আমি তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়তাম। অনেক দিন পর স্কুল খোলায় সবার মতো আমিও খুবই খুশি হয়েছিলাম। সামনেই পরীক্ষা, তাই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই পরীক্ষার আগের রাতে ১০৪ ডিগ্রি জ্বর উঠে গেল। দুপুরেও এসেছিল, কিন্তু তেমন পাত্তা দিইনি। রাতে বাবা এলেন। বাবাকে বলামাত্র তিনি ওষুধ খাইয়ে দিলেন। বললেন, ‘আর পড়ার দরকার নেই। গিয়ে বিশ্রাম নাও।’ তারপর দিন দিন অবস্থা আরও করুণ হতে লাগল। বাবা পরীক্ষা দিতে মানা করে দিলেন। কিন্তু আমি জোর করে পরীক্ষা দিলাম। আমার অবস্থা দেখে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর জানা গেল যে আমার টাইফয়েড হয়েছে। অবস্থা ভালো নয়। হাসপাতালে গিয়েই আমার প্রথম দেখা হলো নার্স আপুর সঙ্গে। আমি আবার ইনজেকশন নিতে ভয় পাই।
তাই যখন আমার হাতে ক্যানুলা ঢোকানো হচ্ছিল, তখন নার্স আপুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলাম। আপু অনেক আদর করলেন। গল্প করতে করতে কখন যে ক্যানুলা ঢুকিয়ে দিলেন, টেরই পাইনি। তখন থেকে আমি ওনার ভক্ত হয়ে গেলাম। হাসপাতালে আট দিন ছিলাম আমি। ইনজেকশন নেওয়ার সময় হলে প্রতিবারই বায়না করতাম ওই নার্স আপুর কাছ থেকে নেওয়ার জন্য। আপু আমাকে অনেক আদর করতেন। যখনই সময় পেতেন, আমার কাছে চলে আসতেন। গল্প করতেন। যেদিন রিলিজ নিয়ে আমরা চলে আসব, সেদিন তিনি খুব কেঁদেছিলেন। আমরা চলে আসার আগে তিনি আমার কাছে এসে কেঁদে বলেছিলেন, ‘তুমি আমার ছোট বোনের মতো।’ কথাটা শুনে আমারও চোখে পানি চলে এসেছিল। আপুটার নাম অনু। আমি তাঁকে কোনো দিন ভুলব না। জীবনে প্রথম কেউ আমাকে বোন ডেকেছে। কারও সঙ্গে আমি সেভাবে মিশতে পারি না। তাঁর সঙ্গে কেন যেন একটা আলাদা সম্পর্ক অনুভব করছিলাম।