সিজেসেভেন

পরিচালক | স্টিফেন চো
প্রথম প্রকাশ | ২০০৮, চীন
ধরন | বিজ্ঞান কল্পকাহিনি
ব্যাপ্তি | ৮৮ মিনিট

উঁচু আর বিলাসবহুল অট্টালিকা ছাড়িয়ে শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে, যেখানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, ঠিক সেখানেই আশ্চর্যভাবে দাঁড়িয়ে আছে ভাঙাচোরা বাড়িটি। দেখে মনেই হবে না, সেখানে কোনো মানুষ থাকতে পারে। কিন্তু ইঁদুর আর তেলাপোকার এ আস্তানাতেই থাকে নয় বছরের ছোট্ট ছেলে ডিকি চাও আর তার বাবা চাও টি।

অনেক আগেই মাকে হারিয়েছে ডিকি। বাবা নির্মাণশ্রমিক। খাটুনি হাড়ভাঙা, কিন্তু বেতন সামান্য। তাতে দুজনের সংসার কোনোমতে চলে। ছেলের ভবিষ্য চিন্তা করে শহরের নামকরা স্কুলে ভর্তি করেছেন ডিকিকে। অবশ্য সে খরচ জোগাতে বাবাকে একটু বেশিই খাটতে হয়। সেখানে ধনী পরিবারের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পোশাক কিংবা আচার-আচরণ কিছুই মেলে না তার। সবাই যখন টিফিনে দামি খাবার খায়, তখন এক কোণে বসে সামান্য সস্তা খাবারেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ডিকিকে। এসব কারণে সবার কাছেই নানাভাবে হেনস্তা হয় ডিকি। তাই পড়ালেখায় মন বসে না, ফলাফল স্কুল পরীক্ষায় রসগোল্লা।

একদিন ক্লাসের সবচেয়ে মারকুটে আর ধনীর দুলাল জনি নতুন এক খেলনা নিয়ে এল স্কুলে। সিজে ওয়ান নামের সেই খেলনা রোবট দেখে সবাই হতবাক। লোভী চোখে দেখল মুগ্ধ ডিকিও। বাড়ি ফিরেই সেটি কেনার বায়না ধরল সে। কিন্তু খেলনার দাম দেখে বাবার চক্ষু চড়কগাছ। এত টাকা তিনি কোথায় পাবেন? কিন্তু অবুঝ ডিকির সেটি চাই-ই চাই। অগত্যা কপালে জুটল একপ্রস্থ বকাঝকা। রাতে বাড়ি ফেরার সময় আবর্জনার স্তূপে ফুটবলের মতো এক অদ্ভুত জিনিস কুড়িয়ে পেলেন বাবা। ডিকি এ খেলনা পেয়ে খুশি হবে ভেবে সেটি নিয়েই বাড়ি চললেন। তবে খেয়াল করলেন না, তার পাশ দিয়েই উড়ে গেল ভিনগ্রহের এক ফ্লাইং সসার। তাহলেই বুঝতেন, কী নিয়ে যাচ্ছেন! ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার মতোই অদ্ভুত ফুটবল ফুটে বের হলো ছোট্ট এক কুকুরছানা। ডিকি তার নাম দিল সিজে সেভেন। শুরু হলো আজব এক কাহিনি।

বাবা কোথা থেকে যেন কুড়িয়ে এনেছিলেন কয়েকটি পচা আপেল। শক্তি দিয়ে সেটি একেবারে টাটকা বানিয়ে দিল সিজে। এ অভাবনীয় দৃশ্য দেখে মুহূর্তেই একগাদা ইচ্ছে ভর করল ডিকির মধ্যে। রাতে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখল, সিজের বদৌলতে উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে সব পেয়েছির দেশের বাসিন্দা ভিকি। সেই এখন ক্লাসের ফার্স্ট বয়। হাইজাম্প থেকে ফুটবল সব খেলায় ডিকিই সেরা। অবশ্য ঘুম ভাঙতেই পাঁপড়ভাজার মতো সব স্বপ্ন চুরমার। কারণ ডিকির কাঙ্ক্ষিত প্রযুক্তি দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হলো সিজে সেভেন। এর পর থেকে স্কুলে সিজেকে নিয়ে ঘটতে থাকে একের পর এক মজার ঘটনা। ক্লাসের সবার সঙ্গে বেশ একটা বন্ধুত্বও হলো। কিন্তু তা হলে কী হবে, এবারও ক্লাস টেস্টে গোল্লা পেয়ে বাড়ি ফিরল ডিকি। তবে শূন্যের ওপর কলম ঘষে ১০০ বানিয়ে বাবাকে তাক লাগাল সে। গর্বে দশ হাত বুক ফুলিয়ে ছেলের পরীক্ষার খাতা সবাইকে দেখাতে লাগলেন তিনি। তবে ধরা পড়ে ডিকি। বাড়ি ফিরে একচোট রাগারাগি হয় ডিকি আর বাবার।

সিজেকে কেড়ে নেন বাবা। ডিকি শপথ নেয়, ভালো রেজাল্ট না করে বাড়ি ফিরবে না। ওদিকে বাবা মন খারাপ করে সিজেকে ব্যাগে ভরে রওনা হন হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে। সেদিনই বহুতল ভবনে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনাক্রমে অনেক উঁচু থেকে পড়ে যান বাবা। হাসপাতালে নিতে না-নিতেই মারা যান তিনি।

স্কুলে সেদিন পরীক্ষায় সত্যিই ভালো রেজাল্ট করে ডিকি। ঠিক এ সময়ই সব আলো নিভিয়ে দিয়ে আসে বাবার মৃত্যুসংবাদ। কান্নায় ভেঙে পড়ে ডিকি। ঠিক এ সময়েই পাশে দাঁড়ায় সিজে। তারপর? যারা চীনা পরিচালক স্টিফেন চো নির্মিত কুংফু হাসল কিংবা সাওলিন সকার দেখেছ, তারা এ মুভিটি দেখেও মজা পাবে, এটুকু জোরের সঙ্গেই বলা যায়। পরীক্ষা প্রার্থনীয়।