বর্তমানে আমরা বৈদ্যুতিক বাতির সঙ্গে এতটাই অভ্যস্ত যে একমুহূর্ত বাতি না থাকলে মুশকিলে পড়তে হয়। বলতে গেলে বাতির কারণেই রাত আর দিনের মধ্যে পার্থক্য অনেকটাই ঘুচে গেছে। অথচ বৈদ্যুতিক বাতির সঙ্গে মানুষের প্রথম পরিচয় ঘটে এই সেদিন, মানে উনিশ শতকে। তাহলে তার আগের যুগের মানুষ কীভাবে টিকে ছিল, সেটি ভেবে অনেকের চোখ কপালে উঠতে পারে। হ্যাঁ, সে যুগে আলো জ্বালানো বেশ কষ্টের ছিল। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে মাত্র ২০০ বছর আগে, মানে ১৮১২ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার হামফ্রে ডেভি বৈদ্যুতিক বাতি নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা করেছিলেন। তবে আধুনিক বাতির জন্ম আরও অনেক পরে। ১৮৭৮ সালে আরেক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার জোসেফ উইলসন সোয়ান আধুনিক বৈদ্যুতিক বাতি উদ্ভাবন করেন। তার পরের বছরেই মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন স্বাধীনভাবে প্রায় একই যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। দুজনের সম্মানে প্রথম দিকে দুজনের নাম জুড়ে এ বাতিকে ডাকা হতো এডি-সোয়ান ল্যাম্প। অবশ্য শুরুতে এ বাতি ছিল সাধারণের নাগালের বাইরে। পরে এডিসনের প্রচেষ্টাতেই বৈদ্যুতিক বাতি সাধারণের হাতের নাগালে আসে।
এ বাতি ইনক্যানডেসেন্ট বাল্ব নামে পরিচিত। এ বাতিতে পাতলা তারের একটি কয়েল (ফিলামেন্ট) থাকে। এর ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ যাওয়ার সময় বাধা পায়। এতে ফিলামেন্ট উত্তপ্ত হয়ে আলো তৈরি করে। তবে এ প্রক্রিয়ায় বেশির ভাগ বিদ্যুৎ তাপে এবং সামান্য অংশ আলোয় পরিণত হয়। অত্যধিক তাপে বাতি যাতে পুড়ে না যায়, সে জন্য বাল্বের ভেতর নাইট্রোজেন ও আর্গন গ্যাসের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ফিলামেন্টে প্রচণ্ড তাপসহনীয় টাংস্টেন ধাতু ব্যবহার করা হয়। ইনক্যানডেসেন্ট বাতিতে আলোর চেয়ে তাপই বেশি পাওয়া যায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, বিদ্যুৎপ্রবাহের সময় ইনক্যানডেসেন্ট বাতির ফিলামেন্টে তিন হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা তৈরি হয়। এ কারণে বিদ্যুতের দারুণ অপচয় হয়। এ জন্য ফ্লোরেসেন্ট টিউব লাইট ও এনার্জি সেভিং বাল্ব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ফ্লোরেসেন্ট বাতি ভিন্নভাবে কাজ করে। দীর্ঘ টিউবের ভেতরের অংশ ফ্লোরেসেন্ট বস্তুর (ফসফরাস) প্রলেপ দেওয়া থাকে। এ ছাড়া টিউবের দুই প্রান্তে ফিলামেন্ট এবং ভেতর নিষ্ক্রিয় গ্যাস (আর্গন, নিয়ন) ও সামান্য পারদের বাষ্প ভরা থাকে। টিউব লাইটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে ফিলামেন্ট ইলেকট্রন প্রবাহিত করে আর্গন গ্যাসকে আয়নিত করে। এতে গ্যাসটি প্লাজমায় রূপান্তরিত হয়ে তার মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। আবার এ প্লাজমা পারদকণাকে উত্তেজিত করায় অতিবেগুনি রশ্মি নির্গত হয়। এই অতিবেগুনি রশ্মি ফ্লোরেসেন্ট আস্তরণকে উত্তেজিত করে দৃশ্যমান আলো তৈরি করে। যেহেতু এ ক্ষেত্রে আলো উৎপাদনের জন্য উত্তপ্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই, তাই টিউব লাইটে প্রবাহিত সিংহভাগ বিদ্যুৎ আলোতে পরিণত হয়। সে কারণে ১০০ ওয়াট ইনক্যানডেসেন্ট বাল্বের তুলনায় ৪০ ওয়াটের ফ্লোরেসেন্ট টিউব বেশি আলো দেয়। তাতে বিদ্যুতের সাশ্রয় হয়।