প্রতিদিন ঘর থেকে বের হলেই রাশি রাশি গাছের সঙ্গে দেখা হয় আমাদের। এসব গাছের কত রকমফের; বাহারি পাতার গাছ, বিচিত্র ফল-ফুলের গাছ, এমনকি ঔষধিগাছও আছে। আবার জানালার পাশে দাঁড়ালেও অনেক গাছ চোখে পড়ে। চারপাশে এই যে এত এত গাছ, এদের সঙ্গে কি আমাদের কোনো সম্পর্ক আছে? এ কথা কিন্তু আমরা খুব একটা ভাবি না। ভাবি না বলেই বুঝতেও পারি না। আসলে সম্পর্ক তো কিছু একটা অবশ্যই আছে। না হলে এত গাছ থাকবে কেন। ধরা যাক, এমন একটি জায়গা, যেখানে গাছপালা তো দূরের কথা, একটি ঘাস কিংবা এক টুকরা আগাছাও নেই। নেই কোনো জলাশয়। সারা দিন ঠা ঠা রোদ্দুর। আশপাশে অন্য কোনো প্রাণীও নেই। এমন একটি বিরান জায়গায় কি মানুষ বসবাস করতে পারে?
তাহলে নিশ্চিত ধরে নিচ্ছি যে মানুষ প্রকৃতির বিচিত্র উপাদানগুলো ছাড়া বাঁচতে পারে না। ছোট্ট একটি উদাহরণ দিই, আমরা যে ভাত খাই তার উৎস ধান। আসলে ধানগাছ কিন্তু একধরনের ঘাস। নিজেদের প্রয়োজনে আমরা এই গাছের বীজটা খাবার হিসেবে বেছে নিয়েছি। গাছপালার সঙ্গে আমাদের সহজ সম্পর্কটা এখানেই। মূলত খাবারের জন্যই গাছপালার সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে বেশি সখ্য গড়ে উঠেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও অনেক বিষয়।
আজকাল আর শুধু প্রয়োজনীয়তা নয়, ঘরবাড়ি বা পথের শোভা বাড়াতেও অনেক বড় ভূমিকা রাখছে গাছ। ফলে বনের সুন্দর সুন্দর গাছ ঘরের ভেতরে একেবারে খাট-পালঙ্কের পাশেও পৌঁছে গেছে। এসব গাছ সৌন্দর্য ও সুবাস দিয়ে আমাদের মনও জয় করেছে। পাশাপাশি বাসার ছোট্ট বারান্দা বা ছাদেও এখন অনেকেই বাগান করছে। এসব বাগানে ফুল-ফল বা শাকসবজিও দেখা যায়। বাসায় সাধারণত বড়রাই এসব কাজ করেন। নার্সারি থেকে খুঁজে খুঁজে ফুলগাছের চারা, ফলগাছের চারা, শাকসবজির চারা নিয়ে আসেন তাঁরা। তারপর টবে সার আর মাটি দিয়ে লাগিয়ে দেন গাছগুলো। ধীরে ধীরে গাছে ফুল হয়, ফল হয়, শাকসবজিগুলো নাদুসনুদুস হয়ে খাবার উপযোগী হয়। তখন কী যে আনন্দ! ইচ্ছা করলে তোমরাও বাগান করে এমন আনন্দের ভাগ নিতে পারো।
এখন বর্ষাকাল। গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। এবার দেখা যাক, তুমি কীভাবে বাগান করবে বা গাছ রোপণ করবে। আসলে বাগান করা কিন্তু খুব কঠিন কাজ নয়। যদি তোমার ঘরের পাশে বা বারান্দা কিংবা ছাদে বাগান করার কোনো সুযোগ না থাকে তাহলে স্কুলেও করতে পারো। আবার সুযোগ থাকলে সবখানেই করতে পারো। প্রথমে দু-একটি গাছ দিয়েই শুরু হতে পারে বাগানের কাজ। ধীরে ধীরে বাড়বে গাছের সংখ্যা। আমাদের চারপাশে এমন কিছু গাছ আছে, যে গাছগুলোর ডাল কেটে লাগিয়ে দিলেই বেঁচে যায়। এসব গাছের মধ্যে বেশি পরিচিত হলো জবা, পাতাবাহার, গন্ধরাজ, কাঠগোলাপ, কলকে, স্থলপদ্ম, করবী ইত্যাদি। আশপাশের বাগান বা পার্ক থেকে খুব সহজেই এসব গাছের ডাল সংগ্রহ করতে পারো। অথবা নার্সারি থেকেও কিনে নিতে পারো এসব গাছের চারা।
