রূপকথাতে কল্পগাথা!

ছোটবেলায় ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঘুম ঘুম চোখে মা বা বাবার মুখে রূপকথার গল্প শুনতে কে না ভালোবাসত? আর তুমি যদি আমার মতো গল্পপাগল হও, তাহলে তো কথাই নেই! দুঃসাহসী রাজপুত্তুর, চিরল দাঁতের চিকন পাটি, খুনখুনে ডাইনি, ঘুমন্ত রাজকন্যা, মন্ত্রবলে শূন্য হয়ে যাওয়া রাজপ্রাসাদ—গল্প শুনতে শুনতে দৃশ্যগুলো যেন মনের আয়নায় জ্যান্ত হয়ে উঠত!

চাইলেই কিন্তু তুমি তোমার সেই কল্পনার সঙ্গে রূপকথার জগৎটা মিলিয়ে নিতে পারো। কীভাবে? খুব সোজা।

রূপকথার গল্প নিয়ে বানানো ছবি দেখে! রূপকথার আশ্চর্য গল্প নিয়ে এখন পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে অসংখ্য চলচ্চিত্র। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিও, যারা প্রাচীন রূপকথার গল্পে নির্মাণ করেছে অদ্ভুত সুন্দর সব ছবি!

জনপ্রিয় রূপকথার মধ্যে প্রথম সারিতেই আসবে সিন্ডারেলার নাম। এক সিন্ডারেলার গল্প নিয়েই এ পর্যন্ত যতগুলো ছবি হয়েছে, আর কোনো রূপকথার গল্প নিয়ে তা হয়নি। তবে ওয়াল্ট ডিজনির ১৯৫০ সালের অ্যানিমেটেড ক্ল্যাসিক সিন্ডারেলা-ই এখনো সেরা। ওয়াল্ট ডিজনি নিজেই একবার বলেছিলেন তাঁর সবচেয়ে পছন্দের রাজকন্যা হচ্ছে সিন্ডারেলা।

ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিওর আরেকটি জনপ্রিয় ক্ল্যাসিক হচ্ছে ১৯৫৯ সালে নির্মিত স্লিপিং বিউটি। ঘুমন্ত রাজকন্যা অরোরার গল্প, ডাইনি ম্যালফিসেন্টের জাদুতে ১৬ বছরে পা পড়তেই যে চিরদিনের জন্য ঘুমের দেশে চলে যায়। ২০১৪ সালে ম্যালফিসেন্টকে নিয়েও ডিজনি স্টুডিও আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে, ম্যালফিসেন্ট নাম দিয়েই।

লম্বা চুলের রাজকন্যা রুপানজেলকে তো মনে আছে? ডাইনি যাকে ছোটবেলাতেই চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল? সেই রুপানজেলকে নিয়ে মজার ছবি হচ্ছে ট্যাঙ্গেলড। মুকুটচোর ফ্লিন রাইডার, সৈন্য ঘোড়া ম্যাক্সিমাস, পোষা গিরগিটি প্যাসকাল আর ঘর পালানো রুপানজেলের গল্পটা দেখলে ভালো লাগতেই হবে! ডিজনি স্টুডিওর আরেকটি রূপকথা বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট। বইপড়ুয়া বেল আর পরিরানির অভিশাপে সুদর্শন রাজপুত্র থেকে ভয়ংকর প্রাণী হওয়া বিস্টের গল্প এটি। বাবাকে বাঁচাতে বেল নিজে বন্দী হয় বিস্টের প্রাসাদে। তারপর বিস্টকেও বাঁচায় রানির অভিশাপ থেকে। কীভাবে? জানতে হলে দেখতে হবে ছবিটি!

এতক্ষণ তো রূপকথা নিয়ে অনেক সিনেমার গল্প বললাম, এবার বলি উল্টো ধরনের এক রূপকথার গল্প! এক ওগর, যে একা একা থাকে। এক রাজা, যে নিজে রাজকন্যাকে উদ্ধার না করে পাঠায় সেই ওগরকে, যেই ওগরের কোনো পঙ্খিরাজ নেই, আছে এক বাচাল গাধা। রাজকন্যাকে যেখানে বন্দী করে কোনো ডাইনি না, পরিরানি নিজেই! বলছি যাবতীয় রূপকথাকে বুড়ো আঙুল দেখানো অ্যানিমেশন ছবি শ্রেক-এর কথা! গৎবাঁধা রূপকথা দেখতে দেখতে যারা ক্লান্ত, তারা এই সিরিজের চারটি ছবি দেখলে মজা পাবে খুব! আরেকটি মজার ছবি হচ্ছে দ্য উইজার্ড অব ওজ, ছোট্ট মেয়ে ডরোথির ওজ শহরে অ্যাডভেঞ্চারের গল্প। এই পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশিবার দেখা সিনেমা এটি।

এ ছাড়া দেখতে পারো মুলান, দ্য প্রিন্সেস অ্যান্ড দ্য ফ্রগ, দ্য লিটল মারমেইড, দ্য প্রিন্সেস ব্রাইড, পিনোকিও, আলাদিন, টিনকার বেল, ব্রেভ, দ্য হবিট, কিরিকউ অ্যান্ড দ্য সরসারাস, অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড, পিটার প্যান, পোকাহনতাস, পুস ইন বুটস, দ্য প্রিন্স অব ইজিপ্ট। জাপানের অ্যানিমেশন স্টুডিও ঘিবলিরও রূপকথার কল্পজগৎ নিয়ে নির্মিত বেশ কিছু মজার ছবি আছে। এর মধ্যে স্পিরিটেড অ্যাওয়ে, মাই নেইবার টোটোরো, দ্য টেল অব দ্য প্রিন্সেস কাগুয়া—এই তিনটি অন্যতম। স্পিরিটেড অ্যাওয়ে নির্মাণের সময় পরিচালক হায়ায়ো মিয়াজাকি কোনো লিখিত চিত্রনাট্য ছাড়াই গল্পটা সাজিয়েছিলেন, জানো? তিনি নিজেও তাই আগেভাগে বুঝতে পারেননি, অস্কারজয়ী এই গল্পের মোড় কোন দিকে গিয়ে ঘুরবে! আর দ্য টেল অব দ্য প্রিন্সেস কাগুয়া জাপানের পুরোনো এক লোককাহিনির ছায়া থেকে বানানো। রূপকথার এই ছবিগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে তোমার কল্পনাকেও হার মানাবে, এই যেমন হ্যারি পটারের কথাই ধরো না! ছোট্ট হ্যারির জাদুবিদ্যা শেখার জন্য হগওয়ার্টস যাওয়া, আর সেই থেকেই অ্যাডভেঞ্চারের শুরু! একে একে আটটি সিনেমা হয়েছে জে কে রাওলিংয়ের বিখ্যাত এই উপন্যাস সিরিজ থেকে। কোনো রূপকথার গল্প বাস্তবে কতটা ছাপ ফেলতে পারে, তা বোঝা যায় হ্যারি পটারের জনপ্রিয়তা থেকেই। কিছু কিছু জায়গায় বইয়ের কল্পনাকেও হার মানিয়েছে চলচ্চিত্রের হ্যারি।

রূপকথার উদ্দেশ্যই আসলে এই, কল্পনার লাগামটা সীমানার বাইরে নেওয়া! যত দূর পারা যায়। তাই যারা রূপকথা ভালোবাসো, চোখের সামনে কল্পনার দুয়ারটা রুপালি ফ্রেমে দেখতে তাদের ভালো লাগবেই, নিশ্চিত!

সূত্র: আইএমডিবি ও রোটেন টমেটো