একটি সত্যি জাদু
সুন্দরভাবে দেখানো সব ম্যাজিকই দর্শককে মুগ্ধ করে। কিন্তু দক্ষ জ্ঞানী ম্যাজিশিয়ানকে যে ম্যাজিক দেখিয়ে মুগ্ধ করা যায় তার কোনো তুলনা হয় না। আর যে ম্যাজিক ম্যাজিশিয়ানকে মুগ্ধ করতে পারে তার শক্তির প্রভাব যে সাধারণ দর্শকের ওপর আরও অনেক বেশি হবে, তাতে কি কোনো সন্দেহ আছে?
আজ এমন একটি জাদু শেখাব, যা শুধু সাধারণ দর্শককেই বিস্মিত করবে না, ম্যাজিশিয়ানদেরও মুগ্ধ করবে। এই জাদুটি দেখে অনেক দর্শককে বহুবার বলতে শুনেছি, ‘এ তো কোনো কৌশলের ম্যাজিক-ট্যাজিক না। এ হলো সত্যি জাদু।’
দর্শক যা দেখবেন:
জাদুকর তিন ফুট বা তার চেয়ে কিছু লম্বা এক গাছা দড়ি পকেট থেকে বের করলেন। কয়েকবার হ্যাচকা টান দিয়ে প্রমাণ করলেন, দড়িটা বেশ শক্ত ও কোনো কৌশলবিহীন। একজন (হাসিখুশি বুদ্ধিমান) দর্শকের হাতে এক জোড়া (একটা) কাপড় কাটার ধারালো কাঁচি দিলেন। ম্যাজিশিয়ান কোনো রকম আড়াল না করে দড়ির ঠিক মাঝখানটা কাটতে বললেন (ছবি নং ১)। দর্শক সত্যি সত্যি দড়ির মাঝখানটা কাঁচি দিয়ে কেটে ফেললেন। ম্যাজিশিয়ান সবাইকে নিশ্চিত করে দেখানোর জন্য দুই হাতের দুই অর্ধেক দড়ি যতটা সম্ভব দূরে এনে ভাগ করে দেখিয়ে নিলেন, দড়িটা সত্যি দুই টুকরা হয়ে গেছে।
এবার জুড়ে দেওয়ার পালা। ধীরে ধীরে দুই টুকরো দড়ি বিস্ময়কারভাবে জুড়ে গেল।
কী করে জুড়তে হবে
দড়িটা আগে থেকে এমনভাবে প্রস্ত্তত করে রাখতে হবে যেন দর্শকেরা বুঝতে না পারে। বাজার থেকে বিভিন্ন রকমের জুতসই দড়ি (নাইলন বাদে/ সুতার ভেতর করা জাতের গুলো ভালো কাজ করে) অল্প অল্প পরিমাণে কিনে আনতে হবে। আর লাগবে রাবার সিমেন্ট। রাবার সিমেন্ট হলো রাবারের সঙ্গে রাবার জুড়ে দেওয়ার তরল আঁঠা। কাগজ-কলম বিক্রির দোকানে টুথপেস্টের মতো টিউবে কিনতে পাওয়া যায়। সবচেয়ে শক্তিশালী ব্রান্ড দুটোর নাম বার্গল্যান্ড ও ফেভিকল রাবার সিমেন্ট। এ দুটো পেতে হলে যেতে হবে ফরমাইকা বিক্রির দোকানে। দড়ি প্রস্ত্তত করতে হবে কীভাবে? রাবার সিমেন্ট কাছে নিয়ে বসো। একটা অত্যন্ত ধারালো কাঁচি দিয়ে দড়িটার এক প্রান্ত পুরোনো আমলের টুনির কলমের মতো তেরচা করে কাটো। (১ নম্বর ছবির প্রান্ত দুটি দেখো) দড়ির মাথা কাটা হলেই আঙুলে অল্প রাবার সিমেন্ট নিয়ে দ্রুত কাটা অংশে লাগাও। দেরি করলে সুতার মাথার দিকটা খুলে আসতে পারে। ১৫-২০ মিনিট ফুঁ দিলেই রাবার সিমেন্ট শুকিয়ে যাবে। একইভাবে দড়ির অপর প্রান্তও প্রস্ত্তত করে নিতে হবে। দড়ির দুই মাথায় লাগানো রাবার সিমেন্ট একে অন্যের সংস্পর্শে এলে কিন্তু জুড়ে যাবে। এমনকি চার পাঁচ ঘণ্টা পরে লাগলেও জুড়বে। তাই দড়ি বহন করার জন্য একটা কাপড়ের বা কাগজের খাম ব্যবহার করতে হবে, যার মাঝখানে একই রঙের কাপড় বা কাগজের পার্টিশন লাগিয়ে নিতে হবে। পকেটে দড়ি বহনের সময় রাবার সিমেন্ট লাগানো দুই প্রান্ত দুই পাশে ঢুকিয়ে চলাফেরা করতে হবে।
