সারা বছর লাখ লাখ পর্যটক যায় থাইল্যান্ডে। বেশির ভাগেরই গন্তব্য ব্যাংকক হলেও চিয়াং মাই নামক শহরেও কম পর্যটক যায় না। তবে চিয়াং মাইয়ের টাইগার কিংডমে মানুষের তেমন ঢল নেই। সেখানে গিয়েই বাবা-মা আমাকে বাঘের মুখে ঠেলে দিল।
যা বলছি, সত্যি বলছি। আমার জানামতে, এর আগে কোনো মা-বাবা তাদের কোনো শিশুকে বাঘের মুখে ঠেলে দেয়নি। তবে তাতে আমার বাবা-মায়ের তেমন লাভ হলো না। বাঘের পেটে যাওয়ার বদলে আমি বাঘ মামার লেজ দিয়ে আরামসে কান চুলকে এসেছি।
টাইগার কিংডমে ঢোকার পর বাবা আমাকে বলল, ‘যা, তুই একা একটা টিকিট কেটে বাঘের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আয়। এই নে, এই যে তোর দরকারি টাকা।’ বুম! খুশির চোটে আমাকে আর পায় কে! মাত্র ১২ বছর বয়সে বাঘের লেজ দিয়ে একা একা কান চুলকাব। কী আনন্দ! আর ভাবতে পারো, আমার বাবা-মা কত আদর করেন আমাকে! নিজের ছেলেকে বাঘের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন হাসিমুখে!
টিকিট কেটে আমি একা একা খাঁচার দিকে গেলাম। আমার আশপাশে যে অল্প কজন মানুষ ছিল, তারা সবাই বয়সে বড়। বাঘের খাঁচায় ঢুকে দেখি, আমার সামনে একটা ইন্দো-চায়নিজ বাঘ দাঁড়িয়ে আছে। হাত বাড়িয়ে তাকে আদর করলাম। বাঘের থাই প্রশিক্ষক আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কি বাংলাদেশি, না পাকিস্তানি?’ আমি বললাম, ‘বাংলাদেশি।’ চোখ উজ্জ্বল করে ট্রেইনারটি তখন বলল, ‘তাহলে আসো, দেখো রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে আমাদের’। গর্বে বুকটা ভরে উঠল আমার। আমার দেশের বাঘকে কী প্রশংসাই না করছে। ঠিক সেই সময় একটা হালকা বাতাস আমার চুলে চুমু খেয়ে গেল। দেখলাম, মস্ত বড় এক বাঘ। রয়েল বেঙ্গল টাইগার কিনা জানি না।
তার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি তোলার পাশাপাশি আরও নানা প্রজাতির বাঘের সঙ্গে ছবি তুললাম। তাদের লেজ দিয়ে নাকের নিচে মোচ বানালাম এবং বালিশ বানিয়ে শুয়ে পড়লাম।
বেরিয়ে এসে বাবা-মাকে বললাম, এর পর থেকে সব সময় আমাকে বাঘের মুখে ঠেল দেবে। ওরা হাসতে লাগল।
এখন আমি ঢাকায় এবং এখনো আমার মনে আছে যে আর একটু হলেই—
হতাম আমি পাস্তা
বাঘের সুস্বাদু নাস্তা
থাকত না বাঁচার রাস্তা।