চারা লাগানোর পর গাছটির সেবাযত্ন করে বাঁচিয়ে তোলাও একটি বড় কাজ কিন্তু। এরপর অবশ্য তোমার জন্য অনেকগুলো মজার ব্যাপার অপেক্ষা করবে। গাছটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে, নতুন নতুন কুঁড়ি হবে, কাঁচা সবুজ রঙের পাতাগুলো হাওয়ায় দোল খেতে থাকবে। ইচ্ছা করলে তুমি কয়েক দিন পরপর স্কেল নিয়ে গাছটি মেপে দেখতে পারো। তাহলে তুমি বুঝতে পারবে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গাছটি কতটা বড় হলো। এটা একটা মজার খেলাও হতে পারে। আবার তুমি ইচ্ছা করলে বসে বসে ফুল কীভাবে ফোটে, তা-ও দেখতে পারো। এ জন্য নাইট কুইন বা নিশিপদ্মের একটি চারা জোগাড় করতে হবে। সাদা রঙের এ ফুলগুলো ফোটে রাতে। ফিতার মতো চওড়া পাতার কিনারা থেকে প্রথমে কলি বেরোয়। সন্ধ্যার পর থেকে ফুলটি ধীরে ধীরে পাপড়ি মেলতে শুরু করে। তুমি ঘরের বারান্দা বা ছাদে বসে দেখলে কীভাবে একটি সুদর্শন ফুল ফুটছে। খুবই মজার ব্যাপার, তাই না? শুধু একেকটি গাছই নয়, তুমি চাইলে আরও অনেক গাছ দিয়েই বাগান করতে পারো।
ইদানীং অনেক ছাদবাগানেই লতানো গাছ হিসেবে কাঁঠালিচাঁপা, নীলবনলতা, মালতী, জুঁই, রসুন্দি, মর্নিংগ্লোরি, ঝুমকোলতা, অপরাজিতা, উলটচণ্ডাল, গোল্ডেনশাওয়ার ইত্যাদি রোপণ করা হয়। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কন্দজ (গোড়ায় পেঁয়াজের মতো), পাতাবাহার, শীতের মৌসুমি ফুল, ক্যাকটাস, গোলাপ ও অর্কিড। এসব গাছই মূলত এ ধরনের বাগানের প্রাণ। কন্দজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কলাবতী বা সর্বজয়া, দোলনচাঁপা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস (কয়েক রঙের), বল লিলি, সুখদর্শন (টাইগার লিলি), জেফির লিলি (ঘাসফুল), স্পাইডার লিলি। আমাদের দেশে এখন হেলিকুনিয়ার অনেক রকমফের দেখা যায়। এগুলোর কয়েকটি সুদর্শন জাতও টবে চাষ করা যায়। বর্ষজীবী ফুলের মধ্যে শীতের মৌসুমি ফুল বর্ণবৈচিত্র্যে অপরূপ। এদের উপস্থিতি ছাড়া যেকোনো বাগানই প্রাণহীন। বড় বাগান থেকে শুরু করে এক টুকরা ছাদেও এদের অবাধ বিচরণ। হলিহক, অ্যাস্টার, কার্নেশন, ক্যালেন্ডুলা, জারবেরা, পিটুনিয়া, প্যানজি, মোরগঝুঁটি, ন্যাস্টারসিয়াম, গাঁদা, জিনিয়া, আর্কটটিস, কার্নেশন, চন্দ্রমল্লিকা, করিওপসিস, কর্নফ্লাওয়ার, কসমস, ডালিয়া, লুপিন, পপি, সুইট সুলতান, সুইট-পি, সিলভিয়া, স্ট্র-ফ্লাওয়ার, ডায়ানথাস, অ্যাজালিয়া ইত্যাদি ফুল ছাদে রঙের ঝরনা বইয়ে দিতে পারে। চেষ্টা করে দেখো, প্রধান প্রধান রঙের ফুল নিয়ে একটি বাগান করতে পারো কি না।