বিখ্যাত ব্যক্তিদের মজার ঘটনা

বার্ট্রান্ড রাসেল

দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল একবার গুরুগম্ভীর বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। বক্তৃতার বিষয় ‘পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে’। এরই মধ্যে এক বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে তাঁর কথার প্রতিবাদ করে বললেন, ‘ওহে রাসেল, তুমি তরুণ ও বুদ্ধিমান, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু পৃথিবীটা যে চ্যাপ্টা আর সেটাকে একটা কচ্ছপ পিঠে করে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে, সেটা আমরা জানি না ভেবেছ?’ বৃদ্ধের কথা শুনে রাসেল যারপরনাই অবাক হয়ে গেলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তাহলে আপনি বলুন তো, ওই কচ্ছপটা কিসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে?’ বৃদ্ধ কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ বাপু! আমি তোমাকে সেটা বলে দেব আর তুমি সেটা শিখে নেবে, তাই না?’

জন লেনন

বিখ্যাত ব্যান্ড বিটলসের সদস্যদের একবার এক সাংবাদিক প্রশ্ন করে বসলেন, ‘আচ্ছা, আপনারা কি মাথায় পরচুলা পরেন?’ তখন ব্যান্ডের পক্ষ থেকে জন লেনন উত্তর দিলেন, ‘না। তবে আমরা যদি নকল চুল পরতাম, তাহলে আমরাই বিশ্বের প্রথম মানুষ দল হতাম, যাদের মাথায় নকল চুল থাকা সত্ত্বেও আসল খুশকি আছে।’

পাবলো পিকাসো

শিল্পী পাবলো পিকাসোর বাসায় একবার এক অতিথি এলেন। অতিথি বাড়ি ঘুরে ঘুরে লক্ষ করলেন, পুরো বাড়িতে বিচিত্র ধরনের জিনিসপত্র থাকলেও কোথাও পিকাসোর কোনো চিত্রকর্ম নেই। বেশ অবাক হয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ব্যাপার কী বলুন তো? আপনার বাড়িতে আপনারই কোনো চিত্রকর্ম নেই যে?’ রসিক পিকাসো বললেন, ‘আমার এত টাকা কি আছে যে বাসায় পিকাসোর ছবি রাখব? তাঁর একেকটা ছবির যা দাম!’

ভিক্টর হুগো

১৮৬২ সালের ঘটনা। ভিক্টর হুগোর বিখ্যাত বই লা মিজারেবল বের হওয়ার পরপরই বেশ হইচই ফেলে দেয়। পত্রিকায় বইয়ের পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য ছাপা হতে থাকে। প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনাও কুড়াতে হয় বেশ। এসবের মধ্যে বইয়ের বিক্রি কেমন হচ্ছে, তা আর বুঝতে উঠতে পারলেন না তিনি। সিদ্ধান্ত নিলেন প্রকাশক বরাবর চিঠি লিখবেন। পরদিন সকালে হুগো অতি সংক্ষেপে কেবল ‘?’ লিখে পাঠিয়ে দিলেন প্রকাশকের ঠিকানায়। প্রকাশকও কম যান না। বুঝে গেলেন চিঠির মর্মার্থ এবং ফিরতি চিঠিতে ভিক্টোর হুগোকে লিখে পাঠালেন ‘!’।

লিও টলস্টয়

সাহিত্যিক লিও টলস্টয় একবার বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। বলছিলেন সব প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার কথা। এরই মধ্যে একজন প্রশ্ন করে বসলেন, ‘বনের মধ্যে একটা বাঘ আমাকে আক্রমণ করলে আমি কী করব?’ ‘নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এমন ঘটনা জীবনে একবারই ঘটবে।’ টলস্টয় বললেন।

মার্ক টোয়েন

সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন একবার শেভ করতে সেলুনে গেলেন। শেভ করানোর ফাঁকে নাপিতের সঙ্গে আলাপ জুড়ে দিলেন, ‘আপনাদের শহরে এবারই প্রথম বেড়াতে এলাম।’ নাপিত বলল, ‘ভালো সময়ে এসেছেন। আজ রাতে এখানে মার্ক টোয়েন বক্তৃতা দেবেন। সেখানে যাচ্ছেন তো?’ ‘আশা করছি যাব।’ ‘টিকিট কিনেছেন?’ ‘না তো!’ ‘সম্ভবত আর টিকিট পাবেন না। যদিও পান, তাহলে আপনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।’ ‘আমার ভাগ্যটা আসলেই খারাপ। ভদ্রলোক যখনই বক্তৃতা দেন, তখনই আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়!’ টোয়েন বললেন।

