সাইকো পাস: যন্ত্রনিয়ন্ত্রিত দূর ভবিষ্যতের গল্প

ধরো কোনো এক সুন্দর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলে দেশ থেকে মারামারি-কাটাকাটি সব দূর হয়ে গেছে। লোকজন সব ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে’ গাইতে গাইতে যার যার কাজে যাচ্ছে। দেশ থেকে উঠে গেছে থানা-পুলিশ, আদালত সব। রাস্তার মোড়ে মোড়ে লাগানো ক্যামেরা স্ক্যান করেই বলে দিতে পারছে কে কী অপরাধ করতে যাচ্ছে, কে মনে মনে কী ভাবছে। যন্ত্রের স্ক্যানে একবার ধরা খেলেই সব শেষ; ভয়ংকর সব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হাজির হয়ে যাবে।

মোটামুটি এই রকম একটা প্লট নিয়েই শুরু হয়েছে সাইকো পাস অ্যানিমের কাহিনি। জাপান এমন একটা সময়ে বাস করছে, যেখানে সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে ‘সিভিল সিস্টেম’ নামক একটি স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম। যদিও সিস্টেমটি কীভাবে কাজ করে কিংবা আদৌ সিস্টেমের সব সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত কি না, সেটা কেউ ভেবে দেখে না; আসলে প্রয়োজন মনে করে না। কারণ, এই সিস্টেম সমাজে একধরনের কড়া ‘রুলস অ্যান্ড অর্ডার’ বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। জনগণ এই শান্তির বিঘ্ন কিছুতেই চায় না।

এই পর্যন্ত পড়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়া যেটা হওয়া স্বাভাবিক সেটা হলো, ‘ভালোই তো, সমস্যাটা কোথায়? যন্ত্র সমাজ কন্ট্রোল করছে, শান্তি বজায় রাখছে; খারাপ কী?’

সমস্যা দুটো । এক. যন্ত্র কি আসলেই মানুষের মনের পরিমাপ করতে পারে? ভালো-মন্দ, অপরাধ, শিল্প, মানবিকতা—এই জিনিসগুলো কি আসলেই পরিমাপযোগ্য? কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড ধরে হয়তো একটা ঘটনাকে ‘অপরাধ’ বলা যেতে পারে কিন্তু অপরাধ ঘটার আগেই কি সেটা যন্ত্রের মাধ্যমে অনুমান করা সম্ভব? আর ভালো আর মন্দের সংজ্ঞাটা আসলে কী? কোন অপরাধের কী শাস্তি হওয়া উচিত তা পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা না করে যন্ত্র কি সিদ্ধান্ত নিতে পারে, নাকি নেওয়া উচিত? এ ধরনের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে, কিংবা বলা ভালো, প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে এই অ্যানিমে।

সমস্যা দুই. সিস্টেমেই সমস্যা। অ্যানিমেটি কিছু দূর এগোনোর পর দেখা যায় এমন কিছু লোক আছে যারা দিব্যি অপরাধ করে যাচ্ছে, সিস্টেম তাদের স্ক্যান করে ‘অপরাধ’ খুঁজে পাচ্ছে না। কেন? জানতে হলে দেখতে হবে অ্যানিমেটি।

এর মূল চরিত্র আসলে দুজন—কোগামি আর মাকিশিমা। তবে কে যে নায়ক আর কে যে ভিলেন তা কখনোই পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় না। চাইলে হয়তো মাকিশিমাকে ভিলেন আখ্যা দেওয়া যায়, তবে পুরো সিরিজে অনেকের প্রিয় চরিত্র হতে পারে এই মাকিশিমাই। যদিও ভালো-মন্দ হিরো-ভিলেন চরিত্রের সীমারেখা এই অ্যানিমের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকাংশেই অস্পষ্ট। সুন্দর গল্প, চমত্কার গান, দারুণ ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট এবং কৌতূহলোদ্দীপক সমাপ্তির নিয়ে বেশ উপভোগ্য এই সিরিজটি।

ছবি: অ্যানিমেনিউজনেটওয়ার্ক ডটকম