মাটিল্ডা

পরিচালক: ড্যানি ডিভিটো
কাহিনি: রোয়াল্ড ডাল
প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৬
ভাষা: ইংরেজি

কোনো কিছু স্বাভাবিকের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম হলে মানুষ তাকে সহজে মেনে নিতে পারে না। যেমনটি ঘটেছিল দূরদেশের ছোট্ট মেয়ে মাটিল্ডার কপালে। স্বাভাবিক শিশুদের চেয়ে ও ছিল একেবারেই আলাদা। তার মধ্যে ব্যতিক্রমী প্রতিভা আর মেধার আঁচ পাওয়া গিয়েছিল ছোট্টবেলাতেই। কিন্তু মেয়ের এত সব গুণ মানতে পারেননি মাটিল্ডার বাবা-মা মি. আর মিসেস ওয়ার্মউড। তাই শুরু থেকেই তাদের অবহেলা জুটেছিল মাটিল্ডার ভাগ্যে। বাবা ছিলেন পুরোনো গাড়ির বিক্রেতা। লোক ঠকিয়ে টাকার পাহাড় গড়েছিলেন তিনি। আর ক্লাব, রূপচর্চা নিয়ে সারা দিন বাইরে ব্যস্ত থাকতেন মা। বড় ভাইটিও স্কুলে। সারা দিন ছোট্ট মেয়েটি বাসায় একা বন্দী।

কিন্তু সহজাত ক্ষমতা আর কঠোর চেষ্টায় নিজেই অনেক কিছু শিখে ফেলে মাটিল্ডা। যে বয়সে খেলনা পুতুল নিয়ে পড়ে থাকার কথা, সেই বয়সেই নিজে নিজে রান্না করতে আর বই পড়তে শেখে সে। ক্রমেই বই পড়ার অদম্য আকর্ষণ তৈরি হয় তার। বাড়ির সব বই শেষ করে আরও বইয়ের খোঁজে সে একাই ছোটে পাড়ার লাইব্রেরিতে। পুঁচকে মেয়েকে দেখে একেবারে হাঁ বুড়ো লাইব্রেরিয়ান। আরও অবাক হন তার বই পড়ার প্রতি গভীর আগ্রহ দেখে। মাটিল্ডাকে একগাদা বই বেছে দেন তিনি।

সেগুলো বাড়ি এনে মজা করে পড়তে শুরু করে মাটিল্ডা। তবে ওয়ার্মউড পরিবার বই পড়া সহ্য করতে পারে না। তাদের একমাত্র বিনোদন রাতে খেতে খেতে টিভিতে বস্তাপচা সিরিয়াল দেখা। মাটিল্ডার বই পড়া দেখে বাবা-মা বুঝতে পারলেন, মেয়ে উচ্ছন্নে গেছে! এক রাতে বাড়ির নিয়ম ভেঙে বইয়ে মুখ ডুবিয়ে বসে ছিল মাটিল্ডা। টিভির সিরিয়াল দেখার চেয়ে কী বই পড়া বড়! তাই সহ্য করতে পারলেন না মি. ওয়ার্মউড। মাটিল্ডার হাত থেকে বই ছিনিয়ে নিয়ে কুটি কুটি করে ছিঁড়ে ফেললেন বাবা। রাগে-দুঃখে মাটিল্ডা কী করবে বুঝতে পারল না। বাবার নির্দেশমতো বাধ্য হয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকতে হলো তাকে। ঠিক এ সময়েই মাথায় এক অন্য রকম শক্তি অনুভব করল মাটিল্ডা। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সামনের টেলিভিশন সশব্দে বিস্ফোরিত হলো। সবাই হাঁ! মাটিল্ডা নিজেই অবাক। নিজের ভেতর অদ্ভুত এক শক্তি সম্পর্কে সেদিনই প্রথম জানতে পারল সে।

মেয়েকে শায়েস্তা করতেই স্কুলে ভর্তি করা হলো। স্কুলের ত্রাস প্রধান শিক্ষিকা বিশালদেহী মিস ত্রাঞ্চবুল। পান থেকে চুন খসলেই কঠোর শাস্তি জোটে ছেলেমেয়েদের। তাই স্কুলে শুরুতে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠল মাটিল্ডার। তবে ক্লাসটিচার মিস হানির সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর জীবনে প্রথম একটা নির্ভরযোগ্য আশ্রয় জুটল তার। একসময় সে জানতে পারল, মিস হানিকে ঠকিয়ে কীভাবে তাঁর বাড়িঘর দখল নিয়েছেন ত্রাঞ্চবুল। খুব শিগগির মিস ত্রাঞ্চবুলের কুনজরে পড়ে মাটিল্ডা, মিস হানি আর ক্লাসের নিরীহ ছেলেমেয়েরা। তাদের শায়েস্তা করতে ছক কষেন তিনি। এ সময় নিজের শক্তি আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করে মাটিল্ডা। ত্রাঞ্চবুলকে পাল্টা শাস্তি দিয়ে মিস হানির বাড়িঘর উদ্ধার অভিযানে নামে সে। শুরু হয় এক রুদ্ধশ্বাস আর রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার। একের পর এক অলৌকিক কাণ্ডে দিশেহারা হয়ে যান ত্রাঞ্চবুল। কম যান না এককালের কুস্তিগির ত্রাঞ্চবুলও। শক্ত আঘাত হানার প্রস্তুতি নেন তিনিও। তারপর? সেটি জানতে দেখতে পারো মাটিল্ডা ছবিটি।

বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক রোয়াল্ড ডালের উপন্যাস অবলম্বনে বানানো মাটিল্ডা দেখতে গিয়ে কখনো হো হো হাসিতে ফেটে পড়তে বাধ্য হবে। কখনো চোখ ছানাবড়া করে ভাবতে বসবে, এ রকমও হয় নাকি! দারুণ রোমাঞ্চে কখনো খাড়া হয়ে যাবে মাথার চুল, কাঁটা দেবে গায়ের লোম। মাটিল্ডা ছবিটি একটু পুরোনো হলেও হতাশ হতে হবে না, এটুকু নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।