খাম থেকে দড়ি বের করে (১ নম্বর ছবি) অনেকটা ইংরেজি M-এর মতো ধরতে হবে। দর্শক ‘কচ’ করে সত্যিই দড়ির মাঝখানটা কেটে ফেলবেন। দুই হাত যথাসম্ভব ফাঁক করে দেখানোর সময় আগে থেকে প্রস্ত্তত রাবার সিমেন্ট লাগানো প্রান্ত দুটো সামান্য উঁচু করে ধরো। দর্শক ভাববে ওই মাথা দুটোই এই মুহূর্তে কাটা হলো। এবার তৈরি মাথা দুটোয় একটা লুজ গিঁট দেওয়ার অভিনয় করো (ছবি নম্বর ২)। দুই হাতের আঙুল দিয়ে আড়াল করে মৃসণভাবে দুই মাথার রাবার সিমেন্ট এমনভাবে চেপে লাগাবে দেখে মনে হয় একটাই দড়ি। আঙুলের আড়াল তখনো বজায় রাখবে। আঙুলের সেই আড়ালে দড়ির যেকোনো একটা প্রান্ত (প্রস্ত্তত না করা) তুলে লুপের মধ্যে থেকে গলিয়ে উভয় হাতের সাহাযে্য হালকা একটা ফসকা গিঁট দেবে (ছবি নম্বর ৩) গিঁটটা এমন হবে যেন দড়ির দুই প্রান্তে ধরে ধীরে ধীরে টানলে ক্রমেই গিঁটটা খুলে হঠাৎ ‘টুক করে’ দড়িটা সোজা হয়ে যাবে।
গিঁটটা খুলতে হবে অতি ধীরে ধীরে। একটু আগেও দর্শক যে মাথা দুটো কাটা দেখেছেন সেই মাথায় গিঁট দেওয়া হলো। দড়ির দুই মাথা ধরে সবার চোখের সামনে যখন এভাবে একটু একটু করে জুড়ে আস্ত হয়ে যায়, দর্শকের চোখ তা বিশ্বাস করতে চায় না। অলৌকিক বলে মনে হয়। আর তুমি পাও প্রচণ্ড হাততালি। দড়িতে গিঁট দেওয়ার কাজটা আয়নার সামনে অসংখ্যবার করে নিজেকে এমনভাবে প্রস্ত্তত করবে যেন মনে হয় সরসর করে একটা সাধারণ গিঁট দিলে। অতি ধীরে গিঁট খোলার কাজটা এমন গম্ভীরভাবে এক দৃষ্টে তাকিয়ে সশব্দে দম ছাড়তে ছাড়তে করবে যেন তোমার অভিনয় দেখে মনে হয় প্রচণ্ড আত্মশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি শুধু ছেঁড়া দড়িই নয়, যেকোনো ধ্বংসপ্রাপ্ত জিনিসই তোমার জাদুশক্তিতে পুনরায় নিজ রূপ পেতে পারে।
আরেকটা কথা। রাবার সিমেন্ট যখন দুটো দড়ি জুড়ে যাবে তখন তার শক্তি যথেষ্ট হবে। কিন্তু অনায়াসে গিঁট দেওয়ার অভিনয় যখন করছিলে তখন দ্রুততার কারণে কখনো কখনো জোড়ার জায়গাটা নিখুঁত নাও হতে পারে। তাই যেই মুহূর্তে ধীরে ধীরে গিঁটটা খুলে দড়িটা সোজা হয়ে যাবে তখন দড়িটা স্থির ধরে রাখবে না।
দড়িটা যে শক্ত হয়ে জুড়েছে তা বোঝানোর জন্য রাবার সিমেন্টের শক্তি অনুসারে দড়িটা একটু লুজ ও একটু টান দিতে থাকবে। দু-তিনটা টান এবং এবার ডানে ও একবার বামের দর্শকদের দিকে ঘুরে দেখিয়ে দড়ি হাতে গুটিয়ে মাথা সামান্য নিচু করে অথবা তোমার নিজস্ব সমাপ্তির ভঙ্গিমা করো এবং দ্বিতীয়বার হাততালি গ্রহণ করো।

১ নম্বর ছবি
দড়ির কলম কাটা মাথায় রাবার সিমেন্ট
দড়ির কলম কাটা মাথায় রাবার সিমেন্ট

২ নম্বর ছবি
দড়ির উভয় মাথায় রাবার সিমেন্ট
দড়ির একটা প্রান্ত লুপের মধ্যে থেকে গলিয়ে দেওয়া হচ্ছে

৩ নম্বর ছবি
রাবার সিমেন্টে জুড়ে দেওয়া দড়ির ফসকা গিঁট