সিনেমায় বৈজ্ঞানিক কল্পগল্প

গল্পটা এ দুনিয়ার নয়।

বিরক্তিকর হোমওয়ার্ক আর পাশের বাড়ির খিটখিটে মেজাজের বুড়ো দাদুর ছোট্ট এই জগৎ থেকে লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরের এক তারকামণ্ডলের গল্প এটা। যেখানের প্রতিটি গ্রহই একেকটা আস্ত দেশ, যে দেশের বাসিন্দারা একাধারে প্রযুক্তির জাদুকর আর সঙ্গে অকল্পনীয় ধারালো মস্তিষ্ক নিয়ে তুখোড় বুদ্ধিমান।

এখানের নানা কিসিমের অধিবাসীর মহাকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া তোমার ঢিল মেরে পাশের বাড়ির গাছ থেকে আম পাড়ার মতোই নস্যি ব্যাপার। আলোর তরবারি নিয়ে তারা যুদ্ধ করে। ভালোর পক্ষে, মন্দের বিপক্ষে। তাদের এই আলোর তরবারিতেও আছে পার্থক্য। নীলচে সবুজ তরবারি নিয়ে ভালোরা লড়াই করে লাল তরবারিধারী মন্দদের বিপক্ষে।

সে এক অসম রোমাঞ্চকর লড়াই। দেখলে দেখতেই ইচ্ছে করে।

আলোর তরবারি নিয়ে যুদ্ধ করা এই যোদ্ধাদের গল্প নিয়ে বানানো সিনেমার নাম স্টার ওয়ার্স বা তারার যুদ্ধ।

এই তারার যুদ্ধ আমাদের সামনে প্রথম উপস্থাপন করেন আমেরিকান চিত্রপরিচালক জর্জ লুকাস।

১৯৭৭ সালে স্টার ওয়ার্স: আ নিউ হোপ দিয়ে যাত্রা শুরু হওয়ার পর চার দশকের বেশি সময় পরও আজ অবধি মানুষের মন জয় করে যাচ্ছে এই তারাদের যোদ্ধারা। গত বছর ডিসেম্বরে স্টার ওয়ার্স: দ্য রাইস অব স্কাইওয়াকার মুক্তি পাওয়ার মাধ্যমে সিরিজের নবম সিনেমা দর্শকদের মন জয় করে নেয়। বক্স অফিসে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করা, সিরিজের সব সিনেমায় অস্কারের কোনো না কোনো বিভাগে নমিনেশন পাওয়া ছাড়াও এই ফ্র্যাঞ্চাইজি বহু আগেই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছে।

তো, আর দেরি না করে তারার যোদ্ধাদের অদ্ভুত এক জগতে ঢুঁ মারতে আজই দেখা শুরু করে দিতে পারো পুরো স্টার ওয়ার্স সিরিজ।

এবার আসি গুপ্তচর দুই ভাইবোনের কাছে।

১২ বছর বয়সী কার্মেন আর তার ৯ বছর বয়সী ছোট ভাই জুনি।

সাগরপাড়ের পাহাড়ের ওপর রোমাঞ্চকর একটা বাড়িতে মা–বাবার সঙ্গে থাকে ওরা।

আর দশটা সাধারণ মানুষের মতোই তারা তাদের মা-বাবাকে সাধারণ মা-বাবা হিসেবেই চেনে। মায়ের কাছে রোজ রাতে ঘুমপাড়ানি গল্প শুনে ঘুমানো, সকালে মা–বাবার সঙ্গে স্কুলে যাওয়া আর ভাইবোন মিলে সারাক্ষণ খুনসুটি করেই তাদের দিন কেটে যায় নিশ্চিন্তে।

একদিন হুট করে তারা জানতে পারে, তাদের ওই অতি সাধারণ মা-বাবা আসলে অর্গানাইজেশন অব সুপার স্পাইসের (ওএসএস) বিরাট বড় গুপ্তচর!

কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে বেশ, ছদ্মবেশী গুপ্তচর মা–বাবা গোপন এক মিশনে গিয়ে ধরা পড়ে গেছে দারুণ দুষ্ট এক অপরাধীর হাতে।

তারপর?

তারপর ঘটনাচক্রে দুই ভাইবোনকে অপ্রতাশিতভাবে জড়িয়ে পড়তে হয় তাদের দুর্দম গুপ্তচর মা–বাবাকে উদ্ধারের এক রোমাঞ্চকর ও মজার অভিযানে।

দুই ভাইবোনের এই অভিযানের কাহিনি দেখানো হয়েছে স্পাই কিডস নামের সায়েন্স ফ্যান্টাসি কমেডি সিনেমায়। সিনেমাজুড়েই অদ্ভুত সব গ্যাজেট আর বিচিত্র সব মিউট্যান্টের আনাগোনার সঙ্গে দারুণ মজাদার সব দৃশ্য দেখে হাসতে হাসতে তোমার পেটে খিল লেগে যেতে বাধ্য।

২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া এই স্পাই কিডস–এর মজা কিন্তু এই এক সিনেমাতেই শেষ নয়।

২০০২ সালে স্পাই কিডস ২: দ্য আইল্যান্ড অব লস্ট ড্রিম, ২০০৩ সালে স্পাই কিডস ৩-ডি: গেম ওভার এবং সবশেষে ২০১১ সালে স্পাই কিডস: অল দ্য টাইম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড–এর মাধ্যমেও স্পাই কিডস দারুণ মজার সব কাণ্ডকারখানা করে গেছে। না দেখে থাকলে এক্ষুনি দেখে নিতে পারো সিনেমাগুলো।

