প্রিয় মানুষটির কোমল হাতের স্পর্শে হয়তো তুমি পেতে পারো পৃথিবীর সব থেকে সুখ, অথচ হাতের স্পর্শেই কিনা হতে পারে তোমার মরণব্যাধি রোগ।জনৈক ব্যক্তি
শুনেছি হাত ধোয়া নিয়ে নাকি দিবসও পালিত হয়! আবার বিভিন্ন দেশের স্কুল-কলেজগুলোতে নাকি হাত ধোয়ার ক্যাম্পেইনও করা হয়। ভেবেছিলাম আফ্রিকার কোনো দেশটেশ হবে হয়তো। ওমা, আমেরিকাতেই নাকি ৬০ শতাংশ লোক সঠিক নিয়মে হাত ধোয় না।
সে যা-ই হোক, আমি হাত ধুব কি না, সেটা একান্তই আমার ব্যাপার।
কিন্তু তা আর রইল কই—
সেদিন আমাকে আর আমার কিছু বন্ধুবান্ধবকে মেডিকেল থেকে টিচাররা ধরে নিয়ে গেলেন পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটে। গিয়ে শুনি, সেখানকার ডিরেক্টর জেনারেল নাকি আমাদের হাত ধোয়া শেখাবেন। ওনার কোনো কাজটাজ নেই নাকি!
আমার দ্বারা তাঁর কোনো রকম ক্ষতি হওয়া দূরে থাক, তাঁর সঙ্গে আমার কখনো দেখাই হয়নি। বুঝতে পারছিলাম না উনি কেনইবা আমাদের অপমান করতে যাবেন।
লেকচার শুরু হওয়ার পর জানতে পারলাম উনি নাকি আমাদের হাত ধোয়ার গুরুত্বও শেখাবেন।
আরে বাবা হাত ধোয়ার গুরুত্ব কে না বুঝে—কথাটা আমি বলতে পারতাম, যদি না আমি জানতাম, এই বোঝা আর না বোঝার সংখ্যায় পার্থক্যটা ঠিক কত।

এতটাই যে ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যুর ৫০ শতাংশ অপরিষ্কার হাত থেকে হয়ে থাকে। আঁতকে ওঠার মতো না?
পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া, অপরিষ্কার হাত থেকে হয়ে থাকে এই নিউমোনিয়ার ৩০ শতাংশ।
উন্নয়নশীল বিশ্বে অপরিষ্কার হাতের জীবাণু থেকে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার শিশুর মৃত্যু হচ্ছে।
এসব পরিসংখ্যানের একটা বড় অংশ জুড়ে আছি আমরাও।
আমাদের দেশেই কত মানুষ অপরিষ্কার হাত থেকে ছড়ানো জীবাণুর কাছে প্রতিনিয়ত হার মানছি তার ইয়ত্তা নেই।
যে ব্যক্তি ভালোবেসে নিজ হাতে পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করছেন, নিজের অজান্তেই অপরিষ্কার হাতে তৈরি এসব খাবার পরিবারের জন্য বিপদ হয়ে আসছে।

ঠিকভাবে হাত না ধোয়ার বড় কারণটা কিন্তু আলসেমি। তা থেকেই কত ভয়াবহ জীবানু ছড়াতে পারে ভেবে দেখেছ? তুমি কি জানো, বাংলাদেশে শহুরে নারীদের ৪১ শতাংশ টয়লেটের পর কিংবা খাবার গ্রহণ বা তৈরির আগে সাবান ব্যবহার করেন না। গ্রামে এই সংখ্যা ৮৫ শতাংশের বেশি। ভয়ংকর ব্যপার!
একজনের অসচেতনতা শুধু তারই ক্ষতি করছে না, করছে তার আশপাশের মানুষেরও। তাই পরিষ্কারভাবে হাত ধোয়াকে শুধু একটা ভালো অভ্যাসই না; বরং আমাদের কর্তব্যে পরিণত করতে হবে।
পরিষ্কারভাবে হাত ধোয়ার মাধ্যমে প্রতিবছর মিলিয়নের বেশি সংখ্যক মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আজকের পর থেকে এই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কোনো না কোনোভাবে তুমিও কাজ করে যাবে, এটাই হোক তোমার আজকের অঙ্গীকার।