হ্যাক করা হচ্ছে পৃথিবীর সব বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের সার্ভার সিস্টেম। হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ আর গোপন সব তথ্য। ফাঁস হয়ে যাওয়ার পথে থাকায় তা হুমকি হয়ে উঠেছে সবার জন্য। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নানা প্রকল্প, বন্ধ হওয়ার পথে প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কোনোভাবেই ধরা সম্ভব হচ্ছে না হ্যাকারকে। যখনই কেউ তার অবস্থান জানার চেষ্টা করেছে, ব্যর্থ হয়েছে। কেননা, হ্যাকার কীভাবে যেন তার বিরুদ্ধে নেওয়া অভিযানগুলোর কথা জেনে যাচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যে সেগুলো বানচাল করে অভিযানকারীদের হুমকি দিচ্ছে। অন্যদিকে দরকারি তথ্যের নিরাপত্তা নষ্ট হওয়ায় জ্ঞানভিত্তিক এ পৃথিবী হুমকির মুখে। অথচ কারও কিছুই করার নেই।
কম্পিউটার নিয়ে যার ধ্যানজ্ঞান, সে কম্পিউটারভিত্তিক ওয়েবসাইটে সব সময় ঘুরবে, এটাই স্বাভাবিক। স্ক্রল করতে করতেই ‘আইটিফুল’ নামে একটা ওয়েবসাইটের লিংকে চোখ আটকে গেল রোমানের। দক্ষ চোখে লিংকটার ওপর চোখ বুলিয়ে সাইটে ঢুকল সে। ‘বাহ! চমৎকার একটা সাইট তো।’ মনে মনে ভাবল রোমান। অনেক মজার, দরকারি, অজানা ও বাহারি তথ্যে ঠাসা সাইটটিতে বেশ অনেকক্ষণ ব্রাউজ করল রোমান। হঠাৎ মনে হলো, তার একটি জরুরি কাজ করার কথা আজ। একটা ধূর্ত বাঁকা হাসি ফুটে উঠল তার মুখে। সাইট থেকে বের হয়ে কাজে মনোনিবেশ করল সে।
‘পা দিয়েছে। ফাঁদে পা দিয়েছে!’ আনন্দে চিৎকার করে উঠল এমিলি।
‘গুড জব এমি।’ বাহবা দিতে তার পিঠ চাপড়ে দিল লিলি। ‘এখন আমাকে বুঝিয়ে দে, কীভাবে কী করলি? প্ল্যানিংয়ের ঝড়ে তোর অংশের কাজটা বুঝতে পারিনি।’ ইলিয়ানা বলল। ‘আমি অনেক গবেষণা ও কসরত করে এমন একটা ওয়েবসাইট বানিয়েছি, যেটা আসলে একটা হ্যাকার ওয়েব, কিন্তু এটা দেখতে নরমাল একটা ওয়েবের মতোই, যেটা আইটির তথ্য দিয়ে ভরা। আইটি লাভারদের জন্য লোভনীয় বটে। এখন আমি এটা নির্দিষ্ট কজনের কাছে সাজেস্ট করার ব্যবস্থা করেছি। প্ল্যানের অংশ হিসেবে তোদের কাছেও পাঠিয়েছি, কেন দিলাম জানি না, কিন্তু তোদের ঢুকতে মানা করেছি। যেমন রোমানই প্রথম যে এটাতে ঢুকেছে। ওয়েবে থাকা ভাইরাস এখন তার ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেমে জায়গা নেবে, বোঝাও যাবে না, ওটার সঙ্গে যত ডিভাইস কানেক্টেড হবে, সবগুলোরই হবে একই দশা। তারপর তার লোকেশন ট্র্যাক করা যাবে।’ একনাগাড়ে বলে গেল এমিলি।
‘ছেলেটা চালাক, না হয় আরও সহজে তাকে ধরা যেত, তার ডিভাইস হ্যাক করা যেত।’ অ্যালেনা বলল।
‘অপারেটিং সিস্টেমে যেন কীভাবে যাবি বললি?’ আমি বললাম।
‘দেখাবে যে তার ফোনের সফটওয়্যার ভার্সন আপডেট নিচ্ছে।’ এমিলি বলল। ‘এই যে কাজ শুরুও করে দিয়েছে! আর মাত্র কয়েক মিনিট, তারপরই আসল কাজ।’
আমাদের সবার দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। মানুষটা ঘুণাক্ষরেও টের পেল না? আশ্চর্য।’ ইলিয়ানা বলল, ‘কারণ, এমিলিই এমন কাজ করা প্রথম মানুষ।’ আমি বললাম ।
