনক সব জন্তুর সঙ্গে তাকে লড়াই করতে হয়, যারা কার্সেস নামে পরিচিত। রিওমেন সুকুনা নামের এক শক্তিশালী কার্সকে মারার জন্য হাইস্কুলের ছাত্র ইউজি যোগ দেয় এক সিক্রেট অর্গানাইজেশনে।

২৪ এপিসোডের সিরিজটি মুক্তি পাওয়া শুরু হয় গত বছরের ৩ অক্টোবর। অ্যানিমেটি কম সময়ে এত বেশি জনপ্রিয়তা পাওয়ার অন্যতম কারণ সলিড আর ফ্লুয়েড অ্যানিমেশন, অসাধারণ ফাইট সিন, ওপেনিং, স্মার্ট ডায়ালগ, সহজে বোঝার মতো প্লট, অতিরঞ্জিত করা মজাদার চরিত্র ইত্যাদি। মাত্র এক এপিসোডেই জুজুৎসু কাইসেন এসব ধরনের কোয়ালিটি দেখিয়ে দিয়েছে। পরবর্তী সময়ে যারা দেখবে, পরবর্তী হিট শোনেনের সাক্ষী হতে যাচ্ছ।

সেলস অ্যাট ওয়ার্ক!

আয়েশ করে দেখতে চাইলে এখনই দেখে ফেলতে পারো সেলস অ্যাট ওয়ার্ক! অ্যানিমেটি। মানুষের দেহে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন অ্যানথ্রোপোমোরফিক কোষ বা সেল নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে দেহকে সুস্থ রাখার জন্য। আর এই সেলগুলোকে মানুষরূপে দেখিয়েই এই অ্যানিমের কাহিনি দাঁড় করানো হয়েছে। সিরিজে মূলত ফোকাস করা হয় দুটি সেলের ওপর, একটা রুকি ব্লাড সেল ‘এই৩৮০৩’, যে মাঝেমধ্যেই ডেলিভারি দিতে দেরি করে ফেলে। আর আছে হোয়াইট ব্লাড সেল ‘ইউ-১১৪৬’, যে জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

এরিথ্রোসাইট বা লোহিত রক্তকণিকার কথা অনেকেই জানো। অ্যানিমেতে রেড ব্লাড সেলটি আসলে লোহিত রক্তকণিকা। সেলস অ্যাট ওয়ার্ক!–এ যাকে একটি মেয়ে হিসেবে দেখানো হয় (এই৩৮০৩)। গল্পে রেড ব্লাড সেল সবে কাজ শুরু করেছে বডিতে। তার কাজ অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও পুষ্টিগুণ সারা দেহে পৌঁছে দেওয়া। এমন এক ডেলিভারিতেই তার দেখা হয় নিউট্রোফিল বা শ্বেত রক্তকণিকার সঙ্গে (ইউ-১১৪৬)। শ্বেত রক্তকণিকা এক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে তাকে রক্ষা করে।

দেহের মধ্যকার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোষের কাজগুলো নিখুঁত ও সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই সিরিজে। সম্প্রতি মুক্তি পেতে শুরু করেছে সিরিজটির দ্বিতীয় সিজন।