আইফেল টাওয়ার
ফরাসি বিপ্লবের শতবর্ষ উদ্যাপনকে সামনে রেখে নির্মিত হয় প্যারিসের আইফেল টাওয়ার। গুস্তাভ আইফেলের টাওয়ারটি নির্মাণে সময় লেগেছিল দুই বছর দুই মাস পাঁচ দিন। ১৯৮৯ সালে টাওয়ারটির কাজ শেষ হলে অনেক ফরাসি নাক সিঁটকায়। কিন্তু ধাতবখণ্ড দিয়ে তৈরি এই টাওয়ারটি প্রযুক্তি আর স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন হয়ে দাঁড়ায় পৃথিবীর বুকে। আর এখন তো এটি ফ্রান্সের জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক। টাওয়ারটি তৈরিতে ১৮ হাজার ধাতবখণ্ড জোড়া দিতে প্রয়োজন পড়েছিল আড়াই লাখ নাট-বোল্ট। সব মিলিয়ে স্থাপনাটির মোট ওজন দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১০০ টনে। প্রতি সাত বছরে একবার করে রং করা হয়। অবাক লাগলেও সত্যি ৬০ টন রং লাগে টাওয়ারটি রাঙাতে। ৩২৪ মিটার উঁচু টাওয়ারটিতে মোট তিনটি তলা রয়েছে। পাঁচটি লিফটের সাহায্যে দর্শনার্থীরা ওঠা-নামা করে। আর পূর্ব দিকে সিঁড়ি ভাঙলে পাড়ি দিতে হবে ১ হাজার ৬৬৫টি ধাপ। প্রতিবছর গড়ে ৭০ লাখ পর্যটক এ স্থাপনাটি দেখতে যায়।
স্ট্যাচু অব লিবার্টি
মার্কিন মুলুকের নিউইয়র্ক শহর ছুঁয়ে বয়ে গেছে হাডসন নদী। নদীটির যেখানে জাহাজ নোঙর করা হয়, সেখানেই বিশ্বের অন্যতম বিস্ময়কর স্থাপত্য হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে স্ট্যাচু অব লিবার্টি। যেন নিউইয়র্ক শহরে পা ফেলা মানুষটিকে স্বাগত জানাতে মশাল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন এক নারী! অগ্নিশিখাটি মূলত শোষণের শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তির প্রতীক। অন্য হাতে আছে একটি বই। যার মলাটে লেখা আছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস ৪ জুলাই, ১৭৭৬। পায়ের কাছে পড়ে থাকা শিকল পরাভূত স্বৈরশাসনের প্রতীক। এই ভাস্কর্যটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফরাসি জনগণের বন্ধুত্বের স্মারক। দেশটির স্বাধীনতার শতবর্ষে তথা ১৮৮৬ সালে ফ্রান্সের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় এই উপহার। তখন থেকেই এটি সবার জন্য উন্মুক্ত।
চীনের প্রাচীর
খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দী, মানে আজ থেকে দুই হাজার আট শ বছর আগের কথা। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে নিজ ভূখণ্ডকে রক্ষা করার কৌশল নিয়ে ভাবছিলেন চীনের সম্রাট ছিন শি হুয়াং। মাথায় এল প্রাচীরের কথা। আর শুরু হলো নির্মাণযজ্ঞ। সেখান থেকেই পৃথিবীজোড়া খ্যাতি পেল চীনের মহাপ্রাচীর। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম এই দেশের উত্তর সীমান্তজুড়ে রয়েছে মহাপ্রাচীর। তবে একজন সম্রাটই যে এটা তৈরি করেছেন তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজা এই প্রাচীর তৈরি করেন। এটি কিন্তু ছোটখাটো দেয়াল নয়, ভীষণ উঁচু আর চওড়া। পাঁচ থেকে আট মিটার উঁচু প্রাচীরটি কোথাও পাহাড়, কোথাও সমতল, কোথাও গেছে মরুভূমির ওপর দিয়ে।
আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট
মেসিডোনিয়ানদের কাছে ৮ সেপ্টেম্বর বিজয় আর গৌরবের দিন। এদিনই যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। ২০১১ সালে দুই দশক পূর্তিতে উন্মোচিত হয় মেসিডোনিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের ভাস্কর্য। কেননা, সম্রাট আলেকজান্ডারই তাদের জাতীয় ঐতিহ্যের স্মারক। ভাস্কর্যটিতে দেখানো হয় আলেকজান্ডার খোলা তরবারি হাতে, তাঁর প্রিয় ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে ছুটছেন। এটিই মূলত স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রেরণা ও সাহসের প্রতীক। আর সম্রাটের সহচর বুকাফেলাসও ছুটছেন ক্ষিপ্রগতিতে। ঘোড়ার দুরন্তপনা ভাব আর সব বাধা পেরিয়ে সামনে এগোনোর বিষয়টি তুলে ধরা হয় সামনের পা দুটো উঁচিয়ে রেখে। নিজ মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য একজন যোদ্ধার সংকল্প এবং দৃঢ়তার প্রতিচ্ছবি যেন মেসিডোনিয়া স্কয়ারের ভাস্কর্যটি। আলেকজান্ডার আর বুকাফেলাসকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে স্থাপন করা হয়েছে ভাস্কর্য। সব ক্ষেত্রেই এই যুগলের একাগ্রতা আর দুরন্ত গতিকেই তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়, প্রাচীন যুগের বড় বড় যুদ্ধে যোদ্ধাদের সঙ্গে ঘোড়ার যে দক্ষতা আর ক্ষিপ্রতা ছিল, তার অন্যতম নিদর্শন এই বুকাফেলাস।
পিসার হেলানো টাওয়ার
ইতালির প্রাচীন নগরী পিসা। ১১৭৩ সালে রোমান ক্যাথলিকদের ঘণ্টা স্থাপনের জন্য একটি টাওয়ার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। স্থাপত্যশৈলীর গোলাকার এই টাওয়ারের তৃতীয় তলার কাজ শেষ হতে সময় লাগে বছর পাঁচেক। আর তখনই ঘটে অদ্ভুত ঘটনা। হেলতে শুরু করে টাওয়ারটি। জানা গেল, স্থাপত্যশৈলীতেই ছিল ভুল। নরম মাটিতে তিন মিটার গভীরতা টাওয়ার নির্মাণের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু স্থপতিরাও দমার পাত্র নন। হেলে যাওয়ার মধ্যেই গড়তে থাকেন একের পর এক তলা। আর টাওয়ারও ক্রমেই হেলতে থাকে। আরও মজার কথা হলো, ১৮০ ফুট উচ্চতার এই টাওয়ারের নির্মাণকাজ চলে প্রায় ২০০ বছর ধরে। কারণ মাঝখানে নানা নাটকীয়তা, উত্কণ্ঠা আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। যা-ই হোক, নির্মাণকাজ শেষ হলেও টাওয়ার হেলে যাওয়া রোধ করতে পারেননি প্রকৌশলীরা। শত চেষ্টার পরও প্রতিবছর হেলতে থাকে এই স্থাপনাটি। অবশেষে ১৯৯৮ সালে এসে একটি ফলপ্রসূ উপায় পাওয়া গেল। বিশেষ কাঠামোর মধ্য দিয়ে এই স্থাপনাকে অনেকটা ধরে বেঁধে, সরিয়ে ফেলা হয় নিচের আলগা মাটি। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ওজনদার বস্তু হেলে পড়ার উল্টোদিকে চাপিয়ে দেন স্থপতিরা। চারপাশে বেঁধে দেওয়া হয় বিশেষ মাচা। ২০১১ সালেই সব মাচা আবার খুলেও ফেলা হয়। এতে রক্ষা পায় টাওয়ারটি। এখন হেলে পড়া বন্ধ হয়েছে। তবে কয়েক শ বছর ধরে হেলে পড়তে পড়তে এখনো প্রায় স্বাভাবিকের চেয়ে ১৩ ফুট হেলে আছে। আর এটাই নাকি হেলানো টাওয়ারের স্বাভাবিক অবস্থা!