‘এটা ঠিক বলেছিস জেনি।’ লিলি বলল।
‘জেনি, এবার তোর পালা। সিস্টেম লোড হতে বেশি দেরি নেই। বাকিটা তোর কাজ।’ এমিলি বলল।
আমি মেইন কন্ট্রোল প্যানেলের কম্পিউটারে বসলাম।
আমাকে ঘিরে বাকি চারজন দাঁড়াল। আমরা নিশ্বাস বন্ধ করে স্ক্রিনের দিকে তাকালাম। সিস্টেম এখন ৫৬%; যত বাড়ছে, তত ভেতরে উৎকণ্ঠা, চিন্তা, আনন্দ সবই বাড়ছে। আমি হাত জোড় করে কতক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলাম। টেবিলে থাকা অরেঞ্জ জুসের গ্লাসটা হাতে নিয়ে টানতে থাকলাম স্ট্র দিয়ে। তেষ্টা পায়নি তেমন, তবে নার্ভাসনেস কমানোই উদ্দেশ্য। ১০০% হওয়ার পর আমরা ছোটখাটো আনন্দধ্বনি করলাম। এখনই তুঙ্গে উঠে লাভ নেই। এবার প্ল্যানমাফিক কাজ শুরু করে দিলাম। যত ইনফরমেশন পেলাম, আমার কথামতো তা সংরক্ষণ করতে লাগল অ্যালেনা। হ্যাক করছি, ধরা পড়লেও যেন পাল্টা কিছু না করতে পারে, তাই ইলিয়ানা আমাদের সব সোশ্যাল মিডিয়া ও কনট্যাক্ট মিডিয়ার সিকিউরিটি পাওয়ারফুল করল। আর সব কাজের কথা লিখতে শুরু করল লিলি। রোমান যতক্ষণ কাজ করছে, ততক্ষণের মধ্যে কাজ করতে হবে। লোডিংয়েই সময় নিয়েছি বেশি। যা–ই হোক, শেষ পর্যন্ত আমাদের দরকারি সব পেয়ে গেলাম। আমি কখনোই ফোন হাতে নিয়ে কল করলাম, ‘হ্যালো, আইটি পুলিশ কন্ট্রোল সেন্টার...’
রোমান একনাগাড়ে কি-বোর্ডে আঙুল চালিয়ে গেল। এই হ্যাক করল বলে। সে বেশ উন্নত দেশের ভেতরকার গোপন তথ্যভান্ডার হ্যাক করতে যাচ্ছে। তার আগেই চারদিকে হট্টগোল শোনা গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার রুম ভেঙে কতকগুলো মানুষ ঢুকে কিছু একটা তার দিকে তাক করে শুট করল। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র যন্ত্রণার একটা শব্দ করে নিচে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেল রোমান।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রোমানকে তোলা হলো পুলিশের গাড়িতে। এই সেই হ্যাকার, যার হ্যাকিংয়ে বিপর্যস্ত বিশ্ব। অথচ সে হেরে গেছে ‘স্নোউইংকারস ৫.০’ নামে সদ্য কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পাস করা একদল কম বয়সী মেয়েদের কাছে। তাদের বুদ্ধিমত্তার কাছে।
পুলিশপ্রধান ছুটে এলেন, আমাদের কাছে। হ্যাঁ, আমরাই যে সেই দল, তা তো সহজে অনুমেয়। তিনি এসে কৃতজ্ঞতাভরে বললেন, ‘আপনারা যে কাজটা করেছেন, তা অভাবনীয়। বিখ্যাত প্রোগ্রামাররাও পারেনি। অথচ প্রথমে আমরা পাত্তা দিইনি আপনাদের, তাই দুঃখিত।’
‘সমস্যা হয় নাই।’ আমি হাসলাম। ‘এমন কাজে আমরা সব সময় থাকব।’
‘সারা বিশ্ব উন্মাতাল, কুখ্যাত হ্যাকার রোমান ধরা পড়েছেন’, টিভিতে খবর এটাই, ব্রেকিং নিউজ, এটাই দেখাচ্ছে বারবার। অন্যরা সরাসরি হ্যাক করতে গিয়েছিল, তাই পারেনি। আমরা অনেক কায়দাকানুন করেছি।’ আমি বললাম।
‘ ঠিকই।’ অ্যালেনা বলল।
‘আমরা এক ঘটনায় বিখ্যাত। বাহ!’ ইলিয়ানা বলল।
এমন সময় লিলি একটি ট্রেতে অনেক খাবার এনে বলল, ‘এ আনন্দে পার্টি হয়ে যাক, নাকি?’