মহাত্মা গান্ধী

মহাত্মা গান্ধী একবার ব্রিটিশ রাজার সঙ্গে বসে চা খাচ্ছিলেন। সেখানেও তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ পোশাক, কেবল ধুতি পরে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তাঁকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, ‘রাজার সামনে বসে আপনার একবারও মনে হয়নি যে আপনার পোশাকের ঘাটতি ছিল?’ জবাবে গান্ধী বললেন, ‘কী করব বলুন? আপনাদের রাজা একাই তো আমাদের মতো দুজনকে ঢাকার কাপড় পরে ছিলেন।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শান্তিনিকেতনে রবিঠাকুরের প্রিয় ছাত্র ছিলেন প্রমথনাথ বিশী। একবার প্রমথনাথ কবিগুরুর সঙ্গে আশ্রমের পাশ দিয়ে হাঁটছিলেন। সেখানে একটি গাবগাছ লাগানো ছিল। রবীন্দ্রনাথ হঠাৎ প্রমথনাথকে উদ্দেশ করে বলে উঠলেন, ‘জানিস, একসময়ে এই গাছের চারাটিকে আমি খুব যত্নসহকারে লাগিয়েছিলাম? আমার ধারণা ছিল, এটা অশোকগাছ; কিন্তু যখন গাছটি বড় হলো, দেখি ওটা অশোক নয়, গাবগাছ।’ এরপর তাঁর দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বললেন, ‘তোকেও অশোকগাছ বলে লাগিয়েছি, বোধকরি তুইও গাবগাছ হবি।’

চার্চিল

এক জনসভায় রাজনীতিবিদ চার্চিলের বক্তৃতা শুনে বিরোধীদলীয় সমর্থক এক নারী বলে উঠলেন, ‘আপনি আমার স্বামী হলে আপনাকে আমি বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতাম।’ চার্চিল তাঁর দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, ‘সেটার বোধ হয় প্রয়োজন পড়ত না। আপনি আমার স্ত্রী হলে আমি নিজেই বিষ খেয়ে মারা যেতাম।’

আলবার্ট আইনস্টাইন

বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন একবার বিজ্ঞানীদের এক সম্মেলনে যোগ দিলেন। সেখানে একজন জ্যোতির্বিদ মন্তব্য করলেন, ‘অসীম এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে একজন জ্যোতির্বিদ একটি গুরুত্বহীন বিন্দুর সমতুল্য।’ আইনস্টাইন তাঁর উত্তরে বললেন, ‘আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটি কিছুটা আলাদা। আমি কোনো মানুষকে গুরুত্বহীন মনে করলে পরে দেখা যায় সে একজন জ্যোতির্বিদ।’

আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল

বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের অনুপস্থিতিতে তাঁর এক কর্মচারী একবার পৃথিবীর প্রথম টেলিফোনে কথা বলার চেষ্টা করল। গ্রাহাম বেল ব্যাপারটি বুঝতে পেরে বেশ রেগে গেলেন এবং তার এক মাসের বেতন কেটে নিলেন। কর্মচারী এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘তুমি তোমার সীমা অতিক্রম করেছ।’ ‘কিসের সীমা?’ ‘কথা বলার সীমা,’ বেল বললেন।

অ্যাডগার অ্যালান পো

লেখক অ্যাডগার অ্যালান পো তাঁর জীবনের বেশ কিছু সময় সামরিক বাহিনীতে কাটিয়েছেন। একবার পাবলিক প্যারেডে নির্দেশ এল, সাদা বেল্ট আর হাতমোজা পরে আসতে হবে। পরদিন পো আক্ষরিকভাবে উলঙ্গ হয়ে প্যারেডে যান। পরনে ছিল কেবল সাদা বেল্ট আর হাতমোজা।