এবার আসি অন্য এক গল্পে।

জিম হকিন্সের কথা মনে আছে তোমাদের? বিশ্ববিখ্যাত স্কটিশ লেখক রবার্ট লুই স্টিভেনসন ট্রেজার আইল্যান্ড বইয়ে যার গল্প বলে গেছেন, সেই কিশোর জিম। বাবার মৃত্যুর পর, মায়ের সঙ্গে সাগরপাড়ে এক সরাইখানা চালাত সে। সেখানে একদিন বিশাল এক সিন্দুক নিয়ে হাজির হয় কুখ্যাত জলদস্যু বিলি জোনস। ফ্রি ওয়াই-ফাই পেলে যেমন মানুষের ঝাঁক জমে যেতে সময় লাগে না, তেমনই গন্ধ শুঁকে সেখানেও হাজির হয়ে যায় কল্লাকাটা সব জলদস্যু।

তারপর ঘটনাচক্রে গুপ্তধনের হাতছানিতে একদিন জাহাজে চেপে গভীর সাগরে অজানা এক দ্বীপে অভিযানে বেরোয় ছোট্ট জিম। সাধারণ নাবিকের ছদ্মবেশে সেই জাহাজে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে চেপে বসে কুখ্যাত একপেয়ে জলদস্যু লং জন সিলভার। তারপর যে রোমহর্ষ অভিযানের সূচনা হয়, সেটা যারা ট্রেজার আইল্যান্ড বই পড়েছ, তারা তো জানোই।

তো এই ট্রেজার আইল্যান্ড–এর গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই রন ক্লিমেন্টস ও জন মুস্কার বানিয়ে ফেলেন দুর্দান্ত একটা অ্যানিমেটেড সায়েন্স ফিকশন সিনেমার, নাম ট্রেজার প্ল্যানেট

ট্রেজার আইল্যান্ডের মতোই এটাও রহস্যময় গুপ্তধন উদ্ধারেরই দুর্দান্ত এক রোমাঞ্চকর গল্প। পার্থক্যটা হলো জিমের গুপ্তধনের সেই দ্বীপের অভিযানের জায়গায় এখানে দেখানো হয়েছে গুপ্তধনের গ্রহের গল্প, যা বইয়ের গল্পের তুলনায় কম রোমাঞ্চকর নয়। ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া ওয়াল্ট ডিজনি প্রডাকশনের এই সিনেমা দেখে নিতে পারো জিম হকিন্সের অন্য রকম এক রত্নদ্বীপ অভিযানের গল্প জানতে।

এখানেই শেষ নয়। তোমাদের জন্য রুপালি পর্দায় সায়েন্স ফিকশন অথবা সায়েন্স ফ্যান্টাসি সিনেমা নেহাত কম নয়। সিনেমা নির্মাতারা একপ্রকার সায়েন্স ফিকশন সিনেমার ডালি সাজিয়ে বসেছে তোমাদের জন্য। গাছতলা থেকে ফুল কুড়ানোর মতো তুমিও এই ডালি থেকে কুড়িয়ে নিয়ে টপাটপ দেখে নিতে পারো নিচের সিনেমাগুলোও।

ম্যাট্রিক্স সিরিজ, টারমিনেটর সিরিজ, ব্যাক টু দ্য ফিউচার সিরিজ, ম্যান ইন ব্ল্যাক সিরিজ, রোবোকপ সিরিজ, গোস্ট বাস্টার সিরিজ, গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি সিরিজ, প্যাসিফিক রিম সিরিজ, জুরাসিক পার্ক সিরিজ, প্ল্যানেট অব দ্য এপ সিরিজ, স্টার ট্রেক সিরিজ, কিংবা ই. টি. দ্য এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল (১৯৮২), ফ্লাবার (১৯৯৭), অ্যাভাটার (২০০৯), দ্য মার্সিয়ান (২০১৫), রিয়েল স্টিল (২০১১), জন কার্টার (২০১২), আই, রোবট (২০০৪), আফটার আর্থ (২০১৩), রেডি প্লেয়ার ওয়ান (২০১৮), এলিটা: ব্যাটেল অ্যাঞ্জেল (২০১৯) ইত্যাদির মতো লাইভ অ্যাকশন সিনেমার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ অ্যানিমেটেড সায়েন্স ফিকশন সিনেমা আছে, যেগুলো দেখলে তোমার মন জুড়িয়ে যেতে বাধ্য।

মজাদার অ্যানিমেশন সিনেমার ভেতর উল্লেখযোগ্য কিছু নাম হচ্ছে ওয়াল-ই (২০০৮), রোবটস (২০০৫), মার্স নিড মমস (২০১১), দ্য আয়রন জায়ান্ট (১৯৯৯), প্ল্যানেট ৫১ (২০০৯), অ্যাস্ট্রো বয় (২০০৯), মনস্টার ভার্সেস এলিয়েনস (২০০৯), এসকেপ ফ্রম প্ল্যানেট আর্থ (২০১৩), আটলান্টিস: দ্য লস্ট এম্পায়ার (২০০১), নেক্সট জিন (২০১৮), বিগ হিরো ৬ (২০১৪), (২০০৯), মেগামাইন্ড (২০১০), আ শন দ্য শিপ মুভি: ফার্মাগেডন (২০১৯) ইত্যাদি।